বিড়ালের কামড়ে কি রোগ হয় এবং তার প্রতিকার সম্পর্কে জানুন
কিন্তু আপনার এই আদরে পোষা বিড়াল ও আপনার জীবনের ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে অনেক গবেষণায় দেখা গেছে বিড়ালের কামড়ে বা আঁচড়ে নানান রকম রোগ হয়ে থাকে তাই আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা আলোচনা করব বিড়ালের কামড়ে কি রোগ হয়, বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়, বিড়াল কামড়ালে করণীয়, রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম এবং রেবিস ভ্যাকসিন এর দাম কত সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
ভূমিকা
বিড়াল কামড়ালে করণীয়
বিড়ালের কামড়ে কি রোগ হয়
বিড়ালের কামড় সাধারণত ছোট মনে হলেও এটি বিভিন্ন রোগের সংক্রমণের কারণ হতে পারে। তাই এই আর্টিকেলটিতে আমরা আপনাকে জানাবো বিড়ালের কামড়ে কি রোগ হয় সেই সম্পর্কে বিড়ালের দাঁত ধারালো এবং ছোট হওয়ার কারণে তারা ত্বকের গভীরে পৌঁছে ক্ষত তৈরি করে যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।তাই বিড়ালের কামড়কে কখনোই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এই কামড় থেকে বেশ কয়েকটি গুরুতর রোগ হতে পারে যেগুলো প্রাথমিকভাবে ত্বকের সংক্রমণ হলেও তা পরবর্তীতে আরও বড় স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। নিচে বিড়ালের কামড় থেকে হতে পারে এমন কিছু সাধারণ রোগ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
বিড়ালের কামড় থেকে সবচেয়ে সাধারণ যে রোগ হতে পারে তা হলো প্যাস্টিউরেলা সংক্রমণ। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা সাধারণত বিড়ালের লালার মাধ্যমে কামড়ের সময় মানুষের ত্বকের মধ্যে প্রবেশ করে।
কামড়ানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ক্ষতস্থানে লালচে ভাব ফুলে যাওয়া এবং তীব্র ব্যথা দেখা দিতে পারে। যদি সময়মতো চিকিৎসা না নেওয়া হয় এই সংক্রমণটি আরও গুরুতর হয়ে গিয়ে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্যাস্টিউরেলা সংক্রমণ চিকিৎসার জন্য সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয়।
বিড়ালের কামড়ের মাধ্যমে স্ট্যাফিলোকক্কাস (Staphylococcus) এবং স্ট্রেপ্টোকক্কাস (Streptococcus) ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ত্বকের ক্ষতস্থানে প্রবেশ করে তীব্র ব্যথা এবং সংক্রমণের সৃষ্টি করতে পারে।
প্রাথমিক অবস্থায় এই সংক্রমণগুলো ত্বকে ফুসকুড়ি বা পুঁজ জমার মতো লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এই সংক্রমণগুলো রক্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে যা সেপ্টিসেমিয়া বা রক্তের সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
বিড়ালের কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ হতে পারে। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা বার্টোনেলা হেনসেল্যা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ঘটে। এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষতস্থানের আশেপাশে লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া জ্বর মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি। ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ সাধারণত কমপক্ষে দুই সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে উপশম হয় তবে কখনো কখনো গুরুতর অবস্থায়ও পৌঁছাতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
যদিও বিড়ালের কামড় থেকে জলাতঙ্ক সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম তবে এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। জলাতঙ্ক একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ যা সংক্রমিত প্রাণীর লালা থেকে ছড়ায়। যদি বিড়ালটি জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয় তাহলে কামড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে। জলাতঙ্কের লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং রোগটি একবার শুরু হলে তা সাধারণত প্রাণঘাতী হয়। তাই বিড়ালের কামড়ের পর যত দ্রুত সম্ভব র্যাবিস ভ্যাকসিন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।আরো পড়ুনঃ acteria পাউডার খাওয়ার নিয়ম-একটেরিয়া কিডস খাওয়ার নিয়ম
বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়
সাধারণত বিড়াল কামড়ানোর পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে র্যাবিস টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে কামড়ানোর স্থান ক্ষতের গভীরতা এবং বিড়ালের টিকাদান ইতিহাসের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসক দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিতে পারেন। দ্রুত টিকা গ্রহণ করা হলে সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায় এবং রোগের গুরুতর জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
বিড়ালের আঁচড়ে কত ঘন্টার মধ্যে ভ্যাকসিন দিতে হয়
বিড়ালের কামড়ে কি মানুষের জলাতঙ্ক রোগ হয়
আরো পড়ুন: ওসারটিল ২৫ এর কাজ কি - ওসারটিল ৫০ খাওয়ার নিয়ম
বিড়ালের কামড়ের পর জলাতঙ্কের সংক্রমণ হওয়ার প্রধান কারণ হলো ভাইরাসটি বিড়ালের লালার মাধ্যমে কামড়ের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে। যদি কোনো বিড়াল জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয় এবং সেই বিড়াল কামড়ায় তবে মানুষের শরীরে জলাতঙ্কের ভাইরাস প্রবেশ করার সম্ভাবনা থাকে। তবে গৃহপালিত বিড়ালদের যদি নিয়মিত র্যাবিস টিকা দেওয়া হয় তাহলে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। টিকাদান করা বিড়াল সাধারণত জলাতঙ্ক ছড়ায় না।
বিড়ালের কামড়ে কি রোগ হয় জলাতঙ্ক একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা মূলত কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। বিড়াল যদি র্যাবিস ভাইরাস বহনকারী হয় তাহলে কামড়ের সময় সেই ভাইরাস মানুষের রক্তে প্রবেশ করতে পারে। জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দিতে সাধারণত কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর মাথাব্যথা ক্লান্তি এবং কামড়ের স্থানে ব্যথা বা ফোলাভাব। রোগটি বাড়তে থাকলে স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা দেখা দেয় যার ফলে রোগী অস্থিরতা পানির ভয়, এবং শেষপর্যন্ত কোমায় চলে যেতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না করলে জলাতঙ্ক রোগ প্রায়শই প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়।
বিড়ালের কামড়ের পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে কামড়ের স্থলটি ভালোভাবে সাবান এবং প্রচুর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন যাতে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার ঝুঁকি কমে। এরপর দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক কামড়ের অবস্থা অনুযায়ী র্যাবিস ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। সাধারণত বিড়ালের কামড়ের পর ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে র্যাবিস ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত যাতে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানো যায়।
এছাড়াও যদি কামড়ানো বিড়ালটি বেওয়ারিশ হয় বা তার টিকা দেওয়া না থাকে তাহলে জলাতঙ্কের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় দেরি না করে দ্রুত র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবুলিন এবং টিকা দেওয়া প্রয়োজন। যদি বিড়ালটি গৃহপালিত হয় এবং নিয়মিত টিকাদান করা হয়ে থাকে তখন জলাতঙ্কের ঝুঁকি কম তবে তবুও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বিড়ালের কামড়ের মাধ্যমে জলাতঙ্ক থেকে বাঁচতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো গৃহপালিত বিড়ালকে নিয়মিত র্যাবিস টিকা দেওয়া। এছাড়া বেওয়ারিশ বিড়ালের সংস্পর্শ এড়ানো এবং তাদের আচরণ সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। যদি কোনো বেওয়ারিশ বিড়ালের সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসতে হয় তাহলে তাদের আচরণ এবং স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা উচিত।
বিড়ালের কামড়ে মানুষের জলাতঙ্ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিশেষত যদি বিড়ালটি বেওয়ারিশ বা টিকা না দেওয়া হয়। তাই বিড়ালের কামড়ানোর পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শমতো র্যাবিস ভ্যাকসিন গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে জলাতঙ্কের ঝুঁকি থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।
জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ
জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ জলাতঙ্ক বা রেবিস একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ যা প্রাণী ও মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। সাধারণত পোষা বা বন্য প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। জলাতঙ্কের ভাইরাস মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে যার ফলে মস্তিষ্কে মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে । সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে এই রোগ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই জলাতঙ্কের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। এই পোস্টে আমরা জলাতঙ্ক রোগের প্রধান লক্ষণগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
প্রাথমিক লক্ষণ
জলাতঙ্কে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রথম দিকে সাধারণত ফ্লু জাতীয় উপসর্গ দেখা দেয়। এর মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা দুর্বলতা এবং অস্বস্তি অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে এই লক্ষণগুলো অত্যন্ত সাধারণ হওয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা বেশ কঠিন হতে পারে। সাধারণত ভাইরাসটি সংক্রমণের দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে লক্ষণগুলো স্পষ্ট হতে শুরু করে তবে কখনো কখনো এটি এক সপ্তাহের মধ্যে কিংবা এক বছর পরেও দেখা দিতে পারে।
জলাতঙ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো আক্রান্ত স্থান বা কামড়ের জায়গায় অস্বাভাবিক পরিবর্তন। কামড়ের স্থানটি প্রথমে ব্যথা করতে পারে ফুলে উঠতে পারে এবং সেখানে ঝিনঝিন অনুভূতি হতে পারে। এই লক্ষণগুলো অনেক সময়ে সাধারণ ব্যথা বা ইনফেকশনের মতো মনে হতে পারে কিন্তু এগুলো জলাতঙ্কের পূর্বলক্ষণ হতে পারে।
মানসিক ও স্নায়বিক লক্ষণ
যখন ভাইরাসটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পৌঁছে যায়, তখন রোগীর মধ্যে মানসিক ও স্নায়বিক লক্ষণগুলো দেখা দেয়। রোগী অনেক সময় বিভ্রান্ত বা উত্তেজিত হয়ে পড়তে পারেন। পাশাপাশি অস্থিরতা অনিদ্রা এবং অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে হ্যালুসিনেশন বা কল্পনা প্রসূত জিনিস দেখার প্রবণতা দেখা যায়। এছাড়াও জলাতঙ্কে আক্রান্ত ব্যক্তির গলার পেশিতে অস্বাভাবিক সংকোচন দেখা দেয় যা থেকে জল ভীতির মতো উপসর্গ তৈরি হয়।
হাইড্রোফোনিয়া
জলাতঙ্কের সবচেয়ে ভয়াবহ লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি হলো জলভীতি। জলাতঙ্কে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পানি পান করতে চাইলেও করতে পারেন না কারণ পানি দেখলেই গলার পেশিগুলোতে অস্বাভাবিক সংকোচন ঘটে। এই সংকোচনের ফলে পান করার সময় মারাত্মক কষ্ট হয় এবং রোগী পানি থেকে ভয় পেতে শুরু করে।
পক্ষাঘাত ও কোমা
জলাতঙ্কের পরবর্তী পর্যায়ে রোগীর শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। রোগী ধীরে ধীরে পুরো শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে। স্নায়ুতন্ত্রের উপর মারাত্মক আঘাতের কারণে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
জলাতঙ্কের লক্ষণ একবার দেখা দিলে তা প্রায়শই প্রাণঘাতী হয়। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। কোনো প্রাণীর কামড় খেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং জলাতঙ্কের টিকা গ্রহণ করতে হবে। একই সাথে পোষা প্রাণীকে নিয়মিত টিকা দেওয়া জরুরি যাতে তারা জলাতঙ্কে আক্রান্ত না হয়। জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম
আরো পড়ুন:- herbazyl এর কাজ কি
টিকা দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সীমা থাকলেও সময়মতো টিকা না দিলে রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। সাধারণত কামড়ানোর পর ৫টি ডোজে র্যাবিস টিকা দেওয়া হয়। প্রথম ডোজটি দিতে হবে যত দ্রুত সম্ভব এবং পরবর্তী ডোজগুলো নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী দেওয়া হয় (৩, ৭, ১৪, এবং ২৮ তম দিনে)।
রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়ার সঠিক নিয়ম নিয়ম
আপনি যদি বিড়ালের কামড় খেয়ে থাকেন তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে একজন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে মূলত বিড়াল কামড়ালে রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়া হয় আর এই ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনার জানা থাকাটা খুব জরুরী তাই আমরা এখানে রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছি ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন
রেবিস বা জলাতঙ্ক একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ যা আক্রান্ত প্রাণীর কামড় বা লালার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এই রোগটি একবার শরীরে প্রবেশ করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী হয়ে থাকে তাই সময়মতো রেবিস ভ্যাকসিন গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এখানে রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম প্রক্রিয়া এবং তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ভ্যাকসিনের সময়সীমা
রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সময়সীমা। বিড়াল বা কুকুর কামড়ানোর পর যত দ্রুত সম্ভব preferably ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। এই সময়সীমার মধ্যে ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। যদি কামড়ের স্থান গুরুতর হয় বা কামড়ানো প্রাণীটি বেওয়ারিশ হয় তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
ভ্যাকসিনের প্রক্রিয়া
রেবিস ভ্যাকসিন সাধারণত পাঁচটি ডোজে দেওয়া হয়। প্রথম ডোজটি কামড়ের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেওয়া হয়। এরপর পরবর্তী ডোজগুলো দেওয়া হয় ৩, ৭, ১৪, এবং ২৮ তম দিনে। এই সময়সূচি অনুযায়ী ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে শরীরে জলাতঙ্কের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। যাদের আগে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে তাদের জন্য ডোজ সংখ্যা কম হতে পারে।
ভ্যাকসিনের প্রকারভেদ
বাজারে বিভিন্ন ধরনের রেবিস ভ্যাকসিন পাওয়া যায় যেগুলো সাধারণত ডেড ভ্যাকসিন বা অ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিন হিসেবে পরিচিত। ডেড ভ্যাকসিনে ভাইরাসকে মেরে ফেলা হয় যা রোগ প্রতিরোধের জন্য শরীরে রোগ প্রতিরোধক তৈরি করে। অ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিনে ভাইরাসকে কিছুটা সক্রিয় করা হয় যা শরীরকে দ্রুত প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
যদিও রেবিস ভ্যাকসিন সাধারণত নিরাপদ তবে কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় ফোলাভাব ব্যথা এবং কখনো কখনো হালকা জ্বর। তবে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সাধারণত সাময়িক এবং দ্রুত সেরে যায়। যদি ভ্যাকসিন দেওয়ার পর গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
রেবিস ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করা উচিত। প্রথমত যদি কেউ প্রাণী দ্বারা কামড়ানো হয় তাহলে সেই স্থানটি ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত গৃহপালিত প্রাণীদের নিয়মিতভাবে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া এবং বেওয়ারিশ প্রাণীদের সংস্পর্শ এড়ানো উচিত। এভাবে রেবিসের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
রেবিস ভ্যাকসিন একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায় যা জলাতঙ্ক রোগ থেকে রক্ষা করে। এর সঠিক এবং সময়মতো ব্যবহারের মাধ্যমে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমানো যায়। কামড়ানোর পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং ভ্যাকসিনের সময়সূচি অনুসরণ করা জরুরি। জলাতঙ্ক একটি মারাত্মক রোগ তাই প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যাতে কেউ আক্রান্ত না হয়। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে রেবিসের ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।
রেবিস ভ্যাকসিন এর দাম বাংলাদেশে
এছাড়া চিকিৎসকের ফি এবং অন্যান্য পরীক্ষার খরচও এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। তাই সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য স্থানীয় হাসপাতাল বা ক্লিনিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা শ্রেয়। রেবিস ভ্যাকসিনের দাম এবং প্রাপ্যতা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে তাই নিয়মিত আপডেট থাকা প্রয়োজন।
লেখকের শেষ মন্তব্য
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং গৃহপালিত প্রাণীর প্রতি সচেতনতা রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। নিজেদের এবং আপনার প্রিয়জনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই আর্টিকেলটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন তাদেরও স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা অত্যন্ত জরুরি। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url