টাইমেক্স ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া , টাইমেক্স ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম ।

সম্মানিত পাঠক আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, আপনারা পরিবার পরিজনদের নিয়ে সবাই ভালো আছেন। বিগতদিনগুলোর মত আমরা আজকেও একটি জরুরি ওষুধের টপিক নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। সেটি হচ্ছে টাইমেক্স ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত অজানা তথ্য তুলে ধরবো। আপনি কি এই টাইমেক্স ট্যাবলেট সম্পর্কে জানার জন্য গুগলে সার্চ করে আমাদের এই ব্লগ পোষ্টিতে এসেছেন? তাহলে আপনি সঠিক তথ্য পেতে ঠিক জায়গাতেই এসেছেন।

টাইমেক্স ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কেননা আমরা এই পোষ্টে টাইমেক্স ট্যাবলেট সম্পর্কে বিস্তারিত সাজানোর চেষ্টা করেছি। আপনি যদি আমাদের সাথে এই আর্টিকেলের  শেষ পর্যন্ত থাকেন, তাহলে টাইমেক্স ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি? এই সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি টাইমেক্স ট্যাবলেট কিসের ঔষধ, timex tablet এর কাজ কি, টাইমেক্স ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম ও দাম সহ এই সম্পর্কে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন। তাই অবহেলা না করে সম্পূর্ণ পোস্টটি শেষ অবদি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।

ভূমিকা - টাইমেক্স ট্যাবলেট

বর্তমান সময়ে timex tablet বিশেষ করে যারা মানসিক টেনশনে থাকেন তাদের জন্য এটি বহুল ব্যবহৃত ওষুধ। টাইমেক্স মেডিসিনটি মূলত ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড উৎপাদন করে বাজারজাত করে থাকে। যার
জেনেটিক নাম ক্লোমিপ্রামাইন হাইড্রো ক্লোরাইড। অনেকেই আছেন যারা হয়তো এই ট্যাবলেট সম্পর্কে ভালো মতো জানেন না তাই তারা এ বিষয়ে জানতে চায়। 

এজন্য আমরা আজকের পোষ্টে এই ট্যাবলেট সম্পর্কে আপনাদের এমন কিছু তথ্য জানিয়ে দিব যার সাহায্যে আপনি উপকৃত হতে পারবেন। এর পাশাপাশি আপনার প্রিয়জনদেরও এই বিষয়ে অবগর করতে পারবেন। তাহলে চলুন, বেশি কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করা যাক।

টাইমেক্স ট্যাবলেট কিসের ঔষধ

আমরা অনেকেই timex কিসের ঔষধ বা এই ওষুধ কোন কোন রোগ কিংবা সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় সেটি জানতে চায়। তাই প্রথমেই আমরা  এ বিষয়ে একটা পরিষ্কার ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো। timex ট্যাবলেট মূলত যেসব সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
  • বিষন্নতা
  • মানসিক সমস্যা 
  • আঙ্গিক-প্রচ্ছন্ন
  • তীব্র ভয়-ভীতি 
  • দ্রুত বীর্য*পাত 
  • মানসিক টেনশন 
  • স্নায়ুবিকারগ্রস্থ
  • অন্তরাবর্তিত বিষন্নতা
  • ব্যাক্তিত্ববিকার ও
  • মনোবিকার বিষন্নতা ইত্যাদি।
সাধারনত উপরের উল্লিখিত সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে এই ট্যাবলেট ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে এছাড়াও এই ওষুধ রাত্রিকালীন বিছানা ভিজানো রোগের ক্ষেত্রেও খুবই কার্যকরি ভূমিকা পালন করে থাকে। আশা করছি আপনারা এতক্ষণে টাইমেক্স ট্যাবলেট কিসের ঔষধ সেই বিষয়ে জানতে পেরেছেন । এবার চলুন, timex tablet এর কাজ কি বা এই ওষুধ কি কাজ করে সেই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক। 

timex tablet এর কাজ কি

সাধারনত এই ঔষধ তৈরি করার সময় যে উপকরণগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তা আমাদের মানব দেহের বিষন্নতা বিরোধী হিসেবে কাজ করে থাকে। কেউ যদি দীর্ঘদিন যাবত বিষন্নতায় ভোগেন কিন্তু সেই অবস্থা থেকে কোনো ভাবেই বের হয়ে আসতে পারছেন না। ঠিক সে সময়ে সেই ব্যক্তির একটু বিশ্রামের প্রয়োজন পড়ে এক্ষেত্রে তাকে Timex tablet ডাক্তাররা নির্দেশনা দেয়। 

মূলত এ ধরণের সমস্যার ক্ষেত্রে এই ওষুধ উপকারী ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি আরও বেশ কিছু সমস্যা আছে যেমন কম্পালসেভ ডিস অর্ডার (Compulsive Disorder) বা ভয় পরিস্থিতি অর্থাৎ সহজ ভাষায় বলতে গেলে যারা হঠাৎ করে অনেক ভয় পেয়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশ  কার্যকরী। 

এছাড়াও যারা নিয়মিত বিষন্নতায় (sadness) ভোগেন বা হঠাৎ করে ভয় পেয়ে যায় তাদের ক্ষেত্রেও এই মেডিসিন সেবন করতে দেওয়া হয়। তবে মনে রাখাটা জরুরি যে এই ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন নিবন্ধিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।

তবে পরিশেষে বলব যে এই ধরনের যাবতীয় সমস্যার অনুপাতে টাইমেক্স ঔষধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আশা করছি টাইমেক্স ট্যাবলেট এর কাজ কি তা জেনে নিতে পেরেছেন। এবার চলুন, টাইমেক্স ট্যাবলেট খেলে কি হয় সেই বিষয়ে আমরা জেনে নেই।

টাইমেক্স ট্যাবলেট খেলে কি হয়

অনেকেই রয়েছেন যারা জানেন না যে টাইমেক্স ট্যাবলেট খেলে কি হয় বা এই ওষুধ খেলে কি কি উপকার পাওয়ার যায়। তাই পোষ্টের এই অংশে এই বিষয়েও ক্লিয়ার ধারণা জানিয়ে দিব। তবে এই ওষুধ খেলে আমরা বেশ কয়েকটি উপকারিতা পেতে পারি যেমনঃ 
  • অনিদ্রা কাটায়
  • হতাশা দূর করে
  • অযৌক্তিক ভয় কাটায়) 
  • বিষন্নতা দূর করে 
  • পেশী দুর্বলতা দূর করে
  • মানসিক অবসাদ দূর করে
  • শারীরিক দূর্বলতা দূর করে
  • নিউরোন অস্থিরতা দূর করে
  • কম্পালসেভ ডিস অর্ডার দূর করে
  • মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে ইত্যাদি।

টাইমেক্স ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

আপনি যদি এই ট্যাবলেট খাওয়ার সথিক নিয়ম সম্পর্কে না জানেন, তাহলে আপনি পোষ্টের এই অংশটি মনোযোগ সহকারে পড়ে সেবনের সঠিক নিয়ম বিস্তারিত জেনে নিন। আপনি যখন ভাত খেতে বসেন তখন নিশ্চয় নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন একই পরিমাণে ভাত খেয়ে থাকেন। তেমনি সব ওষুধের ক্ষেত্রেও ঠিক নিয়ম রয়েছে যেগুলো আপনাকে অবলম্বন করতে হবে।
টাইমেক্স ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
আপনার কাংখিত রোগ ভালো করার জন্য সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে ঔষধ নিয়মিত সেবন করতে হবে। তাহলেই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী। প্রাথমিক অবস্থায় কেউ যদি ভয় ভীতি বা বিষণ্যতার সমস্যা থাকে তাইলে প্রতিদিন টাইমেক্স ট্যাবলেট ২৫ মিগ্রা এর অল্প মাত্রা রাতে খাবার খেয়ে ঘুমানোর আগে ১ টি করে ট্যাবলেট খেতে হবে। 

তবে মনে রাখবেন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। এই ওষুধ খুব বেশি মাত্রায় গ্রহন যাবে না এই বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। এই ট্যাবলেট চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত সেবন করলে বেশ কয়েকটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তাহলে চলুন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো জেনে নেই।

টাইমেক্স ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

প্রতিটা ঔষধেরই উপকারিতার পাশাপাশি সামান্য পরিমাণ হলেও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে।এই ওষুধেরও বেশ কয়েকটি সামান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যদিও এই ওষুধটি সুসহনীয় যা শরীরে সাথে মানিয়ে যায়। এরপরেও প্রাথমিক অবস্থায় এর বেশ কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে যেমন:
  • বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়
  • মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া
  • ক্ষুধা বৃদ্ধি হওয়া
  • মাথাব্যথা করা
  • অস্থিরতা ভাব
  • মাথা ঘোড়ানো ভাব
  • ওজন বৃদ্ধি হওয়া
  • হাত কাঁপুনি ভাব
  • চোখের সমস্যা হওয়া
  • ক্লান্ত বা ঘুমের অনুভূতি
  • তন্দ্রা অনুভূত হওয়া 
  • প্রস্রাব করতে অসুবিধা হওয়া ইত্যাদি।
সাধারনত এই ওষুধ সেবনে উপরের উল্লিখিত সমস্যাগুলো দেখা দেয়। তবে সকলের ক্ষেত্রে উপরোক্ত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো দেখা নাও দিতে পারে। কিন্তু আপনি যদি খেয়াল করেন যে আপনার ওজন অনেক বেড়ে গেছে কিংবা দৃষ্টি শক্তি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে অথবা অধিকাংশ সময় ক্লান্তি ভাব দেখা দিচ্ছে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব আপনার নিকটস্থ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। আশা করছি আপনারা ইতিমধ্যে টাইমেক্স ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, টাইমেক্স ট্যাবলেট এর দাম কত তা জেনে নেই।

টাইমেক্স ট্যাবলেট এর দাম কত

সাধারণত টাইমেক্স ট্যাবলেট তৈরি করার সময় ক্রমিপ্রামিন হাইড্রোক্লোরাইড ব্যবহার করা হয়েছে। এটা ওরিয়ন ফারমা লিমিটেড অর্থাৎ এটি আমাদের বাংলাদেশি কোম্পানির একটি ওষুধ। এই ওষুধ মূলত বাজারে ২৫ মিলিগ্রামের ভেরিয়েন্ট এর পেয়ে যাবেন। এই ওষুধের দাম কত এই বিষয়ে অনেকেরই জানা নেই। টাইমেক্স ট্যাবলেট প্রতি পিচ এর দাম মাত্র ৯ টাকা। এবং প্রতি পাতার মূল্য ৯০ টাকা (মোট ১০ পিচ থাকে)। আসলে এই ওষুধগুলোর সঠিক দাম বলাটা বেশ কঠিন। কারণ এর দাম যে কোন সময় কম আবার বেশি হয়ে থাকে। 

টাইমেক্স ট্যাবলেট খাওয়ার সর্তকতা

টাইমেক্স ওষুধটি সেবনের আগে আপনাকে আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে ভালোমত পরামর্শ করে নিতে হবে এরপর তাদের দেওয়া নির্দেশে বলি বা সতর্কতা কোন অবলম্বন করে এই ওষুধগুলি সেবন করা উচিত। এই ওষুধগুলো সেবন করা থেকে নিম্নে দেওয়া সতর্কগুলো মেনে চলতে হবে যেমন-
  • বয়স্ক হলে
  • মৃগীরোগ থাকলে
  • মস্তিষ্কের ক্ষতি হলে 
  • লিভার বা কিডনি রোগ থাকলে
  • থাইরয়েড গ্রন্থি থাকলে
  • নিম্ন রক্তচাপ থাকলে
  • কেউ কন্টাক্ট লেন্স পরেন
  • তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্যতায় ভুগলে
  • রক্তের ব্যাধি থাকলে
  • অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
  • হার্টের অন্যান্য সমস্যা থাকলে
  • সিজোফ্রেনিয়া বা মানসিক ব্যাধি থাকলে
  • প্রস্রাব করতে অসুবিধা হলে ইত্যাদি।
উপরের উল্লিখিত সমস্যা ছাড়াও কিডনিজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত থাকলে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। তাই টাইমেক্স ট্যাবলেট সেবনের পূর্বে আপনাকে একজন ভাল বা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ সেবন করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে টাইমেক্স খাওয়া যাবে কিনা

টাইমেক্স ট্যাবলেট এর প্রেগন্যান্সি বা গর্ভাবস্থা ক্যাটাগরি-সি (Category-C) ধরা হয়। এজন্য গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে টাইমেক্স ট্যাবলেটের নিরাপত্তার উপর এখন অবদি পর্যাপ্ত পরিমানে পরিক্ষা না থাকায়, শুধুমাত্র ভ্রূণের উপর ডিপেন্ড করে সম্ভাব্য ঝুঁকি রোগীদের সুবিধার কথা ভবে ডাক্তারের দেওয়া নিয়ম বা পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিৎ।

লেখকের ইতিকথাঃ টাইমেক্স ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

আমরা ইতিমধ্যে টাইমেক্স ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, টাইমেক্স ট্যাবলেট কিসের ওষুধ, সেবনের সঠিক ও দামসহ বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করেছি। আপনারা হয়তো এ বিষয়ে এতক্ষণে একটি ক্লিয়ার  ধারণা পেয়ে গেছেন। তবে এই সম্পর্কে আপনাদের যদি কোন ধরণের মতামত কিংবা প্রশ্ন থেকে থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

আমাদের আজকের লেখা টাইমেক্স ট্যাবলেট এর বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কিত আর্টিকেলেটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার প্রিয়জনজদের সাথে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে তারাও টাইমেক্স ট্যাবলেট সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জানতে সক্ষম হবেন। বিভিন্ন ট্যাবলেট ও  স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে হলে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url