তিতির মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, আপনারা পরিবার পরিজনদের নিয়ে সবাই
ভালো আছেন। আমরা আজকেও বিগতদিনগুলোর মত একটি প্রয়োজনীয় টপিক নিয়ে আপনাদের সামনে
হাজির হয়েছি। তিতির মুরগি কত দিনে ডিম দেয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য
আলোচনা করবো। আপনারা হয়তো অনেকেই এই সম্পর্কে জানার জন্য গুগলে প্রতিনিত সার্চ
করে থাকেন। তাই আমরা এই পোষ্টিতে এ বিষয়ে আপনাদের ক্লিয়ার ধারণা দিয়ে দিব।
আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে শেষ অবদি থাকেন, তাহলে তিতির মুরগি কত দিনে ডিম
দেয়? এই সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি তিতিরের বিভিন্ন জাত, পুরুষ ও স্ত্রী
তিথির চেনার উপায়, তিতির পালন পদ্ধতি, তিতিরের খাদ্য তালিকা, তিতির মুরগী
পালনের সুবিধা ও অসুবিধা ইত্যাদি সহ তিতির মুরগী সম্পর্কে আরো বিভিন্ন
প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য জেনে নিতে পারবেন। তাই অবহেলা না করে সম্পূর্ণ পোস্টটি
একেবারে শেষ অবদি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।
ভূমিকা - তিতির মুরগি
আপনার অনেক খামারি রয়েছেন যারা তিতির মুরগী পালনের কথা চিন্তা ভাবনা করছেন
কিন্তু এই মুরগীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে আপনাদের জানা
নেই। এজন্য আমরা এই পোষ্টটিতে এই মুরগীর পালন পদ্ধতি ও খাবার তালিকাসহ
বিভিন্ন জরুরি দিকগুলো আলোচনা করেছি। আমরা এই মুরগী সম্পর্কে আপনাদের এমন
কিছু জরুরি তথ্য প্রদান করার চেষ্টা করব যার মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবেন বলে
আশাবাদী।
আরো পড়ুনঃ ককাটেল পাখি বছরে কতবার ডিম দেয় জেনে নিন।
তাই যেসব খামারীরা এই মুরগী পালন করেন অথবা ভবিষ্যতে নিজের খামারে তিতির
মুরগি লালন করার চিন্তাভাবনা করছেন তাদের প্রত্যেকেরই আজকের আলোচ্য বিষয়
গুলো জেনে রাখাটা অনেক জরুরী। কেননা আপনি যখন কোনো মুরগী পালন করবেন বা
পালন করার চিন্তা করবেন তার আগে আপনাকে অবশ্যই সেই মুরগীর সম্পর্কে খুঁটিনাটি
বিষয়গুলো জেনে নিতে হবে।
এতে করে আপনাদের পরবর্তীতে অনেক সহায়ক হবে বলে এবং পাশাপাশি আপনি আপনার
পরিচিত খামারীদের কেউ এই মুরগীর বিষয়ে অবগত করতে পারবেন। তাহলে আসুন, আর
বেশি কথা বাড়াব না, বরং এখন আমরা মূল আলোচনা শুরু করব। প্রথমে আমরা তিতিরের
বিভিন্ন জাত সম্পর্কে জেনে নিব।
তিতির মুরগীর জাত
আপনারা অনেকেই হয়তো তিতির মুরগীর জাত সম্পর্কে জানা নেই। আপনি যদি পোষ্টের এই
অংশ মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে এই মুরগীর জাতগুলো সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন। তিতির
মুরগী মূলত পালকের রঙের উপর ভিত্তি করে মোট ৩টি ভাগে ভাগ করা হয় যেমন-
পাল ভ্যারাইটিদের পালক ধূসর হয়ে থাকে। এছাড়া পালকে সাদা ফোটা ফোঁটা দাগও
থাকে। পাল ভ্যারাইটির সাথে লেভেন্ডার এর বেশ মিল রয়েছে। কিন্তু পালকের রং
সামান্য ধূসর হয়ে থাকে। সাদা ভ্যারাইটি-এই তিতির পাখির ক্ষেত্রে এদের পালক
সাদা ও এদের এর পালকে কোন দাগ থাকেনা।
সাধারনত তিতির মুরগীর জাত হিসেবে উপরের উল্লখিত ৩ টি ভাগে বিভক্ত করা হয় বা
সকলেই এই ৩টি জাত হিসেবে চেনে। তাহলে আশা করছি তিতির মুরগীর জাত সম্পর্কে জানতে
পেরেছেন। এবার চলুন, মেল ও ফিমেল তিথির চেনার উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
মেল ও ফিমেল তিথির চেনার উপায়
অনেকেই তিথির পাখি পালন করে থাকে কিন্তু জানে না কিভাবে
তিথির পাখির মেল ফিমেল চেনা যায়। চলুন চেনার উপায়গুলো জেনে নেওয়া
যাক। প্রথমে আমরা মেল তিথির মুরগী চেনার উপায়গুলো জানবো। মেল
তিথির চেনার সহজ ৩টি উপায় রয়েছে তা হল, মেল তিতিরের হেলমেট সুউচ্চ ও
মাথার মাঝখানে থাকে এবং ওয়াটলস বেশ বড় হয়ে থাকে।
এছাড়াও মেল তিতির মুরগী ফিমেল তিতির মুরগীর তুলনায় অনেক বেশি একটিভ
হয়। এবার ফিমেল তিথির পাখি চেনার উপায় জানবো। ফিমেল তিতির মুরগীর
হেলমেট তুলনামূলক ছোট হয় ও মাথার সামনের দিকে থাকে এবং
এদের ওয়াটলস বেস্ট ছোট হয়ে থাকে। যা দেখে অনেক সহজেই বোঝা যায়
যে এটি একটি ফিমেল তিতির মুরগী। তাহলে আশা করছি আপনারা এখন সহজেই মেল ও ফিমেল
তিথির চেনার উপায় জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, তিতির মুরগি কত দিনে ডিম
দেয় তা জেনে নেই।
তিতির মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
তিতির মুরগি কত দিনে ডিম দেয়? তা আপনারা অনেকেই গুগলের কাছে জানতে চেয়ে
থাকেন। আমরা অনেকেই হয়তো জানি যে তিতির মুরগি গরমের সীজনে ডিম পাড়ে। তিতির
মুরগি ডিম পাড়তে মূলত প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস অবদি সময় লাগতে পারে তবে
অনেকের ক্ষেত্রে কম বেশিও হতে পারে।
কেননা তিতির মুরগীর খাদ্যাবাস থেকে শুরু করে সুস্বাস্থ্য এমনকি পরিবেশ
পরিছন্নতার উপর ভিত্তি করে ডিম পাড়া কম বেশি হতে পারে। এছাড়া অনেকেই তিতির
মুরগির ডিম বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ঔষধ এবং খাদ্য ব্যবহার করে থাকে। তিতির
মুরগির ডিম প্রায় মুরগির ডিমের মতোই দেখতে কিন্তু ডিমের খোসা অন্যান্য সকল
ডিমের তুলনায়মোটা হয়ে থাকে।
এই মুরগীর দিমের খোসা দেখতে হালকা কালছে রঙের হয়ে থাকে। ধারনা করা হয় তিতির
মুরগি বছরে ২০০ থেকে ২৫০ টি ডিম দিয়ে থাকে এই মুরগি প্রায় ২ থেকে ৩ বছর
পর্যন্ত ডিম পাড়ে। তারপরে ধীরে ধীরে ডিম দেওয়ার প্রবণতা কমতে শুরু করে। আশা
করছি আপনার প্রশ্নের উত্তরটি জানতে পারলেন।
তিতির মুরগীর খাদ্য তালিকা
তিতির মুরগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন। তাই আমরা
পোষ্টের এই অংশে এর খাদ্য তালিকা তুলে ধরেছি। চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে
নেওয়া যাক। এই তিতির মুরগী মূলত নানান বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকে যেমন-
- ধান
- গম
- কচি ঘাস
- পোকামাকড়
- ঘাসের বিচি
- ভুট্টা ভাঙ্গা
- ধানের কুড়া
- ভাত ইত্যাদি।
তবে এছাড়াও আবদ্ধ ও অর্ধমুক্ত পালন করার ক্ষেত্রে লিয়ার বা বয়লার মুরগির
খাবার খাওয়ানো হয়। এই মুরগি দিনে প্রায় দৈনিক ১০০ থেকে ১৩০ গ্রাম খাবার
খায়। আশা করছি তিতির মুরগীর খাদ্য তালিকা গুলি জানতে পেরেছেন।
তিতিরের রোগ, ভ্যাকসিন ও প্রতিকার
তিতির পালনে কিছু রোগ বালাই দেখা দেয়। তার মধ্যে কয়েকটি জটিল রোগ হল
কৃমি, গোল উকুন, রক্ত আমাশয় ইত্যাদি। আমাদের দেশের মুরগিদের
রানীক্ষেত রোগটি বেশি হয়। তাই সতর্কতার জন্য তিতির মুরগীকে রানীক্ষেত
রোগের টিকা প্রদান করতে হবে। তবে রোগাক্রান্ত পাখিকে টিকা দিবেন
না।
খোড়া পাঃ হ্যাচারি হতে বের করার পরই এটি দেখা দিতে পারে। এমনকি
তিতিরের বাচ্চা অসুস্থ হওয়ার পরে এলোমেলো ভঙ্গিতে হাঁটতে পারে।
এমতবস্থায় তাদের আলতোভাবে চিকন পাইপ দিয়ে ভালোভাবে পা আটকে দিলে সেই
বাচ্চাগুলো ভালো হয়ে যায়।
রক্ত আমাশয়ঃ রক্ত আমাশয় মূলত প্যারাসিতিক রোগ। এটি প্রোটোজোয়ান
প্যারাসাইট কর্তৃক তৈরি হয়। গিনি ফাউল এর খাবারের পানিতে ড্রপিংস
নামক একটি উপাদান পাওয়া যায় যা থেকে দ্রুত রক্ত আমাশয় এই মুরগীর গায়ে
ছড়িয়ে পড়ে। একটি তিতির পাখি অসুস্থ হয়ে গেলে বাকি সব পাখিদের দ্রুত
সরিয়ে নিতে হবে। কেননা অসুস্থ তিতিরের সংস্পর্শে এলে সুস্থরাও আক্রান্ত
হতে পারে। তবে অতিরিক্ত জটিল সমস্যা লক্ষ্য করলে যথাসম্ভব চিকিৎসকের
পরামর্শ নিতে হবে।
তিতির পালনে কি লাভজনক হওয়া যায়?
তিতির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পাখি। তাছাড়া এর বাজার মূল্য
হাঁস মুরগির চেয়ে অনেক কম। তাই সহজেই কেউ এটি লালন-পালন করে লাভবান হতে
পারবেন। আবার দেশী মুরগীর চেয়ে তিতিরের ওজন বেশি হয়ে থাকে। যেখানে
দেশি মুরগির ওজন ৬ মাসে সর্বোচ্চ ১ কেজি হয়ে থাকে সেখানে এই মুরগীর ওজন
প্রায় দেড় থেকে দুই কেজি ওজন হয়ে থাকে। আবার দেশি মুরগি বছরে ৪০ থেকে
৫০ টা ডিম দেয়, অপরদিকে তিতির মুরগি বছরে ৯০ থেকে ১০০ টি ডিম
দিয়ে থাকে।
তিতির পালনের সুবিধা ও অসুবিধা
তিতির পালনের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে অনেকের মাঝেই বিভিন্ন রকম প্রশ্ন
জাগে। বা তারা তিতির মুরগী পালনের সুবিধা কি কিংবা অসুবিধা কি সেগুলো
জানতে চায়। তা এ পর্যায়ে আমরা তিতির মুরগী পালনের সুবিধা ও অসুবিধা
সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিব।
তিতির পালনের সুবিধা
- এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।
- প্রাকৃতিক খাদ্য খায় এজন্য ভরন পোষন বা খাদ্য খরচ কম।
- এটি পালনের ভালো মানের বাসস্থান দরকার হয় না।
- বেশি সরঞ্জামের দরকার হয় না।
- এর ডিম খুব সহজে ভাঙ্গে না।
- এটি পালনের খরচ ও ঝুঁকি উভয়ই অনেক কম।
- এরা পরিবেশের সাথে সংবেদনশীলতা বজায় রাখে।
- এদের বাসা বাড়িতে পালন করা অনেক সহজ ইত্যাদি।
তিতির পালনের অসুবিধা
- তিতির মুরগীর বাচ্চার মৃত্যুর হার তুলনামূলক বেশি।
- তিতির মুরগী তার বাচ্চার যত্ন নেয় না।
- মুক্ত অবস্থায় পালন করলে লুকিয়ে ডিম পাড়ে।
এরা ঝোপ জঙ্গল পছন্দ করে যার ফলে কুকুর, বাজ পাখি, শিয়াল, বেজি ইত্যাদি
এদের ধরে খেয়ে নেয়।
লিটারে পালন করলে এর বাচ্চাগুলো লিটারের ময়লা খেয়ে ফেলে যার ফলে পেটে
অনেক সমস্যা হয়।
তিতির মুরগীর খাঁচায় পালন করলে তারা খুব এগ্রসিভ হয়ে ঠোকাঠুকি করে।
লেখকের ইতিকথাঃ তিতির মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
আমরা ইতিমধ্যে তিতির মুরগি কত দিনে ডিম দেয় এবং তিতির
মুরগি সম্পর্কে আরো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য
আলোচনা করেছি। আপনারা এতক্ষণে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে এই সম্পর্কে বিস্তারিত
জানতে পেরেছেন। তবে এই বিষয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন কিংবা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে
কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আমাদের আজকের লেখা তিতির মুরগি এর বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কিত আর্টিকেলেটি
আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার প্রিয়জনজদের সাথে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে
তারাও তিতির মুরগি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জানতে সক্ষম হবেন। বিভিন্ন
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে হলে আমাদের সাইটটি
নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url