টাইম ট্রাভেল কি সত্যিই সম্ভব-টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে ইসলামী ব্যাখ্যা

প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম। আশা করি পরিবার-পরিজন নিয়ে সবাই ভালো আছেন।আজকে আলোচনা করব একটি নতুন বিষয় নিয়ে।সেটা হচ্ছে, টাইম ট্রাভেল (সময় ভ্রমণ) কি?টাইম ট্রাভেল কি সত্যিই সম্ভব? এই প্রশ্নগুলো অনেকের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। টাইম ট্রাভেল হচ্ছে ভবিষ্যৎ বা অতীতে ভ্রমণের অনুমান বা কল্পনামূলক কার্যকলাপ। টাইম ট্রাভেল মূলত টাইম মেশিন নামে পরিচিত ধারণা বা অনুমানমূলক ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে অর্জন করা হয়।
টাইম ট্রাভেল কি সত্যিই সম্ভব

আপনারা যদি টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য। এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আলোচনা করব টাইম ট্রাভেল কি, টাইম ট্রাভেল কি সত্যিই সম্ভব, টাইম ট্রাভেল কে আবিষ্কার করেন, টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে ইসলামী ব্যাখ্যা, টাইম মেশিন কি, টাইম মেশিন কি সত্যি সম্ভব ইত্যাদি। এ সকল বিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইলো।

টাইম ট্রাভেল কি:

টাইম ট্রাভেল বা (সময় ভ্রমণ) হল অতীত বা ভবিষ্যতে যেতে পারা। মনে করেন, আপনি আজ থেকে ২০ বছর বা তারও আগের জীবনে ফিরে যেতে চাচ্ছেন অথবা ২০ বছর পরে ভবিষ্যৎ জীবনে যেতে চাচ্ছেন এটাই আসলে টাইম ট্রাভেল। কিন্তু এই কথাটা যতটা সহজ বলে মনে হচ্ছে আসলে কিন্তু ততটা সহজ নয়। টাইম ট্রাভেল নিয়ে৷ বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।

একটি ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে (অতীত, ভবিষ্যৎ) যে বাহনের মাধ্যমে ভ্রমণ করে তাকে টাইম মেশিন বলা হয়। ১৮৯৫ সালে এইচজি ওয়েলস এর একটি উপন্যাস 'দ্য টাইম মেশিন' এর মাধ্যমে টাইম মেশিন ধারণাটির জনপ্রিয়তা লাভ করে।আশা করি বুঝতে পেরেছেন টাইম ট্রাভেল কি। এবার আমরা আলোচনা করব টাইম ট্রাভেল কি সত্যিই সম্ভব।

টাইম ট্রাভেল কি সত্যিই সম্ভব:

টাইম ট্রাভেলের মাধ্যমে মানুষ ভবিষ্যতে যেতে পারবে এবং অতীতে ঘুরে আসতে পারবে ব্যাপারটা খুব মজার তাই না। তার জন্য প্রয়োজন একটি টাইম মেশিন। যে বাহনের মাধ্যমে আপনি অতীত এবং ভবিষ্যতে ঘুরে আসতে পারবেন। টাইম ট্রাভেল সাধারণ কোনো ঘটনা নয় এটি প্রকৃতি বিরোধী। একদল বিজ্ঞানী মনে করেন যে এটি কখনোই সম্ভব নয়। আবার আরেক দল বিজ্ঞানী মনে করেন বর্তমানে এটি সম্ভব না হলেও ভবিষ্যতে তা সম্ভব।

সময় নদীর স্রোতের মতোই বহমান, সময় কখনো উল্টোদিকে প্রবাহিত হয় না। আর আমরা একটু একটু করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আলবার্ট আইনস্টাইন সময় ভ্রমন সম্পর্কে বলেছেন, কেউ যদি আলোর গতিতে ভ্রমণ করে তাহলে ভবিষ্যতে ভ্রমণ করা সম্ভব। তবে ব্যক্তির বয়স পৃথিবীর তুলনায় ধীর হবে, তার গতিতে ভ্রমণ করবে।

অনেক বিজ্ঞানী আবার মনে করেন, যদি আমরা আলোর গতি ১৮৬০০০মাইল প্রতি সেকেন্ডে ট্রাভেল করতে পারি তাহলে আমরা টাইম ট্রাভেল করতে সক্ষম হব। আইনস্টাইনের সূত্র মতে, "কোন বস্তু যতদ্রুত গতিতে চলবে তার সময় তত স্থির থাকবে"। অর্থাৎ আপনি যদি আলোর বেগে চলতে থাকেন তবে আপনার জন্য সময় ধীর হয়ে যাবে।
টাইম ট্রাভেল কি সত্যিই সম্ভব

তাই আমরা এটা বুঝতে পারি যে টাইম ট্রাভেল করতে গেলে এমন একটি টাইম মেশিনের দরকার যা আলোর গতির সাথে চলতে পারে। কিছুদিন আগে বিবিসি খবরে জানানো হয় University of Connecticut এর পদার্থবিদ্যার প্রফেসর রন ম্যালেট একটি ডিভাইস বানিয়েছেন যার মাধ্যমে টাইম মেশিন বানানো সম্ভব হবে বলে তিনি দাবি করেন। কিন্তু আদৌ এটি সম্ভব কিনা সে সম্পর্কে আমরা পুরোপুরি অনিশ্চিত।

টাইম ট্রাভেল কে আবিষ্কার করেন:

টাইম ট্রাভেল কে আবিষ্কার করেন এটা আসলে সেভাবে বলা যায় না। তবে ১৮১৯ সালে ওয়াশিংটন আভিংয়ের 'রিপ ভ্যান উইংক্যাল'বেশ সাড়া ফেলেছিলেন। রিপ ভবঘুরে টাইপের ছিলেন স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করতেন এবং সংসারের ঝামেলা ছেড়ে তার পোষা কুকুর নিয়ে পর্বতের দিকে রওনা দেন। সেখানে এক কাঠবিড়ালি কে অনুসরণ করতে করতে পর্বতের চূড়ায় গিয়ে পৌঁছান রিপ।সেখানে তার দেখা হয় কিছু দাড়িওয়ালা অদ্ভুত লোক এর সঙ্গে।

তাদের কাছে থাকা মদ পান করে ঘুমিয়ে পড়েন রিপ। ঘুম থেকে উঠে দেখেন ২০ বছর গায়েব। তখন থেকেই টাইম ট্রাভেল নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়। তারপর ১৮৯৫ সালে এইচজি ওয়েলস এর একটি উপন্যাস 'দ্য টাইম মেশিন' এর মাধ্যমে টাইম মেশিন ধারণাটির জনপ্রিয়তা লাভ করে। এভাবে কিছু ইতিহাসের মাধ্যমে টাইম ট্রাভেল আবিষ্কৃত হয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত টাইম ট্রাভেল নিয়ে গবেষণা চলছে।এবার নিচের অংশে আমরা টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে ইসলামী ব্যাখ্যা জানব। 

টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে ইসলামী ব্যাখ্যা:

ইসলাম ধর্মকে অনেকে বিজ্ঞানের ধর্ম বলে থাকেন। পবিত্র কুরআনের বিজ্ঞানের অনেক কিছু সমাধান পাওয়া যায়। কুরআনের কোন আয়াত আজ পর্যন্ত ভুল প্রমাণিত হয়নি। বর্তমানে বিজ্ঞানের সবচেয়ে আলোচিত থিওরি হচ্ছে টাইম ট্রাভেল এবং টাইম ডিলেশন। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা এই তিন মাত্রা বরাবর স্থান পরিবর্তন সম্ভব এটা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু সময়ের সাথে স্থান পরিবর্তন অর্থাৎ অতীত বা ভবিষ্যতে ভ্রমণ করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করা হতো।

এটাই মূলত টাইম ট্রাভেল। বিজ্ঞানীদের মতে আলোর গতিতে বা তার থেকে বেশি গতিতে চলতে পারলে সময় ভ্রমণ করা সম্ভব।পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা সূরা আল-মা'আরিজ এর ৪ নং আয়াতে বলেন, ফেরেশতা এবং রুহ আল্লাহর দিকে আরোহন করে এমন একদিনে যা (মানুষের সময় মত) ৫০ হাজার বছর। সুতরাং ফেরেশতারা আল্লাহ তাআলার কাছে যে একদিনে পৌঁছাবে সেই দিন পৃথিবীর সময়ে ৫০ হাজার বছরের সমান। ফেরেশতারা নুরের তৈরি।

নূর মানে আলো। বিজ্ঞানীদের আলোর গতিতে চলার থিওরি পুরোপুরি কুরআনের সাথে মিলে যাচ্ছে । বর্তমানে যে থিওরি পুরো পৃথিবীর বিজ্ঞানকে পরিবর্তন করে দিয়েছে ১৪০০ বছর পূর্বে মহান আল্লাহ তায়ালা তার হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সেই থিওরি প্রয়োগ করেছিলেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বাহনের মাধ্যমে দুনিয়ার সময় এক মুহূর্ত পার হওয়ার আগে লক্ষ লক্ষ বছরের রাস্তা পাড়ি দিয়ে এসেছে।
টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে ইসলামী ব্যাখ্যা

বুখারী, মুসলিম আরো অসংখ্য কিতাবে উল্লেখ রয়েছে নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একটা বাহন দেয়া হয়েছিল যার নাম বোরাক। এই বোরাক দেখতে সাদা লম্বা গাধার চেয়ে বড় এবং খচ্চরের চেয়ে ছোট চতুষ্পদ জন্তু। এই বোরাকের দৃষ্টিশক্তি এত তীক্ষ্ণ ছিল যে সে যেখানে তাকাতো সেখানেই চলে যেত। সেই সময় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডিলেশন এর মাধ্যমে টাইম ট্রাভেল করে এসেছেন। আরো উল্লেখ রয়েছে যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে যাওয়ার আগে ওযু করে নিয়েছিলেন। 

এবং ফিরে এসে দেখেন তার অজুর পানি গড়ে পড়ে যাচ্ছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন এত কম সময়ে তিনি লক্ষ লক্ষ বছরের সময় পাড়ি দিয়ে এসেছেন। তাহলে তার বাহনের গতি সম্পর্কে সকলেই বুঝতে পেরেছেন। বোরাক অর্থ বিদ্যুৎ। যখন মানুষ বিদ্যুতের সাথে পরিচিত হয়নি তখন আমাদের নবী বিদ্যুৎ তথা আলোর থিওরি দিয়ে গেছেন।কোরআনের কথার সাথে আধুনিক বিজ্ঞানের সকল তথ্য মিলে যায়। আশা করি টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে ইসলামী ব্যাখ্যা সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনারা জানতে পেরেছেন।

টাইম মেশিন কি:

টাইম মেশিন হল একটি কাল্পনিক মেশিন যার মাধ্যমে আপনি অতীত বা ভবিষ্যতে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় ঘুরে আসতে পারবেন। বাস্তবে টাইম মেশিন একটি থিওরি বা বৈজ্ঞানিক কল্পনা। টাইম মেশিন সম্পর্কে জানতে হলে মাত্রা বা ডাইমেনশন সম্পর্কে জানা জরুরী। আমরা ত্রিমাত্রিক (থার্ড ডাইমেনশন) পৃথিবীতে বাস করি।

নির্দিষ্ট কিছু স্থান যেমন ঢাকা -সিলেট এটি ত্রিমাত্রিক ডাইমেনশন । আর চতুর্মাত্রিক (ফোর্থ ডাইমেনশন)হল সময় এবং চতুর্মাত্রিক গন্তব্য হচ্ছে অনেক অতীতে অথবা সামনে ভবিষ্যতের দিকে।তার মানে টাইম মেশিন হচ্ছে একটি চতুর্মাত্রিক মেশিন যার মাধ্যমে সময় ও স্থানের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব। আশা করি টাইম মেশিন কি সে সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন। এবার আসুন টাইম মেশিন কি সত্যি সম্ভব সেটা নিয়ে আলোচনা করব।

টাইম মেশিন কি সত্যি সম্ভব:

আলবার্ট আইনস্টাইনের সূত্র মতে কোন বস্তু যত দ্রুত চলবে, তার সাপেক্ষে সময় তত স্থির থাকবে। অর্থাৎ আলোর গতিবেগের সঙ্গে যদি কোন মেশিন চলতে পারে তবেই টাইম ট্রাভেল করা সম্ভব। অর্থাৎ আপনি যদি আলোর বেগের সঙ্গে চলতে পারেন তবে আপনার সময় অনেক ধীর হয়ে যাবে। টাইম মেশিন এমন একটি মেশিন যার মাধ্যমে আলোর গতিবেগের মতো দ্রুতগতিতে অতীত ও বর্তমানে ভ্রমণ করা সম্ভব।

কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে আলোর গতিবেগের চেয়ে দ্রুত গতিতে কোন মেশিন বানানো সম্ভব কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল। আর মানুষের তৈরি সর্বোচ্চ গতির রকেট এখন পর্যন্ত প্রতি সেকেন্ডে ৭ মাইলের মতো গতিতে চলতে পারে। তবে বর্তমানে বিজ্ঞান অনেক উন্নত হয়েছে। ভবিষ্যতে কি কি সম্ভব তা আমরা আগে থেকে বলতে পারি না।

তবে University of Connecticut এর পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক রোনাল্ড ম্যালেড টাইম ট্রাভেল কে বাস্তবায়িত করার জন্য নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন। একটি সার্কেলড লেজারের সাহায্যে ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাকহোলের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তিনি টাইম ট্রাভেল বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছেন। এই ডিভাইসের মাধ্যমে ভবিষ্যতের টাইম মেশিন বানানোর যাবে বলে তিনি দাবি করেন। কিন্তু সেটা সময় সাপেক্ষ। সময় বলে দেবে আসলে টাইম মেশিন সম্ভব কিনা। টাইম মেশিন কি সত্যিই সম্ভব তা নিশ্চিত করে বলার কোন উপায় নেই।

লেখকের শেষ মন্তব্য: টাইম ট্রাভেল কি সত্যিই সম্ভব 

আসলে টাইম ট্রাভেল কোন সাধারণ বিষয় নয়।এটা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা আজও এর সমাধান করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আজ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। টাইম ট্রাভেল কি সত্যিই সম্ভব, টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে ইসলামী ব্যাখ্যা, টাইম মেশিন কি, টাইম মেশিন কি সত্যি সম্ভব ইত্যাদি বিষয়ে আশা করি আপনারা কিছু তথ্য পেয়েছেন। 
আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে অজানা তথ্য জানতে পেরে থাকেন, তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন। এরকম আরো বিভিন্ন শিক্ষামূলক তথ্য পেতে নিয়মিত এই সাইটটি ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url