মেধাশক্তি বাড়ানোর কৌশল । মেধা বাড়ানোর ১০টি উপায় জেনে নিন ।
মানব দেহের সবচেয়ে অন্যতম অঙ্গ হলো মস্তিষ্ক। মস্তিষ্ক ভালো থাকলে আমাদের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভালো থাকে। এই মস্তিষ্ককে ভালো রাখার কিছু কৌশল আছে। মেধাশক্তি বাড়ানোর কৌশল বলতে গেলে প্রথমে আসে ভালো খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, বিশ্রাম,পরিমিত পরিশ্রম ইত্যাদি। বর্তমান যুগে মানুষ কাজের চাপে এবং মানসিক টেনশনে মেধার বারটা বাজায়। কিন্তু মেধার ও কিছু পরিচর্যা প্রয়োজন। তা না হলে ধীরে ধীরে মেধাশক্তি হ্রাস পাবে।
সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকেরই মেধা বা মস্তিষ্ক আছে। কেউ তার মস্তিষ্ককে ভালো কাজে আবার কেউ খারপ কাজে ব্যকহার করে থাকে। আবার কেউ বা তার মস্তিষ্কের সঠিক ব্যবহার করে চির স্মরণীয় হয়ে থাকে। আসুন আজ আমরা মেধাশক্তি বাড়ানোর কৌশল বা উপায় সম্পর্কে আলোচনা করি।
মেধাশক্তি বাড়ানোর কৌশল:
মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অনেক বেশি। মানুষ তার ব্রেনের ক্ষমতার বা পরিধির খুব কম অংশই ব্যবহার করে থাকে। মস্তিষ্ককে যত বেশি ব্যবহার করা হয় তত এ ক্ষমতা বাড়ে। গবেষণায় দেখা যায়,মানুষের মস্তিষ্কের এক বিশাল অংশ অব্যবহৃত থেকে যায়। খুব সামান্য অংশ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাহলে ভাবেন তো পূরোটা ব্যবহৃত হলে কি হত? তাই এই অমূল্য সম্পদকে পরিচর্যার মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা আমাদের সকলের কর্তব্য।
আসুন জেনে নিই মেধাশক্তি বাড়ানোর কৌশল বা উপায় সম্পর্কে কিছু তথ্য। যা আপনার মেধাকে বাড়িয়ে দিবে এবং মস্তিষ্কের অব্যবহৃত অংশকে সচল করতে সাহায্য করবে।
নিজে শিখে অন্যকে শেখান:
মেধা চর্চার খুবভালো একটি উপায় হলো নিজে একটি কাজ শিখে তা অপরকে শেখানো। এতে করে একই বিষয় বার বার বিভিন্নভাবে ব্রেনে ঢোকে । যা স্মৃতিতে স্থায়ীভাবে গেঁথে যায়। মস্তিষ্কের শক্তিকে বাড়াতে নিজে শিখে অন্যকে শেখান।
নিয়মিত ব্যায়াম:
শরীরচর্চ বা ব্যায়াম মানুষের মস্কিষ্কের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। ব্যায়াম মানুষের মস্তিষ্কের দুটি কোষের নিউরনের মধ্যে স্নায়ুবিক বৈদ্যুতিক স্পন্দন আদান প্রদান ঘটায়। যার জন্য মস্তিষ্কে অতিরিক্ত কোষ গঠিত হয় এবং যোগাযোগ স্থাপিত হয়। শরীরচর্চার জন্য খোলা কোনো জায়গা নির্বাচন করা ভালো।
এতে আপনার শরীর বেশি পরিমানে ভিটামিন ডি শোষণ করতে পারবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের অনাকাক্ষিত ওজন কমে যায় । রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। ব্যায়ামের মাধ্যমে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ হয়। তাই মেধাশক্তি বাড়াতে নিয়মিত ব্যাযাম করুন।
পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম:
ঘুম মানুষের মস্তিষ্ককে সচল ও অধিক কার্যকরী করে তোলে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের দিনে ৮ ঘন্টা ঘুমানো দরকার। ভালো ঘুম মস্তিষ্ককে ঠান্ডা রাখে ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম আপনার মস্তিষ্ককে সুস্থ্য রাখতে ও মেধাশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ভালো ঘুম না হলে শুধু শরীর খারাপ হয় এমনটা নয় মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ গুলোও সঠিকভাবে পরিচালিত হয় না। তাই সকলের পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানো উচিত।
সঠিক খাবার গ্রহণ:
আমাদের মস্তিষ্কের ৭৫ ভাগই পানি। পানির অভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়। তাই প্রচুর পরিমানে পানি খেতে হবে। কলা মস্তিষ্কের খাবারের মধ্যে অন্যতম। কলাতে আছে ম্যাগনেসিয়াম ,ভিটামিন ডি যা ব্রেনকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। কলিজায় থাকে আয়রন ও ভিটামিন বি যা মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারি। ডিম অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পূণ্য খাবার।
ডিম স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ও মনোযােগ বাড়াতে সাহায্য করে। মস্তিষ্ক সুস্থ্য রাখতে ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে মিষ্টিকুমড়ার বীজ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ধরনের বাদামে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন ই থাকে যা স্মৃতি শক্তি বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতাকে বিাড়িয়ে দেয়। সামুদ্রিক মাছ মেধাশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। মেধা শক্তি বাড়াতে ডার্ক চকলেট বা কোকো সমৃদ্ধ চকলেট খেতে পারেন।
সবার সাথে মিশুন:
মানুষের সাথে কথা বলা ও যোগাযোগের মাধ্যমে মস্তিষ্ক সচল হয়। প্রতিদিন কিছু সময় রাখুন যে সময়ে মানুষের সাথে মেলামেমা করতে পারেন। মানুষের সাথে যোগাযোগ মেধাশক্তিকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে। সামাজিকতার মাধ্যমে মন প্রফুল্ল হয় এবং মানসিক চাপ কমে যায়। গবেষনায় দেখা গেছে মেধাশক্তি সম্পন্ন লোকেরা খুব সামাজিক হয়।
গান শুনুন ও বই পড়ুন:
গান শুনা ব্রেনের জন্য খুবই ভালো। প্রতিদিন কিছুসময় গান শুনুন এতে মেধা বাড়বে। বই পড়ার অভ্যাস করুন। কেননা প্রতিদিন ধৈর্য সহকারে বই পড়লে অনেক জ্ঞান বাড়ে। ব্রেনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করুন।
বিভিন্নভাবে চেষ্টা করুন:
সব মানুষের কাজ করার উপায় একরকম নয়। ভালোভাবে ভেবে দেখলে এক এক জন লোক এক এক ভাবে কাজ করতে ভালোবাসে। কেউ বসে কাজ করতে ভালোবাসে আবার কেউ দাঁড়িয়ে কাজ করতে ভালোবাসে। কারো শুয়ে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয় আবার কারো হেঁটে হেটেঁ পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয় । কেউ ভোরে উঠে পড়াশোনা করতে ভালোবাসে আবার কারো গভীর রাতে পড়াশোনা করতে ভালোলাগে। তাই আমাদের সকলের উচিত সঠিক সময় ও পারিপাশ্বিক পরিবেশ ঠিক করে তার যথাযথ ব্যবহার করা।
ধুমপান পরিহার করা:
আমরা সকলে জানি ধুমপান বা মাদকদ্রব্য শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর। তারপরও মানুষ মাদক সেবন করে। শুধু মানসিক বা শারীরিকভাবে না ধুমপান মস্তিষ্কের বড় ধরনের ক্ষতি করে। সিগিারেটে থাকা নিকোটিন ওক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাবে মস্তিষ্কের বাহিরের দিকের স্তর ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যেতে থাকে। কর্টেক্স বা গ্রে সেল ব্রেনের সবচেয়ে উন্নত অংশ যা সিগেরেটের ধোঁয়ায় ক্ষতিগস্থ হয়।
ব্রেনের এই অংশ বুদ্ধি,ভাবনা করার ক্ষমতা, কথাবলা, বোঝা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার কেন্দ্র। যা ধুমপান করলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই সুস্থ মস্তিষ্ক ও মেধাশক্তি ধরে রাখতে আজই ধুমপান ও সকল প্রকার তামাক দ্রব্য পরিহার করুন।
নতুন কিছু করুন:
মেধাশক্তি বাড়ানোর কৌশল হিসেবে আর একটি কাজ করা গুরুত্বপূণ্য। তা হলো প্রতিদিনের কাজের বাহিরে নতুন কিছু করার চ্যালেঞ্জ নিন। যেমন আর্ট করা কিংবা নতুন ভাষা শিখা যা আপনার ব্রেনের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। পরিবার বা বন্ধুদের সাথে প্রতিযোগিতা করে কোন খেলা খেলেন যার ফলে আপনার সামাজিক মিথস্ক্রিয়া বাড়বে। নতুন নতুন কাজের মাধ্যমে নতুন অভিজ্ঞতা তৈরী হয় যা মেধাশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
লেখকের মন্তব্য:
উপরের পোস্টটি পড়ে আমরা মেধাশক্তি বাড়ানোর কৌশল সম্পর্কে কিছু ধারনা পেয়েছি। বর্তমান সময়ে মেধার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা আজকাল মেধা দিয়ে মানুষ অনেক কিছু জয় করেছে। মানষের মেধার যথাযথ ব্যবহারের ফলে আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এতো উন্নত। মেধাশক্তি বাড়াতে খাবার , নিয়মিত ব্যায়াম, বই পড়া, গানশোনা, ধুমপান পরিহার ইত্যাদির দিকে নজর দিতে হবে। সকলের উচিত নিজের মেধার পরিচর্যা করা।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url