বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত জেনে নিন
বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত এবং শিশুর ওজন কম হলে করনীয় কি তা অনেকেই জানতে চেয়েছেন। তাই আপনাদের জন্য আজকের এই বিশেষ আর্টিকেলটি। এই আর্টিকেলে জানতে পারবেন- বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত এবং শিশুর ওজন কম হলে করনীয় কি সে সম্পর্কে।
এছাড়া গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত এবং জন্মের সময় শিশুর ওজন কত হওয়া উচিত সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা। আশা করি আপনার উপকারে আসবে।
ভূমিকা: বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত
প্রতিটি মায়ের একটি কমন প্রশ্ন যে, বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত? প্রতিটি বাচ্চা তার বৃদ্ধির হায় এবং শারিরীক গঠন সব সময় এক হয় না। তবে বিশেষজ্ঞরা বাচ্চাদের বয়স অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত সে বিষয়ে একটি ধারণা দিয়েছেন। ছেলে বাচ্চা ও মেয়ে বাচ্চার ক্ষেত্রে দুইটি আলাদা মতভেদ প্রকাশ করেছেন।
আরো পড়ুনঃ শিশুদের বুকে কফ জমলে করণীয়
এছাড়া ও বাচ্চার ওজন নিভর করে কিছুটা তার জিনগত বৈশিষ্ঠ্যের উপর। প্রতিদিন বাচ্চা কি খাচ্ছে, শারিরীক উন্নতি এবং পরিবেশগত অবস্থার উপর বিবেচনা করে হয়ে থাকে। জন্মের পর থেকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাচ্চার ওজন ও বৃদ্ধি পেতে থাকে সাথে উচ্চতা। কিন্তু কোন বাচ্চার যদি এই তিনটি সমস্যার যে কোন একটি হয়ে থাকে, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।
বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত
বাচ্চার বয়সের সাথে ওজনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। বয়স অনুযায়ী বাচ্চাদের ওজন বাড়তে বা কমতে পারে। কিন্তু অন্য বাচ্চাদের সাথে তুলনা করে বাচ্চার ওজন মিলাবেন না। তা কখনই মিলবে না এটাই স্বাভাবিক। প্রতিটি শিশু আলাদা পরিবেশ, খাবার এবং জিনগত আলাদা বৈশিষ্ট নিয়ে বড় হয়।
বাচ্চার ওজন যদি খুব বেশি কম বা অনেক বেশি হয় তাহলে সেই বাচ্চার শরীরে অসুস্থতা বাসা বাধার সম্ভাবনা রয়েছে। বাচ্চার শরীরে অনেক বেশি পুষ্টি হলে বা অনেক কম পুষ্টি হলে বাচ্চার ওজন কম বা বেশি হতে পারে। বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত চলুন একটি চার্টের মাধ্যমে জেনে নেই-
নবজাতক বাচ্চা : স্বাভাবিক ওজন - ২.৫ থেকে ৪.৫ কেজি
জন্ম গ্রহনের সময় একটি বাচ্চার স্বাভাবিক ওজন ২.৫ থেকে ৪.৫ কেজি হতে পারে। ছেলে হোক বা মেয়ে প্রতিটি বাচ্চা জন্ম গ্রহনের সময় একই ওজন থাকে। কোন বাচ্চা জন্মগ্রহনের সময় যদি ওজন ২.৫ থেকে ৪.৫ কেজির মধ্যে হয়, তাহলে বাচ্চা সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে। কিন্তু এর বেশি বা কম হলে বাচ্চাকে সঠিক পুষ্টি গ্রহন করানোর পাশা পাশি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আরো পড়ুনঃ নবজাতকের গায়ের রং পরিবর্তন হয় কেন
৩ মাসের বাচ্চা : স্বাভাবিক ওজন ৫ থেকে ৭ কেজি
তিন মাস বয়সের কোন মেয়ে বাচ্চার ওজন যদি ৫ থেকে সাড়ে ৬ কেজির মধ্যে হয় এবং ছেলে বাচ্চার ওজন যদি সাড়ে ৫ থেকে ৭ কেজি হয়ে থাকে, তাহলে আপনার বাচ্চার ওজন ঠিক রয়েছে।
৬ মাসের বাচ্চা : স্বাভাবিক ওজন - ৬ থেকে ৯ কেজি
কোন মেয়ে বাচ্চার যদি ৬ মাস বয়সে তার ওজন ৬ থেকে সাড়ে ৮ কেজি হয় এবং কোন ছেলে বাচ্চার যদি সাড়ে ৬ থেকে ৯ কেজি পর্যন্ত হয়। তাহলে বাচ্চা একদম স্বাভাবিক রয়েছে।
১ বছরের বাচ্চা : স্বাভাবিক ওজন - সাড়ে ৭ কেজি থেকে ১১ কেজি
স্বাভাবিক অবস্থায় ১ বছর বয়সে একটি মেয়ে বাচ্চার ওজন সাড়ে ৭ কেজি থেকে সাড় ১০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে এবং একটি ছেলে বাচ্চার ওজন ৮ কেজি থেকে ১১ কেজি পযর্ন্ত হতে পারে।
২ বছরের বাচ্চা: স্বাভাবিক ওজন - সাড়ে ৯ কেজি থেকে সাড়ে ১৩ কেজি
২ বছর বয়সের একটি মেয়ে বাচ্চার ওজন সাড়ে ৯ কেজি থেকে ১৩ কেজি মধ্যে হয়ে থাকে এবং একটি ছেলে বাচ্চার ওজন ১০ কেজি থেকে সাড়ে ১৩ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস পরিমাপের মেশিনের নাম
৩ বছরের বাচ্চা : স্বাভাবিক ওজন - সাড়ে ১১ কেজি থেকে ১৬ কেজি
কোন মেয়ে বাচ্চার ওজন যদি ৩ বছর বয়সে সাড়ে ১১ থেকে সাড়ে ১৫ কেজি এবং কোন ছেলে বাচ্চার ওজন যদি ১২ কেজি থেকে ১৬ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে, তাহলে বাচ্চার ওজন স্বাভাবিক রয়েছে।
৪ বছরের বাচ্চা : স্বাভাবিক ওজন - ১৩ কেজি থেকে ১৮ কেজি
স্বাভাবিক অবস্থায় ৪ বছরের একটি মেয়ের ওজন ১৩ কেজি থেকে ১৭ কেজি পযর্ন্ত হতে পারে এবং একটি ৪ বছরের ছেলের ওজন ১৪ কেজি থেকে ১৮ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
৫ বছরের বাচ্চা : স্বাভাবিক ওজন - ১৪ কেজি থেকে ২০ কেজি
৫ বছর বয়সের একটি মেয়ের ওজন ১৪ কেজি থেকে ১৯ কেজি পর্যন্ত হতে পারে অপর দিকে ৫ বছর বয়সের একটি ছেলের ওজন ১৫ কেজি থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
শিশুর ওজন কম হলে করনীয়
শিশুর ওজন কম হলে, স্বাস্থ্যকর ভাবে স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখতে শিশুর বিশেষ কিছু পরিচর্যা নেওয়া প্রয়োজন। সাধারণত কম ওজনের শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়ে থাকে ফলে তারা সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেকারনেই শিশুর উচ্চতা ও বয়স অনুসারে ওজন এর যথাযথ সামঞ্জস্য থাকা উচিৎ। শিশুর ওজন কম হলে ৩ টি বিশেষ করনীয় সম্পর্কে জানতে নিচের আর্টিকেল টি পড়ুন।
পুষ্টিকর খাদ্য প্রদানঃ শিশুর ওজন স্বাভাবিক রাখতে অবশ্যই পুষ্টিকর খাদ্য দিতে হবে। যেমন ঃ প্রোটিন জাতীয় খাবার , শরীরের অপরিহার্য খাবার এর মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম প্রোটিন জাতীয় খাবার। ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, মশুর ডাল প্রোটিন এর উৎস। প্রোটিন জাতীয় খাবার শিশুর পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এছাড়াও শর্করা জাতীয় খাবার, ভিটামিন ও মিনারেল জাতীয় খাবার শিশুর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
বার বার খাওয়ানো এবং পর্যাপ্ত পানিঃ যে সব শিশুর ওজন কম স্বভাবতই তারা খেতে চায় না কারন তাদের ক্ষুধা কম লাগে অথবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় শিশুর মুখে রুচি থাকে না। এরকম অবস্থায় শিশুকে একবারে বেশি খাবার না দিয়ে দিনে ৫ থেকে ৬ বার অল্প অল্প করে খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। দিনের বেশীর ভাগ সময় শিশুকে পানি পান করাতে হবে এতে শিশুর শরীর হাইড্রেট থাকবে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম নিশ্চিতঃ শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের পর্যাপ্ত বিকাশের জন্য রাতের ঘুমের বিকল্প নেই। শিশুর স্বাস্থ্যের সার্বিক বিকাশ উন্নয়নের জন্য শিশুর বিশ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শিশুর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং সার্বিক সুস্থতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই অবশ্যই আপনার শিশুকে রাতে অন্তত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে এতে শিশু প্রতিটি কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন ও উচ্চতা
একটি বাচ্চার বয়সের উপর নির্ভর করে ওজন ও উচ্চতা হয়ে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাচ্চার ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধি পায় সেই নিয়ম। কিন্তু বয়স অনুযায়ী কতটুকু ওজন বাড়লে বা কতটুকু উচ্চতা বাড়লে তা স্বাভাবিক। সে বিষয়ে আমাদের প্রায় অধিকাংশেরই অজানা। নিম্নে বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন ও উচ্চতা কত হওয়া উচিত তা বলা হলো-
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কম হওয়ার কারণ
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কম হওয়ার অনেক কারন থাকতে পারে। গর্ভকালীন অপুষ্টি ও অন্যান্য কারণে ঠিকমতো ওজন না বাড়লে আপনার গর্ভের শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করতে পারে। গর্ভবতী মায়ের পর্যাপ্ত পুষ্টির ঘাটতি হলে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কম হয়। আরও কিছু প্রধান প্রধান কারন হল- পুষ্টির ঘাটতিঃ গর্ভবতী মায়ের সুষম খাদ্য সঠিক ভাবে গ্রহণ না করলে পুষ্টির ঘাটতি হয়। শরীরের চাহিদা পুরনের জন্য যে পরিমাণ খাদ্য প্রয়োজন তা অপর্যাপ্ত রয়ে গেলে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কম হয়। গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ ও ক্যালরির অভাব হলে বাচ্চার ওজন কম হয়। একজন গর্ভবতী মায়ের ওজন স্বাভাবিক ওজন এর চেয়ে গর্ভাবস্থা কালীন ১০ থেকে ১২ কেজি ওজন বেশি হওয়া প্রয়োজন।
প্ল্যাসেন্টার সমস্যাঃ প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়ার সবচেয়ে গুরুতর লক্ষণ হল হঠাৎ রক্তপাত হওয়া । প্লাসেন্টা গর্ভের খোলা অংশকে ঢেকে রাখে, ফলে গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের সমস্যা হয়। প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়ার জনিত সমস্যা হলে, শিশুর কাছে পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং অক্সিজেন পৌঁছায় না ফলে শিশুর ওজন কম হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপঃ গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ হলে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কম হয়। গর্ভকালীন ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৯০-এর সমান বা বেশি বা সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০ মিলিমিটার পারদের সমান বা বেশি হলে তাকে গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ বলে। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত টেনশন, অবসাদ কমাতে, ঘন ঘন ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
প্ল্যাসেন্টার সমস্যাঃ প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়ার সবচেয়ে গুরুতর লক্ষণ হল হঠাৎ রক্তপাত হওয়া । প্লাসেন্টা গর্ভের খোলা অংশকে ঢেকে রাখে, ফলে গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের সমস্যা হয়। প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়ার জনিত সমস্যা হলে, শিশুর কাছে পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং অক্সিজেন পৌঁছায় না ফলে শিশুর ওজন কম হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপঃ গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ হলে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কম হয়। গর্ভকালীন ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৯০-এর সমান বা বেশি বা সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০ মিলিমিটার পারদের সমান বা বেশি হলে তাকে গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ বলে। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত টেনশন, অবসাদ কমাতে, ঘন ঘন ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
লেখকের মন্তব্য: বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত
প্রিয় পাঠক, এতক্ষনে বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত এবং শিশুর ওজন কম হলে করনীয় কি সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এছাড়া বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন ও উচ্চতা কত হওয়া উচিত এবং গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। বাচ্চাকে জোড় পূর্বক কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। বাচ্চা ওজন কম বেশি হলে ঘাবড়াবেন না।
নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার এবং ডাক্তারের পরামর্শে বাচ্চার ওজন ও উচ্চতা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এতক্ষন আমাদের পাশে থাকায় এবং আপনার মূল্যবান সময় নিয়ে আর্টিকেলটি পড়ায় আপনাকে সুস্বাগতম। এইরকম পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। এছাড়া কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url