বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজ সমূহ । ক্যাডেট কলেজে মাসিক খরচ কত ?
ক্যাডেট কলেজ হল সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত এক ধরনের বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। সপ্তম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ আছে এই ক্যাডেট কলেজে। বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজ সমূহ উন্নত শিক্ষার মান, উন্নত মানের আবাসিক পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের সুব্যবস্থা করে থাকে । সবগুলো দিক বিবেচনা করে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানকে এই ক্যাডেট কলেজে ভর্তির জন্য আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে।
এই আর্টিকালের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজ সমূহ এবং ক্যাডেট কলেজে মাসিক খরচ কত হয় তা বিস্তারিত আলোচনা করব।
ভূমিকা
বাংলাদেশে মোট ১২ টি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে। তাদের মধ্যে তিনটি মেয়েদের ক্যাডেট কলেজ এবং নয়টি ছেলেদের। ১৯৫৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম জেলায় ফৌজদার হাটে। ইংল্যান্ডের পাবলিক স্কুলের কার্যক্রমের সাথে বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজের শিক্ষাব্যবস্থার কার্যক্রমের মিল আছে। তৎকালীন সময়ে কর্নেল স্যার উইলিয়াম মরিচ ইংল্যান্ডে পাবলিক স্কুলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তানে আসেন এবং ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তারপর দীর্ঘ সাত বছর তিনি দায়ীত্বরত ছিলেন। এভাবে প্রথম ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ চালু হয়েছিল।
ক্যাডেট কলেজে ভর্তির জন্য যে তথ্য গুলো জানা দরকার:
দেশের অন্যান্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর থাকলেও ক্যাডেট কলেজ গুলোর দায়িত্ব সরাসরি সেনাবাহিনী সদর দপ্তরের উপর বর্তায়। প্রতিবছর নভেম্বরে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণের কাজ শুরু হয় এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে কার্যক্রম চলে। সাধারণত জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে ১২ টি ক্যাডেট কলেজের জন্য প্রতিবছর ৬০০ ক্যাডেট ভর্তি করা হয়।এদের মধ্যে ৪৫০ জন ছেলে এবং ১৫০ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। পরীক্ষা দেয় হাজার হাজার পরীক্ষার্থী। লিখীত পরীক্ষায় কঠিন প্রতিযোগিতার পর ৬০০সিটের জন্য দ্বিগুণ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয় মৌখিক পরীক্ষার জন্য। তারপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়ে থাকে।। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির চেয়ে ক্যাডেট কলেজগুলোতে ভর্তির নিয়ম নীতি আলাদা।
বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজ সমূহ সাধারণত সপ্তম শ্রেণী থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেন। পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই ষষ্ঠ শ্রেণি উত্তীর্ণ হতে হবে। পরীক্ষায় সাধারণত তিন ধাপে হয়ে থাকে। প্রথম ধাপে লিখিত তারপরে মৌখিক তারপরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এসব পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে সফল হওয়ার পরেই একজন পরীক্ষার্থী ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারবেন।
বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজ সমূহ:
বাংলাদেশের মোট ১২ টি ক্যাডেট কলেজ বিদ্যমান। তাদের মধ্যে নয়টি ছেলেদের এবং তিনটি মেয়েদের ক্যাডেট কলেজ। প্রত্যেকটি ক্যাডেট কলেজে রয়েছে উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত আবাসিক ব্যবস্থা। রয়েছে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং ক্যাডেটদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা। প্রতিবছর সরকার অনেক টাকা খরচ করে এই ক্যাডেটদের পেছনে। বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজ সমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল
- ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ:
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৫৮ সালের ২৮ শে এপ্রিল। চট্টগ্রাম জেলায় সীতাকুন্ড উপজেলায় ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ অবস্থিত। কবুতর হাট ক্যাডেট কলেজের আয়তন ১৮৫ একর। প্রথম অধ্যক্ষের নাম স্যার উইলিয়াম মরিচ ব্রাউন।
- ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ:
ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। ঝিনাইদহ শহর থেকে কিলোমিটার উত্তরে কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে ক্যাডেট কলেজ অবস্থিত।ঝিনাইদা ক্যাডেট কলেজের আয়তন ১০৩ একর। ঝিনাইদা ক্যাডেট কলেজে প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন এন ডি হাসান।
- মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ:
১৯৬৫ সালের জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলায় মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ অবস্থিত। ঢাকা টাঙ্গাইল ট্যাংক রোডের পাশে এই ক্যাডেট কলেজে অবস্থিত। ৯৫ একর জায়গার উপরে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ অবস্থিত। এই ক্যাডেট কলেজে প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন মাইকেল উইলিয়াম পিট।
- রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ:
১৯৬৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজশাহী সারদার চারঘাট উপজেলায় এই ক্যাডেট কলেজ অবস্থিত। ১১০ একর জায়গার উপরে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ অবস্থিত। এই ক্যাডেট কলেজে সর্বপ্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে যিনি দায়িত্বরত ছিলেন তার নাম হল ক্যাপ্টেন মোঃ হাফিজুর রহমান আফরাদ।
- সিলেট ক্যাডেট কলেজ:
১৯৭৮ সালে সিলেট ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় ৫২ এফর জায়গার উপর সিলেট ক্যাডেট কলেজ অবস্থিত। এই ক্যাডেট কলেজে প্রথম যিনি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন তার নাম হলো লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ জিয়াউদ্দিন।
- রংপুর ক্যাডেট কলেজ:
১৯৭৯ সালের জুলাই মাসের ১ তারিখে রংপুর ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত। এই ক্যাডেট কলেজের অবস্থান রংপুর, আশরতপুর, রংপুর, সদর উপজেলা। ৩৫ একর জায়গার উপরে রংপুর ক্যাডেট কলেজ অবস্থিত। এই কলেজের প্রথম অধ্যক্ষের নাম কমান্ডার হাবিবুর রহমান।
- বরিশাল ক্যাডেট কলেজ:
বরিশাল ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। ৫১ একর জমির উপরে ক্যাডেট কলেজ অবস্থিত। সর্বপ্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন।
- পাবনা ক্যাডেট কলেজ:
১৯৮১ সালে ৭ আগস্ট পাবনা ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। পাবনা সদর উপজেলা জালালপুরে পাবনা ক্যাডেট কলেজ অবস্থিত। ৪৭ একর জমির উপরে পাবনা ক্যাডেট কলেজ অবস্থিত। প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন সৈয়দ সলিমুল্লাহ।
- ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ:
১৯৮২ সালে ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৩ একর জায়গার উপরে ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ অবস্থিত। এ কলেজের প্রথম অধ্যক্ষের নাম করিম উদ্দিন আহমেদ।
- কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ:
১৯৮৩ সালে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ৫২ একর জমির উপরে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ অবস্থিত। এই কলেজের প্রথম অধ্যক্ষের নাম লেফটেন্যান্ট কর্নেল নুরুল আনোয়ার।
- ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ:
২০০৬ সালে ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ৫০ একর জায়গার উপরে ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ অবস্থিত। প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বগত ছিলেন ফয়জুল হাসান।
- জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ:
২০০৬ সালে জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ৫৭ একর জমির উপরে জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ অবস্থিত। সর্বপ্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন মোহাম্মদ আবু সাঈদ বিশ্বাস।
পরীক্ষার মাধ্যম, পদ্ধতি ও মানবন্টন:
বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজ সমূহ গুলোতে বাংলা ও ইংলিশ দুই মাধ্যমে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কোনো প্রার্থী যদি মনে করে সে উত্তরপত্রে ইংলিশে লিখবে অথবা কোনো প্রার্থী বাংলায় লিখবে তাহলে তা সম্ভব। একজন প্রার্থী যেকোনো একটি মাধ্যম বেছে নিতে পারবে। ভর্তি পরীক্ষায় ৩০০ নাম্বারে ৩ ঘণ্টায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান এই চার বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ জ্ঞানের মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান। ইংরেজি ১০০, গণিত ১০০, বাংলা ৬০, সাধারণ জ্ঞান ৪০ মার্কের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যারা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তাদেরকে মৌখিক পরীক্ষার ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ধারাবাহিকভাবে ডাকা হয়।
ক্যাডেট কলেজে আবেদনের যোগ্যতা:
ক্যাডেট কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া অন্যান্য সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়ার থেকে আলাদা। কেননা শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ, সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। দেশের সেরা সেরা ছাত্র-ছাত্রীদের তিন ধাপে পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে ক্যাডেট কলেজে নেয়া হয়। তাই ক্যাডেট কলেজে ভর্তির বা আবেদন করার জন্য বিশেষ কিছু যোগ্যতা প্রয়োজন।
প্রথমত একজন পরীক্ষার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণের জন্য কঠিন পরিশ্রম করতে হবে।পরীক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট থাকতে হবে। আবেদনকারী কে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। আবেদনকারী কে অবশ্যই ষষ্ঠ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
যে নির্দিষ্ট দিনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে তখন আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ১৩ বছর ৬ মাস এর মধ্যে থাকতে হবে। আবেদনকারীর উচ্চতা ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি এবং শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। উক্ত বিষয়ে লক্ষ্য রেখে ক্যাডেট কলেজ ভর্তির আবেদন ফরম সময়মতো অনলাইনে পূরণ করে জমা দিতে হবে।
ক্যাডেট কলেজে মাসিক খরচ কত:
ক্যাডেট কলেজে সকল শিক্ষার্থীর টিউশন ফি একরকম নয়। বাবা মায়ের আয়ের উপর ভিত্তি করে এক এক জনের টিউশন ফি এক এক রকম হয়ে থাকে।উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আবাসিক এবং স্বাস্থ্যকর খাবার যা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় একটু ব্যায়বহুল। যার জন্য অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ক্যাডেট কলেজগুলোতে খরচ একটু বেশি হয়।
বর্তমানে ক্যাডেট কলেজ গুলোতে টিউশন ফি সর্বনিম্ন ১৫শত টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২২ হাজার টাকা নির্ধারিত রয়েছে। বর্তমানে সর্বনিম্ন ধাপের টিউশন ফি অপরিবর্তিত রেখে অন্যান্য ধাপের টিউশন ফি বাড়ানোর প্রস্তাব হয়েছিল। যদি টিউশন ফি বাড়ানো হয় তাহলে সর্বোচ্চ ধাপের টিউশন ফি হবে ২৮ হাজার ৬০০ শত টাকা।
মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের কথা চিন্তা করে সর্বনিম্ন ১৫ শত টাকা বহাল রেখে সর্বোচ্চ ২৮ হাজার ৬০০ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব সকল ক্যাডেট কলেজ গুলোতে পাঠানো হয়েছে। সুশৃংখল জীবন ও উচ্চশিক্ষার মানের জন্য অভিভাবকরা নিজের সন্তানদের ক্যাডেট কলেজে ভর্তি করার সকল প্রকার চেষ্টা করেন।
ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুবিধা সমূহ:
আমরা অনেকেই জানি সামরিক বাহিনীর দ্বারা পরিচালিত বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজ গুলো। ক্যাডেট কলেজের মূল লক্ষ্য হলো সামরিক বাহিনীতে যোগ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া। ক্যাডেট কলেজের নিয়ম কানুন সুশৃংখল জীবন যাপন একজন ছাত্রকে সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। এই কলেজ গুলোতে এমন কিছু বিশেষ সুযোগ সুবিধা আছে যা অন্য কোন জায়গায় পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। ক্যাডেট কলেজে পড়ার বিশেষ কিছু সুবিধা নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- সুশৃংখল জীবন যাপন:
একটা বাচ্চা যখন নতুন ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয় তখন সে পরিবেশ এবং নিয়ম কানুন সম্পর্কে কিছুই জানেনা। ক্যাডেট কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকারা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, বিতর্ক, আবৃতি এবং সকল প্রকার নিয়ম-কানুন সম্পর্কে এমনভাবে বাচ্চাদেরকে গাইড পড়েন যেন সব বাচ্চার সকল প্রকার নিয়ম কানুন মেনে চলতে বাধ্য থাকে। ক্যাডেট কলেজের ছাত্রদের ফজরের নামাজের জন্য ডাকা হয় এবং এশার নামাজ দিয়ে তাদের দিন শেষ হয়। একটি সুশৃংখল জীবন ও সৎ ব্যাক্তি হিসেবে ক্যাডেটদের গড়ে তোলা হয়।
- বিশাল বড় ক্যাম্পাস:
বাংলাদেশে বারটি ক্যাডেট কলেজে রয়েছে নিজস্ব অনেক বড় বড় ক্যাম্পাস। খেলাধুলা এক্সারসাইজ সবকিছুর জন্য অন্য কোথাও যেতে হয় না। ক্যাডেট কলেজের ক্যাম্পাসের ভিতরে রয়েছে মসজিদ।
- সুন্দর পড়াশোনার পরিবেশ:
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যত বড় বা সুন্দর হোক না কেন সেখানে যদি লেখাপড়ার পরিবেশ না থাকে তাহলে তো আর কোন মূল্য নেই। বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজ গুলো মহরম পরিবেশ ও মানসম্মত শিক্ষক, শিক্ষিকা দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। সর্বদা শিক্ষকের গাইডলাইন লেখাপড়ার পাশাপাশি বিনোদন, খেলাধুলা, শারীরিক ব্যায়াম সবকিছু মিলিয়ে পড়াশোনার পরিবেশ অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানে থেকে ঊর্ধ্ব।
- চিকিৎসা ব্যবস্থা:
ক্যাডেট কলেজের নিজস্ব হাসপাতাল রয়েছে। প্রতিটি স্টুডেন্ট এর জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হয়। কোন ছাত্র-ছাত্রী যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাৎক্ষণিক ডাক্তার এবং চিকিৎসার জন্য জরুরিভাবে যা যা প্রয়োজন সবকিছুই ব্যবস্থা রয়েছে এই ক্যাডেট কলেজে হাসপাতালে।
- ডাইনিং ও ক্যান্টিন:
ক্যাডেট কলেজগুলোতে খাওয়া-দাওয়ার জন্য রয়েছে ডাইনিং। যার যেটা প্রয়োজন সব খাবারই পাওয়া যায় ক্যান্টিনে।
- লাইব্রেরী, ল্যাব ও জাদুঘর:
ক্যাডেট কলেজের লাইব্রেরীতে প্রচুর পরিমাণে বই আছে। শিক্ষার্থীদের পছন্দমত বই নিয়ে করতে পারবেন। এছাড়া কম্পিউটারের সুবিধা ও সাইন্স ল্যাব রয়েছে ক্যাডেট কলেজ গুলোতে। ক্যাডেট কলেজ গুলোতে জাদুঘরের সুবিধাও রয়েছে। জাদুঘরে দেখার মত বিভিন্ন জিনিসপত্র রয়েছে যা দেখে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করে।
- বিনোদন ও খেলাধুলা:
এখানে বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের জিনিসপত্র রয়েছে। টেলিভিশন দেখার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া খেলাধুলার জন্য রয়েছে বিশাল মাঠ। ক্রিকেট, লন টেনিস, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, টেবিল টেনিস, কেরাম, দাবা,লুডু বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার মাধ্যম রয়েছে। ঘরের এবং বাহিরে খেলাধুলা থেকে সংস্কৃতি চর্চা সবকিছুই ব্যবস্থা রয়েছে।
- কো কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস:
প্রত্যেকেরই কিছু নিজস্ব প্রতিভা থাকে। যেমন কোন বাচ্চা গান গাইতে ভালো পারে আবার কেউ কবিতা আবৃত্তি কেউবা আবার বিতর্ক গান বাজনা ইত্যাদি। ক্যাডেট কলেজ গুলোতে আবৃত্তি, বিতর্ক, সংগীত চর্চা, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা, কুরআন তেলাওয়াতের প্রতিযোগিতা বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম শেখানো হয়।
ক্যাডেট কলেজের চান্স পাওয়ার উপায়:
ক্যাডেট কলেজের চান্স পাওয়া অতটা সহজ ব্যাপার নয়। ক্যাডেট কলেজের এডমিশন পরীক্ষা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে ক্যাডেট কলেজে ভর্তির জন্য সকলে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। কেননা গুণগত শিক্ষা, মানসম্মত পরিবেশ ও কঠোর নিয়ম কানুন এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশি আকর্ষিত করে তুলেছে। সাধারণত ক্যাডেট কলেজে ইংলিশ ভার্সনে পড়াশোনা করতে হয়। ক্যাডেট কলেজে চান্স পেতে হলে ছোট থেকে ইংলিশে দক্ষ হতে হবে।
ইংরেজি গ্রামার এবং বাংলা গ্রামারে পারদর্শী হতে হবে। একজন ছাত্র তখনই ক্যাডেট কলেজে চান্স পাবে যখন তার মধ্যে সৃজনশীলতা থাকবে। যেকোনো টপিক এর উপরে ফ্রি হ্যান্ডিং বা নিজের থেকে বানিয়ে লেখার দক্ষতা থাকতে হবে। হাতের লেখা সুন্দর করতে হবে। সাধারণ জ্ঞানে পুরো নাম্বার পাওয়ার জন্য নিয়মিত সাম্প্রতিক বিষয়, পত্রিকা ও ম্যাগাজিন পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
শুধু ষষ্ঠ শ্রেণি নয় বরং সপ্তম, অষ্টম,নবম, দশম সকল শ্রেণীর গণিত বই সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকতে হবে। জ্যামিতি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। গণিতের যে বিষয়গুলো অপরিহার্য যেমন অনুপাত, লাভ ক্ষতি, ঐকিক নিয়ম এবং বীজগণিতে পারদর্শী হতে হবে। ছোট থেকে বাচ্চাদেরকে শারীরিকভাবে ফিট রাখতে হবে। বাচ্চাদের ওজন ও উচ্চতার খেয়াল রাখতে হবে। শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। যেন যেকোনো কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা সে নিজেই করতে পারে।
পরিশেষে:
বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজ সমূহ, ক্যাডেট কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা, ক্যাডেট কলেজে মাসিক খরচ, ক্যাডেট কলেজের সুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে নানা তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম আর্টিকেল এর মাধ্যমে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় ক্যাডেট কলেজ শিক্ষাব্যবস্থা সকলের কাছে খুবই জনপ্রিয়। প্রত্যেক অভিভাবক চান তাদের সন্তান সঠিক ও শৃংখল ভাবে গড়ে উঠুক। আপনারা আর্টিকেলটি পরে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের বন্ধুদের কাছে শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url