আপেল সিডার ভিনেগার কোনটা ভালো এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন

আপেল সিডার ভিনেগার কোনটা ভালো হবে এবং আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম নিয়ম সম্পর্কে জানতে চেয়ে আর্টিকেলটিতে ক্লিক করেছেন। আমি রাবেয়া আছি আপনাদের সাথে, আমি আপনাদের জানাবো আপেল সিডার ভিনেগার কোনটা ভালো এবং আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম
এছাড়া আরো জানাবো- আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম এবং কখন খাবেন ও কি পরিমান খাবেন সে সম্পর্কে।

ভূমিকা: আপেল সিডার ভিনেগার কোনটা ভালো - আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম

আপেলের রসকে গাঁজ প্রক্রিয়াতেে এক ধরনের ভিনেগার তৈরী করা হয়, যেটিকে আমরা আপেল সিডার ভিনেগার বলে থাকি। আপেল সিডার ভিনেগারে প্রচুর পরিমানে অ্যাসেটিক অ্যাসিড বিদ্যমান যে কারনে এটি টক জাতীয় স্বাদের হয়ে থাকে। আপেল সিডার ভিনেগার সালাদ সহ নানা ধরনের খাবারে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে ও এর ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। আপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত খাওয়ার ফলে আমাদের ওজন কমে যাওয়া, রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রনে রাখা এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। সেজন্য এটি সব বয়সের মানুষের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয় এবং খেতে পছন্দ করে। আপেল সিডার ভিনেগার সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ন আর্টিকেলটি পড়ুন।

আপেল সিডার ভিনেগার কোনটা ভালো

বাজারে অনেক ধরনের আপেল সিডার ভিনেগার পাওয়া যায়। তার মধ্যে কোনটি আমাদের জন্য ভালো এবং আমাদের স্বাস্থ্য উপযোগী এটি নির্ধারন করা বেশ কঠিন একটি কাজ। তবে আপেল সিডার ভিনেগার ক্রয় করার পূর্বে দেখে নেয়া উচিত ভিনেগারটি অর্গনিক না কি কৃত্রিম। নিম্নে কিছু ভালো আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে আলোচনা করা হলো। যা থেকে আপনি বুঝতে পারবেন আপেল সিডার ভিনেগার কোনটা ভালো-
আপেল সিডার ভিনেগার কোনটা ভালো
Bragg Organic Apple Cider Vinegar: Bragg হলো আপেল সিডার ভিনেগারের জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ব্র্যান্ড। এই ভিনেগারটি অপরিশোধিত এভং অপেস্টুরাইজ হয়ে থাকে, যে কারনে এই ভিনেগারের সকল পুষ্টিগত সঠিক ভাবে বজায় থাকে। এই ভিনেগারে কোন ধরনের রাসায়নিক ক্যামিকেল থাকে না।

Bragg আপেল সিডার ভিনেগারে মাদার অফ ভিনেগার থাকে বিধায় এটির স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক বেশি। এটি আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে পেটের সকল সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন সহ আমাদের চুল ও ত্বকের জন্য বেশি উপকারী একটি খাবার হলো Bragg আপেল সিডার ভিনেগার।

Heinz Unfiltered Apple Cider Vinegar: এই আপেল সিডার ভিনেগার টি ফিল্টার করা হয় না বলেই, এটির মাদার অফ ভিনেগার অক্ষত থাকে। এই মাদার অফ ভিনেগার হলো এনজাইম এবং প্রোবায়োটিকস সমৃদ্ধ, যা আমাদের সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করে আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

এই আপেল সিডার ভিনেগারের স্বাদ অনেকটা টক হতে পারে। এটির টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি কার্যকর। এছাড়া যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তার ও এই আপেল সিডার ভিনেগারটি খেতে পারেন। আবার যাদের একজিমা রোগের সমস্যা রয়েছে তারাও Heinz Unfiltered Apple Cider Vinegar টি খেতে পারেন।

Wedderspoon Apple Cider Vinegar with Manuka Honey: এই আপেল সিডার ভিনেগারটিতে মাদার অফ ভিনেগার থাকা সাথে সাথে এতে রয়েছে মানুকা গাছের মধু। এই মধুর গাছটি কেবল মাত্র ‍অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে পাওয়া যায়। এই দুটি উপাদানই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি হয়ে থাকে।

এই অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের স্বাদ অনেকটা মিষ্টি কারণ এতে মধু রয়েছে। এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যার কারনে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে শক্তি বৃদ্ধি হওয়ার পাশাপাশি আমাদের ত্বক ভালো রাখতে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে সাহায্য করে।

আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম

অনেকেই অনেক রকম ভাবে আপেল সিডার ভিনেগার খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি কিভাবে সঠিক উপায়ে এটি খেতে হয়। যার কারণে আমরা আপেল সিডার ভিনেগারের সঠিক গুনাগুন পাই না। আজকে আপনাদের আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। যেভাবে খেলে সঠিক গুনাগুন পাওয়া সম্ভব।

খাওয়ার পরিমান: আপেল সিডার খাওয়ার আগে অবশ্যই এটি খাওয়ার পরিমান সম্পর্কে জানতে হবে। প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ বা ১ থেকে ২ টেবিল চামচ পরিমান আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া উচিত। উক্ত পরিমানে চেয়ে বেশি খেলে বা কম খেলে আমাদের শরীরিক ক্ষতি বা কোন কাজ নাও করতে পারে। তাই উপযুক্ত পরিমাপ হলো ১ থেকে ২ টেবিল চামচ।

পানির সাথে মিশ্রন: আপেল সিডার ভিনেগার সবচেয়ে কমন একটি পদ্ধতি হলো পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া। যদি ও অন্যান্য খাবারের সাথে খাওয়া যায়। এক গ্লাস পরিষ্কার পানিতে ১ থেকে ২ টেবিল চামচ পরিমান আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খাওয়া সবচেয়ে উপকারী। এতে লেবুর রস বা মধু মিশিয়ে ও খেতে পারেন। এতে করে স্বাদ বৃদ্ধি হয়।

খাওয়ার উপযুক্ত সময়: আপেল সিডার ভিনেগার আপনি যখন ইচ্ছা তখন খেতে পারেন। তবে খাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো- প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খাওয়া। সকালে খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি বা তেল অপসরণ হতে থাকে যাতে করে আমাদের ওজন অনেক টা কমে যায়। এছাড়া খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে বা পরে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া যেতে পারে।

আশা করি আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তবে লক্ষনীয় বিষয় হলো- আপেল সিডার ভিনেগার কখনই সরাসরি খাবেন না। এতে করে এর অ্যাসিটিক উপাদান শরীরিক ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া এটি খাওয়ার পর অবশ্যই ভালো ভাবে ব্রাশ করা উচিত। অন্যথায় দাঁত ক্ষয় হতে পারে।

ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার অনেক নিয়ম রয়েছে। আর এই ভিনেগার ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকর। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কি পরিমান খেলে এবং কীভাবে খেলে আমাদের ওজন অনেক তাড়াতাড়ি কমে যায়। ওজন কমাতে এটি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। চলুন জানি ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-

ওজন কমাতে প্রতিদিন সকাল বেলা কোন খাবার গ্রহন করার পূর্বে ১ গ্লাস পানিতে ১ টেবিল চামচ পরিমান আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে তাতে সামান্য পরিমান মধু অথবা লেবুর রস ‍মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরে মেটাবেলিজম বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে আপনার শরীর থেকে তেল চর্বি দ্রুত অপসরণ হবে।

এটি খাওয়ার আগে এই জন্য খাওয়া হয় কারণ এটি খাওয়ার ফলে আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধিপায় এবং আমাদের খাবার নিদিষ্ট পরিমান খাওয়া যায়। একটি গবেষনাতে দেখা গেছে বেশির মানুষের ওজন বৃদ্ধি হয় তাদের অপরিকল্পিত জীবন যাপন এবং এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহনের ফলে। তাই অবশ্যই খাবার খাওয়ার আগে আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহন করুন।

রাতের খাবারে সালাডের সাথে ও অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া যেতে পারে। যদি সকালে আপেল সিডার ভিনেগার খেয়ে থাকেন তাহলে রাতে না খাওয়াই ভালো। যদি খেতে চান তাহলে সালাডের সাথে অল্পপরিমান খেতে পারেন। এতে করে আপনার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রনে থাকবে, যা ওজন কমাতে বেশ কার্যকারি।

আপেল সিডার ভিনেগার খেয়ে অনেক কমানো অনেকটা কষ্টসাধ্য বিষয়। তাই এটি খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করতে পারেন। এছাড়া আপনার খাদ্যাভাসে নিয়মিত সুষম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনার ওজন অনেক তাড়াতাড়ি কমে যাবে এবং আপনি শারীরিক ভাবে ফিট থাকতে পারবেন।

আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

আমরা সকলেই আমাদের স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য আপেল সিডার ভিনেগার খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানি না। যার কারনে আমাদের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। যদি এই ক্ষতিকর দিক বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো সবার ক্ষেত্রে হয় না তবু ও সর্তক থাকা উচিত। চলুন জানি আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে-
আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
পেট ব্যথা: আমদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যাদের আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার ফলে পেট ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করে থাকেন। এর কারণ হতে পারে সরাসরি আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া বা খালি পেটে খাওয়ার ফলে। তাই আপেল সিডার ভিনেগার অবশ্যই পানি বা অন্যান্য খাবারের সাথে খাওয়া উচিত। অন্যথায় এতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড পেট জ্বলা বা ব্যথার কারণ হতে পারে।

গলা ব্যথা: আপেল সিডার ভিনেগার যদি অধিক ঘন করে খাওয়া হয়, তাহলে গলা ব্যথার কারণ হতে পারে। কারণ এই ধরনের ভিনেগারে অধিক মাত্রায় অ্যাসিটিক অ্যাসিড রয়েছে। যা ঘন করে খাওয়ার ফলে আমাদের গলা বা খাদ্য নালীতে ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। তাই এটি খাওয়ার আগে এর ঘনত্ব দেখে খাওয়া উচিত।

মাংসপেশির দুর্বলতা: নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর থেকে পটাসিয়ামের পরিমান অনেকটাই কমে যায়। যাকে আমরা হাইপোক্যালেমিয়া বলে থাকি। এই সমস্যার করনে আমাদের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায় সাথে হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই যাদের এই ধরনের সমস্যা রয়েছে তা একদিন পর পর আপেল সিডার ভিনেগার খেতে পারেন এবং নিয়মিত পটাসিয়াম জাতীয় খাবার খেতে পারেন।

দাঁতের ক্ষয়: আমরা অনেকেই না বুঝে অথবা অতিরিক্ত উপকারিতা পাওয়ার জন্য আপেল সিডার ভিনেগার সরাসরি বা ঘন করে খাওয়ার চেষ্টা করি। এতে করে ভিনেগারে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড আমাদের দাঁতের এনামেল গুলো ক্ষয় করতে শুরু করে। এর ফলে আমাদের মাড়ি অনেকটা নরম হয়ে যায় এবং দাঁত দিয়ে রক্ত পড়া শুরু করে। তাই চেষ্টা করুন ভিনেগার খাওয়ার পর ভালোভাবে মুখ ধোয়ার বা কুলি করার।

লেখকের মন্তব্য: আপেল সিডার ভিনেগার কোনটা ভালো - আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, এতক্ষনে আপেল সিডার ভিনেগার কোনটা ভালো এবং আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এছাড়া ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম এবং আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। চেষ্টা করুন পরিমিত আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার।

মাত্রাতিরিক্ত এবং সরাসরি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করে তাদের কে ও পড়ার সুযোগ করে দিন। আর আপনার বিশেষ কোন মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url