রূপচর্চা করতে কাজে লাগান এই ১৫ টি উপাদান।
দাগহীন ফর্সা স্বাস্থ্যজ্জল ত্বক সকলেরই কাম্য। । শুধু বর্তমানে না প্রাচীন কাল থেকে হয়ে আসছে রূপচর্চার প্রচলন। নিজেকে সুন্দর হিসেবে উপস্থাপন করতে সকলেরই ভালো লাগে। আর রূপচর্চায় সবচেয়ে করণীয় ত্বকের যত্ন নেওয়া। রূপচর্চা করতে কাজে লাগান বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান যার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। বর্তমানে কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেরই রূপচর্চা করার সময় হয়ে উঠে না। অনেকে আবার মনে করেন রূপচর্চা মানে অনেক সময় ধরে অনেক কিছু করার ব্যাপার স্যাপার। আসলে কিন্তু তা না আপনি আপনার ঘরের বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান যেগুলো দিয়ে আপনি খুব অল্প সময়ে আপনি ত্বকের যত্ন নিতে পারেন।
অল্প খরচে কম সময়ে ঘরোয়া কিছু উপাদান দিয়ে আপনি কিভাবে আপনার ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখবেন তা নিয়েই আলোচনা করার জন্য আজকে আমাদের এই আয়োজন। আজ এই আর্টিকেলর মাধ্যমে আপনাদের সাথে আলোচনা করব রূপচর্চার বেশ কিছু উপাদান নিয়ে। রূপচর্চা করতে কাজে লাগান এই ১৫ টি উপাদান। খুব সহজেই আপনি এসব উপাদান দিয়ে আপনার মূল্যবান ত্বকের যত্ন নিতে পারেন।
রূপচর্চায় দুধের সর:
একদম ঘরোয়া উপায়ে রূপচর্চার সবথেকে ভালো প্রাকৃতিক উপাদান হলো দুধের সর। কমবেশি সবার বাসায় দুধ থাকে। এই দুধ গরম করে খাওয়ার জন্য উপযুক্ত করার পর দুধের উপরে সরের একটি আস্তরণ পড়ে। এই সর তুলে মুখে লাগালে আপনার ত্বকের জেল্লা বাড়তে থাকবে। বিশেষ করে যাদের শুষ্ক ত্বক তাদের ত্বকে দুধের সর লাগালে ত্বক হয় কোমল ও নমনীয়।
রূপচর্চায় মধু:
বিশেষ করে যাদের ত্বক শুষ্ক তাদের মধু সবথেকে রূপচর্চার ভালো উপাদান। ত্বকের কালো দাগ দূর করতে মধু বেশ কার্যকরী উপাদান। মধুর সাথে কিছুটা বেসন, চন্দন, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করলে মুখের ধুলো ময়লা দূর হয়ে যায় এবং ত্বক হবে নরম ও কমল। এছাড়া ত্বকের মশ্চারাইজার এর জন্য এক চামচ মধুর সাথে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে লাগান। বিশেষ করে শীতকালে ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে লেবুর কোন জুড়ি নেই। শীতকালে রুক্ষ শুষ্ক ত্বককে নরম ও কমনীয় করতে মধু দিয়ে রূপচর্চা করুন।
রূপচর্চায় হলুদ:
কাঁচা হলুদ বেটে বেসন ও দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে বলিরেখা দূর হয়ে যায় এবং ত্বকের স্ট্রেচ মার্ক হালকা করে। এছাড়াও হলুদের গুড়ার সাথে চালের গুড়া মিশিয়ে তার সাথে এক চামচ মধু দিয়ে উপটান বানিয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হবে মসৃণ ও উজ্জ্বল।দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের উজ্জ্বলতায় হলুদের ভূমিকা অপরিসীম।
রূপচর্চায় বেসন:
প্রত্যেকেরই রান্নাঘরে থাকা এ সাধারণ উপাদানটি দিয়ে ত্বকের যত্ন নিতে পারবেন খুব সহজেই। বেসন ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, রোদে পোড়া ভাব দূর করে এবং ব্রণের দাগ দূর করে ত্বক করে ফর্সা ও স্বাস্থ্যউজ্জল। বেসনের সাথে দুই চামচ কাঁচা দুধ এবং এক চামচ লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হবে ফর্সা ও উজ্জল।
রূপচর্চায় আপেল:
আপেল দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে রূপচর্চা করতে পারেন। আপেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও কপার ত্বককে সতেজ ও সজীব রাখে। চন্দনের গোড়া ও আপেলে রস এ দুটোই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদান। যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তারা এই দুই উপাদান মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন। আপেল ও মধুর রস দিয়ে রূপচর্চা করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। আপেলে আছে ভিটামিন সি যা ত্বকের আদ্রতা ধরে সাহায্য করে এবং মধু ত্বকে মশ্চারাইজিং করে।
আপেলের রসের সঙ্গে কিছু টক দই এবং কিছু লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ডেট সেল দূর হয়। তারপর আপেল ও হলুদের গোড়া দিয়েও আপনি ত্বকের যত্ন নিতে পারবেন। আপেল ব্লেন্ড করে নিয়ে তার সাথে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক বানিয়ে নিন। আপেলের সাথে হলুদ মিশিয়ে রূপচর্চা করলে দারুন উপকার পাওয়া যায়।
রূপচর্চায় চন্দন:
বহুকাল আগে থেকে চন্দন রূপচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চন্দনের গুড়া মুখের দাগ কমিয়ে ত্বক টানটান করতে সাহায্য করে। প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন কসমেটিক্স ও সুগন্ধিতে চন্দন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চন্দনে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে ত্বকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে।
রূপচর্চায় মুলতানি মাটি:
যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের রূপচর্চা করতে কাজে লাগান মুলতানি মাটি। ত্বকের যত্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুলতানি মাটি ব্যবহারের ফলে ত্বকের ব্রণের দাগ দূর হয়ে যায়। এবং ত্বকে ইনস্ট্যান্ট গ্লো আনতে সাহায্য করে। ব্রণের দাগ দূর করতে মুলতানি মাটি একটি ভালো উপাদান। মুলতানি মাটি স্ক্রাবার ও ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। হলুদ ও চন্দনের গুঁড়োর সাথে মুলতানি মাটি ও কাঁচা দুধ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর তোকে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
রূপচর্চায় অলিভ অয়েল:
অলিভ অয়েল ত্বক মশ্চারাইজার করে এবং ত্বক উজ্জ্বল করে। শুধু মুখের ত্বক না শরীর এবং চুলের যত্নেও অলিভ অয়েলের কোন বিকল্প নেই। অলিভঅয়েলে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট বয়সের ছাপ করতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েলের ভিটামিন এ, ডি, ই,কে থাকে। এছাড়া আমাদের শরীরে পানির অভাব হলে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। অলিভ অয়েল ব্যবহারের ফলে রুক্ষ ত্বক কমল ও মসৃণ হয়। অলিভ অয়েল নতুন কোষ জন্মাতে এবং ত্বক নরম উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এছাড়া মেকআপ রিমুভের কাজে অলিভ অয়েলের কোন জুড়ি নেই। মেকআপ বা সানস্ক্রিম উঠানোর জন্য অলিভ অয়েল পুরা মুখে ভালোভাবে মেসেজ করুন।
রূপচর্চায় শসা:
রূপচর্চায় শসা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শসা চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কমাতে কাজ করে। শসা পাতলা করে কেটে নিয়ে চোখের উপরে বসিয়ে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এভাবে নিয়মিত কিছুদিন শসার ব্যবহার আপনার চোখের নিচের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করবে। ত্বকে ব্যবহারের পাশাপাশি শসা খেলেও ত্বকের অনেক উপকার হয়।
রূপচর্চায় ডাবের পানি:
ডাবের পানিতে এমাইনো এসিড থাকে যা ত্বক শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করে। ডাবের পানি ত্বকে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হয়। নিয়মিত ডাবের পানি ত্বকে লাগালে ত্বক হবে মসৃণ ও তরতাজা। দুই চামচ ডাবের পানি সঙ্গে মধু ও কিছু পরিমাণ বেসন মিশিয়ে ত্বকে লাগালে এটি ফেসমাস্ক হিসেবে কাজ করবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ডাবের পানি লাগিয়ে ঘুমান এবং সকালে উঠে ভাল হবে মুখ ধুয়ে নিন।
এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তাছাড়া মেকআপ রিমুভ করতে ডাবের পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মেকআপ তোলার জন্য ছোট স্প্রে বোতলে ডাবের পানি নিয়ে মুখের স্প্রে করুন। এরপর তুলোর বলের সাহায্যে নিমিষে পরিষ্কার হয়ে যাবে আপনার ত্বক।
রূপচর্চায় এলোভেরা:
এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী বহুকাল আগে থেকেই রূপচর্চায় বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এলোভেরা নিয়মিত ব্যবহারে মেছতার সমস্যা দূর করা সম্ভব। অ্যালোভেরার সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়ে ত্বকে লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যায়। শুষ্ক ত্বকে এলোভেরা ব্যবহারের ফলে তক হবে মসৃণ ও সুন্দর।
শুধু মুখের ত্বকের যত্নে নয় চুলের যত্ন অ্যালোভেরার কোন জুড়ি নেই। অ্যালোভেরার ভেতরের জেল নিয়ে সপ্তাহে দুইদিন চুলের গোড়া থেকে পর্যন্ত লাগান। নিয়মিত ব্যবহার ফলে চুল হবে ঝরঝরে,জটমুক্ত ও উজ্জ্বল। তবে যাদের অ্যালার্জি রয়েছে এবং এলোভেরা জেল ব্যবহারের ফলে এলার্জি বেড়ে যায় তারা অ্যালোভেরা থেকে সাবধান থাকবেন।
রূপচর্চায় আলু:
আলু আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় একটি সবজি। রূপচর্চা করতে কাজে লাগান আলুর রস। আলু বিশেষ করে ত্বকের কালো দাগ চোখের নিচের বলি রেখা দূর করতে সাহায্য করে। আলুর রস বানিয়ে নিন তারপর মধুর সাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান ফলাফল পাবেন। লেবুর রসের সঙ্গে আলুর রস মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। ব্রোন ও মেস্তা দূর করতে সাহায্য করে এই আলুর রস। এছাড়া আলুর সঙ্গে শসা ব্লেন্ড করে এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে দারুন একটি ক্লিনজার বানিয়ে নিন।
রূপচর্চায় নিম পাতা:
শুধু পাতা নয় নিম গাছের প্রতিটি অংশে কোন না কোন ভাবে আমাদের উপকার করে থাকে। ব্রণ, তৈলাক্ত ত্বক এছাড়াও চুলের সমস্যা সমাধানে নিম পাতা ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। মুখের তৈলাক্ততা কমাতে নিমপাতার গুড়োর সাথে শসার রস মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এছাড়া নিমের তেল চুলের জন্য খুবই উপকারী। খুশকি দূর করতে নিমের তেল ব্যবহার করুন।
রূপচর্চায় কফি:
রূপচর্চায় কপি একটি অসাধারণ স্ক্রাব যা মুখের ডেড সেল ঝরিয়ে ত্বককে নরম ও উজ্জ্বল করে তোলে। এক টেবিল চামচ কফি, এক চামচ চিনি, এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল দিয়ে খুব সহজে কফির স্ক্রাব বানিয়ে নিন। সকল উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে ভেজা ত্বকে লাগান। এরপর আস্তে আস্তে মেসেজ করুন। মেসেজ করার পর পানির ঝাপটায় ধুয়ে ফেলুন।
তারপর নরম কাপড় দিয়ে মুখ মুছে নিন। এছাড়াও কপির সঙ্গে মধু ও বেসন মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। তারপর ত্বকে লাগিয়ে সাত থেকে দশ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত লাগালে সকল প্রকার দাগ দূর হবে। ত্বকে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে এবং ত্বকে গোলাপি আভা ধারণ করবে।
রূপচর্চায় গোলাপজল:
গোলাপ জল ব্যবহারে সব থেকে উপযুক্ত সময় হলো রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে। গোলাপ জলে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও মিনারেল থাকায় বয়সের ছাপ পড়া থেকে বিরত রাখে। প্রতিদিন রাতে মুখ পরিষ্কার করার পর কটন প্যাডে পরিমাণ মতো গোলাপজল নিয়ে মুখে লাগান। কিছুক্ষণ পরে ত্বক শুকিয়ে গেলে উপরে মশ্চারাইজার লাগান। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বকের জেল্লা বাড়বে। ত্বকের উপরে আদ্রতার স্তর তৈরি হবে এবং ত্বকের বয়স ধরে রাখবে।
শেষ কথা:
এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিত্য নতুন বিষয়ে আর্টিকেল লিখে আপনাদের বিভিন্ন তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি। আপনাদের যদি আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং তাদেরকে পড়ার সুযোগ করে দিন। রূপচর্চা বিষয়ক আরো নানান টিপস পেতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url