জাফরান সাবান এর উপকারিতা এবং আসল জাফরান সাবান চেনার উপায়
জাফরান সাবান এর উপকারিতা এবং জাফরান সাবান আসল নকল চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু কোথাও কোন উপযুক্ত তথ্য পাচ্ছেন না। আমানাদের সুবিধার্থে আজকের এই আর্টিকেলটি। যেখানে জাফরান সাবান এর উপকারিতা এবং জাফরান সাবান আসল নকল চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়া জাফরান সাবান ব্যবহারের নিয়ম এবং জাফরান সাবান দাম কত সে সম্পর্কে বলা হয়েছে। সময় দিয়ে সাথেই থাকুন।
ভূমিকা: জাফরান সাবান এর উপকারিতা
আমরা মূলত জাফরান চিনি একধরনের মসলা হিসেবে। কিন্তু জাফরান কেবলমাত্র মসলা জাতীয় খাবারই নয়। এটি ত্বকের যত্নেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে বহুবছর আগে থেকে। জাফরানের প্রকৃতিক উপাদান সমূহ আমাদের ত্বকের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ পছন্দের সেরা তিনটি ব্রাইটেনিং সিরাম
জাফরানকে অনেকেই লাল সোনা বলে থাকে। জাফরান মূলত তার সুঘ্রাণ ও তার ঐতিজ্যবাহী রঙ্গের জন্য আমাদের সকলের কাছে অনেক বেশি পরিচিত ও বিখ্যাত। সেই জাফরান দিয়েই তৈরী হয় জাফরান সাবান। যেটি ব্যবহারে আমাদের ত্বকের নানা সমস্যার হয় এবং ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়।
জাফরান সাবান এর উপকারিতা
জাফরান এমন একটি সাবান যার বহুমুখী উপকারিতা রয়েছে। জাফরান সাবানে মূলত প্রাকৃতিক জাফরান ব্যবহারের পাশাপাশি নানা ধরনের পুষ্টিকর উপাদান ব্যবহার করা হয়। যার ফলে জাফরান সাবানের কার্যকারিতা আরো বৃদ্ধি পায়। নিম্নে কিছু জাফরান সাবান এর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ত্বকে উজ্জ্বলতা প্রদান করে: জাফরানে একধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা মানব দেহের মৃত কোষ গুলোকে উৎজীবিত করে, নতুন কোষের সৃষ্টি করে, যার কারণে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়। ত্বক থেকে ক্ষতিকর সকল ব্যবটেরিয়া নিরাময় করতে সাহয্য করে। তাই উজ্জল ত্বকের জন্য জাফরান সাবান ব্যবহার করা হয়।
আরো পড়ুনঃ রূপচর্চা করতে কাজে লাগান এই ১৫ টি উপাদান
ত্বকের দাগ দূর করে: আমাদের প্রায় সকলের মুখে ব্রণের দাগ বা অন্য কোন দাগ থাকে। যা আমাদের অনেকের কাছেই বিরক্তির কারণ। এই ত্বকের দাগ থেকে মুক্তি পেতে আপনি জাফরান সাবান ব্যবহার করতে পারেন। কারণ জাফরান সাবানে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য। যা ত্বকের লালচে ভাব দূর করা সাথে সাথে দাগ দূর করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
ত্বকের কমলতা ও মসৃণতা বজায় রাখে: আমাদের অনেকেরই বয়স হওয়ার আগেই ত্বক কুচকে যায়, ত্বকের যে টান টান ভাব সেটা চলে যাওয়ার সাথে সাথে ত্বক হয় রুক্ষ। এটি হয় মূলত আমাদের ত্বকে ফাইন লাইন এবং রিঙ্কেল বৃদ্ধি হওয়ার কারনে। এসকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জাফরান সাবান বেশ উপকারি।
জাফরান সাবান ব্যবহারে ত্বক থেকে ফাইন এবং রিঙ্গেল অনেকটা কমে যায়। জাফরান সাবান ত্বকের কোষগুলোকে পুষ্টি জুগিয়ে ত্বকের টান টান ভাব ফিরে আসে এবং ত্বক মসৃন ও কমল। তাই ত্বকের কমলতা ও মসৃণতা বজায় রাখতে জাফরান সাবান ব্যবহার করা উচিত।
ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে: নিয়মিত জাফরান সাবান ব্যবহারে ত্বকের প্রাকৃতিক আদ্রতা ধরে রাখে, ফলে আমাদের ত্বক শুষ্ক হওয়ার সম্ভবনা অনেক কম থাকে। এছাড় জাফরানে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। যার কারনে ত্বক অনেক ভালো থাকে।
ত্বকে থাকা দাগ এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে: আমাদের অনেকের মুখে ছোট ছোট গর্ত দেখা যায়। এছাড়া বিভিন্ন লালচে ভাব হওয়ার কারণে ত্বকে অনেক প্রদাহ বা ব্যথা হয়। এই সমস্যা সমাধানে জাফরান সাবান ব্যবহার করা উচিত। কারণ নিয়মিত জাফরান সাবান ব্যবহার করা ফলে, ত্বকে থাকা ছোট ছোট গর্ত পূরন হয় এবং ত্বকে থাকা সকল ব্যথা নিরাময় করতে সাহায্য করে।
জাফরান সাবান আসল নকল চেনার উপায়
আমাদের সকলের উচিত, জাফরান সাবান আসল নাকি নকল সেটা চেনা। আসল নকল এই জন্য চেনা গুরুত্বপূর্ণ কারণ- আমরা যদি আসল সাবানের জায়গায় নকল সাবান ব্যবহার করি তাহলে আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই আমাদের আসল জাফরান সাবান ব্যবহার করা উচিত। জাফরান সাবান আসল নকল চেনার কিছু উপায় রয়েছে চলুন জেনে নেই-
রং এবং গন্ধ পরিক্ষা: আসল জাফরান সাবানে প্রকৃতিক জাফরানের গন্ধ পাওয়া যায়। যেই গন্ধ হয় একদম মৃদু। আর নকল জাফরান সাবানে কৃত্রিম উপায়ে জাফরানের গন্ধ নিয়ে আসা হয়। যেই গন্ধ অনেকটা তীব্র হয়ে থাকে এবং এর বং হয় জাফরানের আসল রং থেকে অনেকটাই গাঢ়।
আরো পড়ুনঃ চুল লম্বা করতে মেথির ব্যবহার
প্যাকেট দেখে ক্রয়: জাফরান সাবান কিনার আগে অবশ্যই সেই সাবানের প্যাকেটের গায়ে উৎপাদন তালিকা ধেকে দেখে নিবেন এতে জাফরান রয়েছে কি না। যেটির প্যাকেটে জাফরান উল্লেখ থাকবে, সেটি আসল। এছাড়া যেই প্যাকেটের গায়ে জাফরান উল্লেখ থাকবে না সেটি নকল। তবে কিছু কিছু জাফরান সাবানের প্যাকেটে জাফরান ফ্লেভার লেখা থাকলে সেটি ও নকল বলে গণ্য হবে।
পানিতে মিশিয়ে পরিক্ষা: জাফরান আসল নাকি নকল তা পরিক্ষা করা জন্য একটি পরিষ্কার পাত্রে অল্প পরিমান পানি নিন এবং তাতে এক টুকরো জাফরান সাবান মিশিয়ে দেখুন। যদি জাফরান ধীরে ধীরে পানিতে মিশতে শুরু করেছে এবং হলুদ রং বের হওয়ার সাথে সাথে পানি তাপমাত্রা ও বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
আর পানিতে জাফরান সাবান দেওয়ার পর যদি, সবান গলে হলুদ রং না ছাড়ে এবং পানির তাপ মাত্রা না বাড়ে তাহলে বুঝতে হবে এটি নকল জাফরান সাবান। তাই জাফরান সাবান কেনার আগে অবশ্যই তা পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করবেন। নয়তো সাবান ব্যবহারে আপনার যে উপকার হতো তার বদলে ক্ষতি হবে।
জাফরান সাবান ব্যবহারের নিয়ম
আমরা অনেকেই জাফরান সাবানের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে তা ক্রয় করি। কিন্তু কিভাবে ব্যবহার করলে উত্তম ফলাফল পাওয়া যাবে তা আমাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক লোকজনই জানেন। আজকে আমি আলোচনা করবো কিভাবে জাফরান সাবান ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো হয় বা উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়। আসুন জানি জাফরান ব্যবহারের নিয়ম-
- আমাদের কারোর ত্বক শুষ্ক আবার কারো ত্বক তৈলাক্ত হয়ে থাকে। তাই আপনার ত্বকের সাথে মানান সই সাবান বেঁচে নিন। জাফরান সাবানের নানা ধরনের হয়ে থাকে। তাই সেখান থেকে আপনার ব্যবহার উপযোগী সাবান নেয়া উচিত।
- ত্বক সাবান ব্যবহারের পূর্বে ত্বক অবশ্যই ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিন। তার জন্য হালকা গরম পানির ঝাপটা দিতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকে থাকা ময়লা ধূলাবালি এবং তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যাবে।
- এরপর সাবানটি ব্যবহার করুন। প্রথমে সাবানটি হাতে নিয়ে ফেনা তৈরী করুন। ফেনা তৈরী হয়ে গেলে আলতো করে মুখে লাগিয়ে নিন। মুখে লাগানোর সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে চোখ, নাক এবং মুখের ভিতরে সাবান প্রবেশ না করে।
- ভালোভাবে সাবান লাগানোর পরে হালকা করে আপনার ত্বক ম্যাসাজ করুন। যাতে করে আপনার ত্বকে থাকা সকল ময়লা চলে যায় এবং সাবানের উপকারি গুলো ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। গরম পানি ও ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনার ত্বক যদি শষ্ক হয়, তাহলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। এতে করে আপনার ত্বক ভালো থাকবে। এভাবে নিয়মিত জাফরান সাবান ব্যবহার করতে পারেন। জাফরান সাবান প্রতিদিন একবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।
জাফরান সাবান দাম - জাফরান সাবান price in bangladesh
জাফরান সাবানের দাম খানিকটা নির্ভর করে আপনি কোন ব্রান্ডের সাবান কিনবেন? এর গুনগত মান কেমন এবং সাবানটি কোয়ায় তৈরী হয়েছে তার উপর দাম নির্ভর করে। যদি দেশীয় কোন জাফরান সাবান হয় তাহলে দাম একরকম হবে। আবার সাবানটি যদি বাহিরের কোন দেশের হয় তাহলে তার দাম আলাদা হবে।
আপনি যদি লোকল কোন মার্কেট থেকে ক্রয় করে তাহলে একদাম হবে আবার সেটি যদি কোন সুপার মার্কেট থেকে ক্রয় করেন, তাহলে তার দাম ভ্যাটসহ আলাদা হবে। এছাড়া হাতে তৈরী জাফরান সাবানের দাম অন্যান্য জাফরান সাবানের চেয়ে দাম বেশি হয়ে থাকে। তাই দাম নির্ভর করে খানিক টা জায়গা এবং পোডাক্টের উপর। নিম্নে কিছু জাফরান সাবানের দাম দেওয়া হলো-
Cosprof Saffron Soap -108gm Premium (Handmade): এই জাফরান সাবানটি আপনি দারাজে পেয়ে যাবেন। তাদের রিভিউ অনেক ভালো রয়েছে, আপনি চাইলে সাবানটি নিতে পারেন। এই সাবানের দাম - ২৯৮ টাকা।
Premium Handmade Saffron Soap - 80 gm: এই জাফরান সাবানটি অর্গানিক স্টোর বিডি ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন। তাদের দাবি সাবানটি সম্পূর্ন প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী করা হয়েছে। আমেরিকা এবং ফ্রান্সে তাদের এই পণ্য বিক্রি হয়ে থাকে। এই ৮০ গ্রাম সাবানের দাম - ৬৫০ টাকা।
Cosprof Rose Saffron Soap 108 gm Premium (Handmade): এই জাফরান সাবানটি ও দারাজে পেয়ে যাবেন। এখানে ও রিভিউ অনেক ভালো রয়েছে। এই সাবানটির দাম - ২৯৯ টাকা।
এছাড়া ও বিভিন্ন সুপারশপে এই সাবান পেয়ে থাকবেন। তবে যেকোন জায়গা থেকে জাফরান সাবান কিনুন না কেনো, কেনার পূর্বে অবশ্যই দেখে নিবেন সাবানটি আসলেই জাফরান দিয়ে তৈরী কিনা। বর্তমানে সময়ে অনেক চক্র রয়েছে যারা জাফরান সাবান বললেও আসলে তা জাফরান দিয়ে তৈরী সাবান না। কোন জাফরান সাবান সম্পর্কে না জেনে ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে করে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
লেখকের মন্তব্য: জাফরান সাবান এর উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, এতক্ষনে জাফরান সাবান এর উপকারিতা জানার পাশাপাশি জাফরান সাবান আসল নকল চেনার উপায় সম্পর্কে ও জানতে পেরেছেন। এছাড়া জাফরান সাবান ব্যবহারের নিয়ম জাফরান সাবানের দাম সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। যদি আসল জাফরান সাবান ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আপনার ত্বক হবে লাবণ্যময়।
তাই বাজার যাচাই করে আসল জাফরান সাবান কেনার চেষ্টা করুন। এতক্ষন আমাদের পাশে থাকায় এবং আপনার মূল্যবান সময় নিয়ে আর্টিকেলটি পড়ায় আপনাকে সুস্বাগতম। এইরকম পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। এছাড়া কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url