ডায়াবেটিস পরিমাপের মেশিনের নাম এবং দাম ২০২৪ ।
সারা বিশ্বে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ডায়াবেটিস একটি মারাত্মক রোগ। সকল রোগের আঁধার হিসেবে এই রোগকে আখ্যায়িত করা হয়। ডায়াবেটিস হচ্ছে শরীরের সেই বিশেষ অবস্থা যখন শরীর নিজে ইনসুলিন তৈরি করতে অক্ষম হয়। এবং ইনসুলিন শরীরে ব্যবহারে অক্ষম হয়। এর ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় যাকে ডায়াবেটিস রোগ বলা হয়। জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান জরিপে দেখা যায় বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ লোক ডায়াবেটিস আক্রান্ত।
বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় একজন লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস রোগ দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। একবারে রোগ হলে আর সারেনা বললেই চলে। কিন্তু এই রোগ নিয়মিত চেকআপ এবং নিয়মিত ডায়েট মেন্টেন করে কন্ট্রোলে রাখতে হয়। তার জন্য প্রয়োজন হয় ডায়াবেটিস পরিমাপ করার যন্ত্র। যেসব পরিবারের ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে তাদের প্রত্যেকের পরিবারে একটি করে ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্রের প্রয়োজন। ডায়াবেটিস পরিমাপের যন্ত্রের নাম গ্লুকোমিটর। আজ এই আরটিকালের মাধ্যমে আমরা ডায়াবেটিস পরিমাপের মেশিনের নাম এবং দাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
ডায়াবেটিস মেশিন
ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্রের নাম গ্লুকোমিটার। ডায়াবেটিস মেশিন হচ্ছে সেই যন্ত্র যার মাধ্যমে রক্তের গ্লকোজের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। এই মেশিনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ভাবে শরীরের ডায়াবেটিসের মাত্রা জানা যায়। ঘরে বসে খুব সহজেই যে কেউ তার শরীরের ডায়াবেটিসের মাত্রা চেক করে নিতে পারবেন। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন দামের ডায়াবেটিস মেশিন পাওয়া যায়। কম খরচে ঝামেলা ছাড়াই ডায়াবেটিস মাপার সহজ পদ্ধতি এই গ্লুকোমিটারের মাধ্যমে লোকজন ডায়াবেটিসের মাত্রা সম্পর্কে জানতে পারে এবং সচেতন হতে পারেন।
ডায়াবেটিস পরিমাপের মেশিনের নাম এবং দাম
আধুনিক যুগে ঘরে বসেই ডায়াবেটিস মেশিনের মাধ্যমে সবাই ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে পারেন। তার জন্য প্রয়োজন ডায়াবেটিস পরিমাপের যন্ত্র। বর্তমানে অসংখ্য কোম্পানি ডায়াবেটিস পরিমাপের যন্ত্র তৈরি করে এবং বিক্রি করে থাকে। গ্লুকোমিটারের বিভিন্ন মডেল এর উপর এর দাম নির্ভর করে। ডায়াবেটিসের যন্ত্রের দাম ১০০০ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের হয়ে থাকে। তাছাড়া যে সকল মেশিন প্রিমিয়াম মডেলের হয় সেগুলোর দাম ৫০০০ থেকে ১০০০০ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। সকলের সুবিধার জন্য নিচে কয়েকটি উন্নত মানের ডায়াবেটিস পরিমাপের মেশিনের নাম এবং দাম এর তালিকা দেওয়া হলঃ
মেশিনের নাম | মেশিনের দাম |
---|---|
Accu-Chek Instant S Blood Glucose Monitor | 2400 Taka |
NTI BGM-208 Blood Glucose Monitoring System | 799 Taka |
Vivachek Ino Blood Glucose Monitor | 1299 Taka |
Tyson BioTB200 Blood Glucose Monitoring Machin | 2200 Taka |
Accu-Chek Active Blood Glucose Monitor | 3200 Taka |
Getwell Fast Blood Sugar Chek | 1699 Taka |
Sinocare Safe -Accu Easy Blood Glucose Meter | 1100 Taka |
Plam chek Blood Glucose Monitoring System | 1030 Taka |
Care Chek Diabetes Glucometer | 1900 Taka |
RBC Gluco Chek Blood Glucose Meter | 1450 Taka |
ডায়াবেটিস পরিমাপ করতে যা যা প্রয়োজন
আমরা ডায়াবেটিস পরিমাপের মেশিনের নাম এবং দাম সম্পর্কে জেনেছি। শুধু মেশিন কিনলে হবে না তার সাথে আরও কিছু জিনিস প্রয়োজন। প্রথমে আমরা উন্নত মানের একটি গ্লুকোমিটার বাজার থেকে কিনে নিতে হবে। সেই সাথে জীবনমুক্ত ল্যানসেট এবং ল্যানসেট বসানোর জন্য প্লাস্টিকের কলম। আর তার সাথে অবশ্যই থাকতে হবে টেস্ট স্ট্রিপ। বিভিন্ন মেশিনের ক্ষেত্রে স্ট্রিপ ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস পরিমাপের মেশিন কেনার সময় এ সকল জিনিসপত্র দেখে শুনে কিনতে হবে। এগুলোর একটিও না থাকলে ডায়াবেটিস পরিমাপ করা যায় না।
ডায়াবেটিস পরিমাপ করার নিয়ম
অত্যন্ত সাবধানতার সাথে ডায়াবেটিকস পরিমাপ করতে হয়। আগে থেকে ভালোভাবে জেনে শুনে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা উচিত। এর জন্য কয়েকটি ধাপ অবলম্বন করতে হয় তা হলঃ
প্রথমতঃ আপনার হাত ভালোভাবে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। এরপর শুকনো কাপড় দিয়ে হাত ভালোভাবে মুছে নিতে হবে যেন আঙুল ভেজা না থাকে।
দ্বিতীয়তঃ গ্লুকোমিটার অর্থাৎ ডায়াবেটিস মাপার মেশিনের নির্দিষ্ট স্থানে স্ট্রিপ প্রবেশ করাতে হবে। অবশ্যই গ্লুকোমিটারের মডেল অনুযায়ী স্ট্রিপ নিতে হবে। স্ট্রিপ কেনার সময় তার মেয়াদ আছে কিনা তা দেখে নেওয়া আবশ্যক।
তৃতীয়তঃ প্লাস্টিকের কলমের ভেতরের ল্যানসেট সংযুক্ত করতে হবে। এরপর ল্যানসেটের ঢাকনা সরিয়ে দিতে হবে। প্রত্যেকবার ডায়াবেটিস পরিমাপ করার সময় নতুন সুই ব্যবহার করতে হবে।
চতুর্থঃ আপনার হাতের মধ্যমা, তর্জনী অথবা অনামিকা যেকোনো একটি আঙ্গুল ভালোভাবে স্পিরিট দিয়ে মুছে নিন। স্পিরিট শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
পঞ্চমঃ এরপর আঙ্গুলের বাম অথবা ডান যেকোনো এক পাশে কলমটি ধরে সুই দিয়ে ছিদ্র করে নিতে হবে। প্রত্যেকবার ডায়াবেটিস পরিমাপের সময় আঙ্গুল পরিবর্তন করে নেওয়া ভালো।
ষষ্ঠঃ এরপর আঙুল টিপে এক ফোটা রক্ত গ্লুকোমিটারের টেস্ট স্ট্রিপের নির্দিষ্ট স্থানে দিতে হবে।
সপ্তমঃ তারপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গ্লুকোমিটারে আপনার ডায়াবেটিস তথা সুগারের পয়েন্ট দেখা যাবে। এভাবে আপনি আপনার ডায়াবেটিস পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারবেন।
অষ্টমঃ সব কাজ শেষে সুই এবং স্ট্রিপ ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিন। এবং গ্লুকোমিটার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনমুক্ত করে নিরাপদ জায়গায় রাখুন।
সুস্থ ব্যক্তির ডায়াবেটিসের পয়েন্ট কত হওয়া উচিত
দুই বারে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করলে তার ফলাফল ভালো পাওয়া যায়। একটি হলো সকালে খালি পেটে এবং আরেকটি সকালে নাস্তার দুই ঘণ্টা পর। সকালে খালি পেটে একজন সুস্থ মানুষের ৪ থেকে ৬ পয়েন্ট ডায়াবেটিস থাকা উচিত। এবং নাস্তা করার দুই ঘণ্টা পরে ৮ পয়েন্টের নিচে থাকলে সেটা স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। একজন ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের মাত্রা ভিন্ন রকম হয়। একজন ডায়াবেটিস রোগীর স্বাভাবিক পয়েন্ট থাকতে হয় খালি পেটে ৪ থেকে ৭ এবং খাবারের দুই ঘন্টা পর ৮ থেকে ১০ এর মধ্যে। এর থেকে বেশি হলে সেটা অস্বাভাবিক এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ বা ইনসুলিন সেবন করা জরুরী।
ডায়াবেটিস রোগীদের কখন এবং দিনে কতবার পরীক্ষা করতে হয়
সাধারণত ডায়াবেটিস টাইপ ১ এবং টাইপ ২ এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। টাইপ ১ এর ক্ষেত্রে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। সাধারণত কম বয়সীদের এই ডায়াবেটিস হওয়া সম্ভব থাকে। টাইপ ২ এর ক্ষেত্রে শরীরে ইনসুলিন খুব কম তৈরি হয় এবং শরীর তা কাজে লাগাতে পারেনা। মূলত বয়স্কদের ক্ষেত্রে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- টাইপ ১ এর ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস পরিমাপ
টাইপ ১ রোগীদের ক্ষেত্রে দিনে ৪ থেকে ৬ বার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। সাধারণত এ সকল রোগীদের ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। সকালে খালি পেটে একবার। নাস্তা খাওয়ার পরে। শারীরিক ব্যায়াম করার আগে এবং পরে। ডায়াবেটিসের মাত্রা বেশি বা কম হওয়ার উপসর্গ দেখা দিলে। এবং ইনসুলিনের ডোজ সামঞ্জস্যের সময়।
- টাইপ ২ এর ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস পরিমাপ
টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে দুইভাবে ডায়াবেটিস পরীক্ষার কথা বলা হয়ে থাকে। যারা ইনসুলিন নিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে সপ্তাহের কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ দিন ডায়াবেটিস পরীক্ষার কথা বলা হয়ে থাকে। একদিন নাস্তার আগে ও পরে। আরেকদিন দুপুরে খাবার আগে ও পরে। আর একদিন রাতে খাবারের আগে ও পরে। অথবা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে। আর ইনসুলিন এর ডোজ সামঞ্জস্যের সময় সময়।
এবং যারা ঔষধ সেবন করছেন তাদের ক্ষেত্রে আর এক ধরনের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা। তাদেরকে সাধারণত সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ডায়াবেটিসের পরিমাপ করতে বলা হয়। একদিন নাস্তার আগে এবং নাস্তার ২ ঘন্টা পর। কোনদিন রাতে খাওয়ার এবং কোনদিন ব্যায়ামের পূর্বে। এভাবে সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী ডায়াবেটিস পরীক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিসের পরিমাপ সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়। এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
শেষ কথা
ডায়াবেটিস রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় যোগ্য নয়। কিন্তু সচেতনতা এবং নিয়মানুবর্তিতা এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস পরিমাপের মেশিনের নাম এবং দাম সম্পর্কে কিছুটা হলেও আমরা ধারণা পেয়েছি। প্রত্যেকটা ডায়াবেটিস রোগিদের তাদের শরীরের খেয়াল রাখা উচিত। এই আর্টিকেল টি পড়ে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url