এগিয়ে আসছে ক্যডেট কলেজ এডমিশন টেস্ট ২০২৫ যা জানা দরকার।
ক্যাডেট কলেজ মানে যেন একটা স্বপ্ন প্রত্যেকটা বাবা মায়ের কাছে। আমার সন্তানকে যদি ক্যাডেট কলেজে পড়াতে পারতাম! এই আকাঙ্ক্ষা অনেক অভিভাবকের মধ্যেই থাকে। কিন্তু কেন ? কেন এই ক্যাডেট কলেজ গুলোর জনপ্রিয়তা ? ক্যাডেট কলেজ এডমিশন টেস্ট পরীক্ষার জন্য কি কি যোগ্যতা এবং কাগজপত্র লাগে, ক্যাডেট কলেজ এডমিশন টেস্ট দিতে হলে একজন বাচ্চাকে কতখানি মেধাবী হতে হয়, ক্যাডেট কলেজ পড়ার সুবিধা, ক্যাডেট কলেজগুলোতে শিক্ষার মান এই যাবতীয় বিষয়ে যদি আপনার জানার আগ্রহ থেকে থাকে, তাহলে আপনি একদম ঠিক জায়গাতে এসেছেন।
এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা ক্যাডেট কলেজ এডমিশন টেস্ট ২০২৫ যা জানা দরকার এবং ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় বাচ্চার যোগ্যতা , কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন এবং কেন এতো জনপ্রিয় এই ক্যাডেট কলেজ গুলো এই সবকিছু নিয়ে আলোচনা করব। আপনার প্রশ্নের উত্তর পেতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
ভূমিকা:
ক্যাডেট কলেজ হল সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত বিশেষ এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে সপ্তম শ্রেণি থেকে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি নেওয়া হয়। বাংলাদেশের মোট ১২ টি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে। তারমধ্যে তিনটি মেয়েদের ক্যাডেট কলেজ এবং নয়টি ছেলেদের ক্যাডেট কলেজ। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ১৯৫৮ সালে।
তৎকালীন সময়ে ইংল্যান্ডের পাবলিক স্কুলের শিক্ষার কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত রেখে ক্যাডেট কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছিল। প্রত্যেক বছর নভেম্বর মাসে ক্যাডেট এডমিশন টেস্ট পরীক্ষার ফরম ছাড়া হয়। আবেদন ফরম পূরণের কাজ চলে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবং জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এডমিশন টেস্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাডেট কলেজ এডমিশন টেস্ট পরীক্ষা প্রস্তুতি, যা যা জানা দরকার এবং কি কি কাগজপত্র লাগে সকল বিষয়ে আমরা এই পোস্টের মধ্যে আলোচনা করব।
প্রার্থীর আবেদনের যোগ্যতা:
- প্রার্থীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- প্রার্থীকে ষষ্ঠ শ্রেণি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
- ১জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে প্রার্থীর বয়স ১৩ বছর ৬ মাস হতে হবে।
- প্রার্থীর উচ্চতা ন্যূনতাবোধ ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি হতে হবে । (ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে)
- প্রার্থীকে অবশ্যই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।
- দৃষ্টিশক্তির ব্যাপারে চশমাবিহীন এক চক্ষুতে ৬/১২,অন্য চক্ষুতে ৬/১৮ পাওয়ার থাকতে হবে।
- দৃষ্টিশক্তির ব্যাপারে চশমা সহ এক চক্ষুতে ৬/৬, অপর চক্ষুতে ৬/৬ পাওয়ার থাকতে হবে।
আবেদন করতে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন:
- প্রার্থীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বা প্রাথমিক ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সত্যায়িত সনদপত্র।
- ইংলিশ মাধ্যমে অধ্যয়নকৃত শিক্ষার্থীদের তাদের প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক পঞ্চম শ্রেণীর উত্তীর্ণের প্রত্যয়ন পত্র।
- প্রার্থীর জন্ম নিবন্ধন বা জন্ম সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
- প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক ষষ্ঠ বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সাল উল্লেখপূর্বক সনদপত্র।
- প্রার্থীর বাবা-মা বা অভিভাবকের আয়ের স্বপক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন পত্র।
- প্রার্থীর মা-বাবা বা অভিভাবকের জাতীয় পরিচয় পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
- প্রার্থীর পাসপোর্ট স্টাম্প সাইজের রঙিন ছবি
ক্যাডেট কলেজ ভর্তি প্রক্রিয়া:
অন্যান্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি প্রক্রিয়ার থেকে ক্যাডেট কলেজ ভর্তি প্রক্রিয়া আলাদা। ক্যাডেট কলেজ গুলো কঠোর ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেমন লিখিত, মৌখিক এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা এ কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয়। ক্যাডেট কলেজগুলোতে শুধুমাত্র সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি সুযোগ দেওয়া হয়। প্রতিটি কলেজে ৫০ টি আসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।কেন এত জনপ্রিয় এই ক্যাডেট কলেজ গুলো:
অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের থেকে ক্যাডেট কলেজে শিক্ষা ব্যবস্থা একটু আলাদা। ক্যাডেট কলেজগুলোতে লেখাপড়ার পাশাপাশি co- curricular এবং extra - curricular activities এর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার সময় ছাত্রদের এভাবে বাছাই করা হয় যেন খুব অল্প সময় লেখাপড়া করে খুব ভালো রেজাল্ট করতে পারে। কেননা ক্যাডেট কলেজগুলোতে ক্যাডেটদের শুধু লেখাপড়া না অলরাউন্ডার হতে শিখায়।
একজন ক্যাডেট খেলাধুলা, বিতর্ক, সাঁতার, বিভিন্ন মঞ্চভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকে। এজন্য তারা সব দিকে পারদর্শী হয়। ক্যাডেটরা কিছু চমৎকার গুন অর্জন করে থাকে যেমন, time management, discipline, well behabar, sense of responsibility, respect, good thinking capability, sense of proportion, carefulness, self dependence ইত্যাদি। এইসব গুণগুলো অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের থেকে ক্যাডেট কলেজের স্টুডেন্টদের একটু তাড়াতাড়ি হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়ানোর ১০ টি কৌশল।
ক্যাডেট কলেজ সেরা হওয়ার পেছনে আরো কিছু কারণ রয়েছে। সেগুলো হলো ক্যাডেট কলেজের বিশেষ সুবিধা সমূহ।যেমন, ক্যাডেট কলেজের বিশাল বড় ক্যাম্পাস এর সুবিধা রয়েছে। প্রত্যেকটা ক্যাডেট কলেজে লাইব্রেরীর ব্যবস্থা রয়েছে এবং কম্পিউটার ল্যাব সহ বিভিন্ন টেকনোলজি সুবিধা রয়েছে। হাসপাতাল মসজিদ, সুইমিং পুল, ট্রেনিং গাউন্ড, জিমনেসিয়াম এবং বিভিন্ন ধরনের খেলার মাঠ রয়েছে এই ক্যাডেট কলেজগুলোতে।
দক্ষ শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রম এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিচরণ ক্ষেত্র এই ক্যাডেট কলেজ গুলো। উন্নত মানের খাবার দাবার দিয়ে ডাইনিং এর বিশেষ সুবিধা চোখে পড়ার মত। জানলে অবাক হবেন প্রত্যেকটা ক্যাডেট কলেজে তাদের নিজস্ব হাসপাতালে সুবিধা রয়েছে। স্টুডেন্টরা অসুস্থ হওয়া মাত্রই তাৎক্ষণিক তাদের ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়। সকল সুবিধার জন্য ক্যাডেট কলেজ গুলো সেরা।
ক্যাডেট কলেজে আসন সংখ্যা:
ক্যাডেট কলেজে আসন সংখ্যা কত? এই প্রশ্নটি অনেকে করে থাকেন। সবার আগে জানাতে চাই বাংলাদেশে মোট ১২ টি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে। এদের মধ্যে তিনটি গার্লস ক্যাডেট কলেজ এবং নয়টি বয়েজ ক্যাডেট কলেজ। প্রত্যেক বছর লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ক্যাডেট কলেজ এডমিশন টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রতিবছর ১২ টি ক্যাডেট কলেজের জন্য আসন সংখ্যা থাকে ৬০০ টি । এদের মধ্যে ১৫০ টি আসন মেয়েদের।
এবং ছেলেদের জন্য ৪৫০ টি আসন সংখ্যা বরাদ্দ থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষা অন্যতম। গড়ে প্রায় ৮০ জন বাচ্চা লড়াই করে ১ টি আসনের জন্য। বাংলাদেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ক্যাডেট কলেজ অন্যতম। বর্তমানে ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রতিযোগিতা দিন বেড়েই চলেছে।
ক্যাডেট পরীক্ষার সময় কত:
ক্যাডেট পরীক্ষার সময় কত? এই প্রশ্ন অনেকেরই জানা আবার অনেকেরই অজানা। আজকে আপনাদের জানাতে চলেছি ক্যাডেট ভর্তি পরীক্ষার সময় কতক্ষণ দেওয়া হয়। প্রথমে বলে দিতে চাই ক্যাডেট ভর্তি পরীক্ষার বিষয় সম্পর্কে। ক্যাডেট ভর্তি পরীক্ষা মূলত চারটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। ইংরেজি, গণিত, বাংলা এবং সাধারণ জ্ঞান।
ইংরেজি ১০০, গণিত ১০০,বাংলা ৬০ এবং সাধারণ জ্ঞান ৪০ মার্ক এর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৩০০ মার্কের পরীক্ষার জন্য সময় দেওয়া হয় তিন ঘন্টা। এই তিন ঘণ্টার মধ্যে ৩০০ মার্কের লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
ক্যাডেট কলেজ গুলোর উদ্দেশ্য কি:
- ক্যাডেটদের সশস্ত্র বাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
- ক্যাডেট কলেজ গুলোর উদ্দেশ্য হলো একটি ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করা। যা শারীরিক, নৈতিক এবং সামাজিক বিকাশ কে একত্রিত করে।
- একটি সুপরিকল্পিত একাডেমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্যাডারদের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করে। যাতে করে তারা বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
- ক্যাডেটদের মধ্যে নৈতিকতা, দায়িত্ব, নেতৃত্বের গুণাবলী, সততা, শৃঙ্খলা, দেশ প্রেমের প্রেরণা ইত্যাদি সকল বিষয়কে বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা।
- ক্যাডেট কলেজ গুলোর উদ্দেশ্য হলে সুশৃংখল, নিবেদিত এবং আত্মত্যাগী তরুণ নাগরিক প্রতিষ্ঠা করা। যারা বিশ্বব্যাপী যোগ্য হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করে।
- উচ্চ মানের যোগাযোগ দক্ষতা বিকাশের জন্য ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ, ব্যায়াম, আত্মবিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
- ক্যাডেটদের শারীরীক প্রশিক্ষণ, খেলাধুলা, সংস্কৃতি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করানো হয়। ক্যাডেট কলেজ গুলোভারসাম্যপূর্ণ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত জন্য একটি খাদ্য কর্মসূচি পালন করে থাকে।
লেখক এর ইতিকথা:
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ক্যাডেট কলেজ একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ক্যাডেট কলেজ হতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা জাতির উন্নয়ন ও দেশের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ক্যাডেট কলেজ গুলো শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সামগ্রিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করে। তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা,দেশপ্রেম, নেতৃত্ব এবং সেবার মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলে।
আজ এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা ক্যাডেট কলেজ এডমিশন টেস্ট এর জন্য যা জানা দরকার সে সকল বিষয়ে আলোচনা করেছি। আপনারা যদি তথ্যগুলো পেয়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনজনদের সঙ্গে শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন। এরকম আরো শিক্ষামূলক তথ্য জানার জন্য নিয়মিত এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url