দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সহ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন

দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? এছাড়া কফি খাওয়ার সঠিক সময় কখন এবং কখন খেলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমি আপনাদের জানাবো দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সহ কফি খাওয়ার সঠিক সময় এবং কখন খেলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে।
কফি খাওয়ার সঠিক সময়
এছাড়া আরো জানাবো- ব্ল্যাক কফি বানানোর নিয়ম এবং ব্ল্যাক কফি খেলে কি ওজন কমে সে সম্পর্কে বিস্তারিত। তাই মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন।

ভূমিকা: দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কফি খাওয়ার সঠিক সময়

কফি হলো বিশ্বব্যাপি একধরনের জনপ্রিয় পানীয়। যার তিক্ত স্বাদ ও ঘ্রাণ বারবার আমাদের সবাইকে আকৃষ্ট করে থাকে। আমরা প্রায় সকলেই এক কাপ উষ্ণ কফির কাপে চুমক দিয়ে ‍দিনটি শুরু করি যা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কফি কেবলমাত্র আমরা অভ্যাসের জন্যই পান করি না ববং এর নান ধরনের উপকারিতার জন্য গ্রহন করে থাকি।

কফির নান স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। কিছু গবেষনাতে দেখা গেছে কফি খাওয়ার ফলে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। এছাড়া নিয়মিত কফি গ্রহনে আমাদের মন মেজাজ অনেক ভালো থাকে। এছাড়া আরো নানা রোগের ঝুকি কমাতে ও কফি কফি বেশ কার্যকারি। কফি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ন লেখাটি পড়ুন।

দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - দুধ কফির উপকারিতা

দুধ কফি যা অনেকের কাছে পছন্দের, যার কারণ হলো দুধ ও কফি এক সুস্বাদু মিশ্রণ এবং এটি পান করার ফলে একধরনের প্রশান্তি কাজ করে। প্রতিদিনের শুরুতে এবং ক্লান্তি দূর করতে সবার দুধ কফিটিই বেঁচে নেয়। যা ক্লান্তি দূর করে মানসিক শান্তি দেয়। দুধ কফি খাওয়ার যেমন নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তেমনি রয়েছে অপকারিতা। চলুন জানি দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে-
দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা
  • মনোযোগ বৃদ্ধি করে: অনেক বেশি কাজ করা ফলে কাজে মন দিতে পারেন না, তারা কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি করতে এক কাপ গরম দুধ কফি পান করতে পারেন। গরম দুধ কফি পান করার ফলে মস্তিষ্ক অনেক বেশি সজাগ হয়ে যায়। যার ফলে কাজে প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘ সময় কাজ করার সক্ষমতা তৈরী করে।
  • পুষ্টি সরবরাহ করে: যাদের অতিরিক্ত পরিশ্রম করার ফলে তৎক্ষণাৎ পুষ্টির প্রয়োজন হয়, তারা দুধ কফি পান করতে পারেন। কারণ দুধ কফিতে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২ এবং প্রোটিন থাকে। যা অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে এবং আমাদের হাঁড় ও পেশির জন্য বেশ কার্যকারি হয়ে থাকে।
  • হজমশক্তি বৃদ্ধি করে: যারা অতিরিক্ত ভারি খাবার খাওয়ার ফলে হজমে সমস্যা দেখা দেয়। যার কারনে পেট ফাঁপা বা পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। তাই ভারী খাবার খাওয়ার পর তাদের জন্য প্রয়োজন হয় উষ্ণ এক কাপ দুধ কফি। যা আমাদের হজমশক্তি বাড়িয়ে অতিরিক্ত ভারী খাবারকে দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে।
  • শরীর ব্যথা কমায়: আমাদের নানা কারনে শরীর ব্যথা হতে পারে। অনেকের হাঁড় ক্ষয় যাওয়ার জন্য ও সমস্ত শরীর ব্যথা করে। এই ধরনের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে দুধ কফি খাওয়া যেতে পারে। কারণ দুধে থাকা প্রোটিন এবং কফিতে থাকা পলিফেনল দুটি এক হয়ে আমাদের হাঁড় ক্ষয় যাওয়া রোধ করে এবং শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
দুধ কফি খাওয়ার অপকারিতা
  • ঘুম কম হতে পারে: রাতে দুধ কফি খাওয়ার ফলে আমাদের অনিদ্রার সমস্যা হতে পারে। কারণ দুধ কফিতে থাকা অতিরিক্ত ক্যাফেইন আমাদের সজাগ রাখতে সাহায্য করে, যার ফলে আমাদের ঘুম অনেক কম হয়। আর এই কারনে আমাদের শরীর খারাপ হওয়ার সাথে সাথে মুখে ব্রণ এবং চোখের নিচে কালো দাগ দেখা দেয়।
  • ওজন বৃদ্ধি: আমরা যারা নিয়মিত দুধ কফি পান করি তাদের ওজন বাড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ দুধ কফিতে অতিরিক্ত ফ্যাট ও শর্করা থাকে এছাড়া দুধ কফিতে অতিরিক্ত চিনি মেশালে ক্যালোরির পরিমান অনেক বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহনে আমাদের ওজন অতি দ্রুত বেড়ি যায়।
  • গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়: অতিরিক্ত গরম খেলে আমাদের পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়, যা আমরা সকলেই জানি। প্রতিদিনি পরিমানের বেশি দুধ কফি খেলে ও আমাদের গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। কারণ দুধ কফি অনেক সময় আমাদের পাকস্থলীতে অ্যাসিড তৈরী করে, যা একটা সময় বৃদ্ধি পেতে পেতে গ্যাস ইনফর্ম করে। যা ফলে বমিসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়।
  • হৃদপিন্ডের সমস্যা দেখা দেয়: অতিরিক্ত দুধ কফি খাওয়ার ফলে আমাদের হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ দুধ কফিতে থাকা পুষ্টিকর উপাদান আমাদের শরীর থেকে ফ্রি ব্যডিকেল গুলো অপসরন করে যা আমাদের হার্ট নিস্বরণ করতে পারে না। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে। ফলে হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং হার্ট অ্যাটাকের মত সমস্যা দেখা দেয়।

কফি খাওয়ার সঠিক সময়

কফি খাওয়া অনেকের কাছে একটি রুটিন হলেও অনেকেই জানেন না কখন কফি খাওয়া উচিত বা কফি খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি। সঠিক সময়ে এবং সঠিক উপায়ে কফি পান করলে নানা শারীরিক উপকারি পাওয়ার যায়। এছাড়া কফি খাওয়া নির্ভর অনেক টা শারীরিক প্রয়োজনের উপর। চলুন জানি কফি খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে-

সকালে নাস্তার পর: সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কফি না খেয়ে চেষ্টা করুন সকালে নাস্তার পরে কফি খাওয়ার। কারণ ঘুম থেকে ওঠার পরে আমাদের শরীর থেকে এক ধরনের কর্টিসল নামক হরমোন নিঃসরণ হয়ে থাকে। যা আমাদের শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এসময় কফি খাওয়ার ফলে কার্টিসল হরমোন বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। নাস্তা শেষ করে কফি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

দুপুরের খাবারের পর: দুপুরে কাজের ফাঁকে কফি খাওয়া ‍উত্তম তবে অবশ্যই তা খাওয়া পর। দুপুরের খাবার খাওয়ার পরে আমাদের অনেকের ঘুম চলে আসে, যে কারণে কাজের প্রতি অনিহার সৃষ্টি হয়। এই ঘুম বা ক্লান্তি কাটাতে কফি খাওয়া যেতে পারে। এর ফলে কাজের প্রতি মনোযোগ বেড়ে যায় এবং সকল কাজ অনেক দ্রুত করা যায়।

বিকালে ৫ টার মধ্যে: বিকালে আপনার যদি কফি খেতে ইচ্চা করে তাহলে অবশ্যই বিকাল ৫ টার মধ্যে খাওয়ার চেষ্টা করুন। বিকালের সময় কার্টিসল নামক হরমোন আবার কমতে শুরু করে এসময় কফি আপনাকে তৎক্ষনাৎ শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই চেষ্টা করুন বিকাল ৫ আগে কফি খাওয়ার। এর পরে খেলে রাতে ঘুম কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ব্ল্যাক কফি বানানোর নিয়ম

কফির মৌলিক রুপ হলো ব্লাক কপি। ব্লাক কফির স্বাদ অনেকটা তিক্ত হয়ে থাকে যা অনেকেই পছন্দ করে থাকেন। এছাড়া যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা চিনি ছাড়া ব্লাক কফি খেয়ে থাকেন। ব্লাক কফি বানানো খুবই সহজ। অনেক উপায়েই ব্লাক কফি বানানো যায়। চলুন জানি কি কি উপায়ে ব্লাক কফি বানানো যায় বা ব্লাক কফি বানানোর নিয়ম সম্পর্কে-

ব্লাক কফি তৈরীতে যে যে উপকরণ ব্যবহার হয়:
  • পানি
  • কফি গুড়ো বা কফি বীজ
  • চিনি (যদি ব্যবহার করতে চান)
  • কফি ফিল্টার
  • কফি বানানোর পাত্র বা যন্ত্র
পদ্ধতি-১
প্রথমে একটি পাত্রে পানি গরম করে ফুটিয়ে নিন। সেখান থেকে কফি কাপে আপনার পরিমান মত পানি নিয়ে নিন। এবার এক থেকে ২ চা চামচ পরিমান কফি গুড়ো মিশিয়ে নিন। আপনি মিষ্টি স্বাদ চাইলে চিনি ব্যবহার করতে পারেন অথবা চিনি ছাড়া ও খেতে পারেন। এবার ভালো ভাবে নাড়িয়ে পরিবেশন করুন।

পদ্ধতি-২
যদি ফ্রেঞ্চ প্রেস ব্যবহার করে কফি বানাতে চান, তাহলে প্রথমে ফ্রেঞ্চ প্রেসে ১ কাপ পরিমান পানি ধালুন। আপনি চাইলে আরো বেশি দিতে পারেন। তবে মনে রাখবে প্রতি ১ কাপ পানির জন্য ১ চা চামচ পরিমান ব্লাক কফি দিতে হবে। এবার ঢাকনা টি লাগিয়ে ৪ থেকে ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার পিস্টনটি চেপে কাপে পরিবেশন করুন।

পদ্ধতি-৩
কপি মেকার ব্যবহার করে ব্লাক কফি বানানো খুব সাধারন একটি নিয়ম। কপি মেকারে অতিসহজেই ব্লাক কফি বানানো যায়। প্রথম কফি মেকারে পানি ভরতে হয় সেখানে আপনার পরিমান মত পানি ধালুন এবং কফির কন্টেইনারে কফি গুড়ো দিন। এবার পাওয়ার বাটন চেপে পরিমান মত কফি নিয়ে নিন।

পদ্ধতি-৪
মোকা পট ব্যবহার করে ও ব্লাক কফি বানানো যায়। প্রথমে মোকা পটের নিচের অংশে পানি এবং উপরের অংশে কফি গুড়ো দিয়ে দিন। এবার চলায় বসিয়ে ততক্ষন পর্যন্ত জ্বাল করুন যতক্ষন না কফি উপরের অংশে চলে আসে। এবার চলা থেকে নামিয়ে কফি মগে করে পরিবেশন করুন।

ব্ল্যাক কফি খেলে কি ওজন কমে

ব্ল্যাক কফি খাওয়া ফলে ওজন কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শুধু ব্লাক কফি খেয়ে কখনোই ওজন কমে না। ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহন করা, ব্যায়াম করা এবং তার পাশাপাশি ব্লাক কফি খেলে ওজন কমে। তবে আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য একের পর এক ব্লাক কফি খেতে থাকেন ওজন কমানোর জন্য, তাহলে আপনার ওজন কমবে না বরং বৃদ্ধি পাবে। চলুন জানি ব্লাক কফি কিভাবে আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে-
ব্ল্যাক কফি খেলে কি ওজন কমে
  • ব্লাক কফি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়। যার ফলে আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালোরি বের হয়ে যায় যার ফলে আমাদের ওজন কমে।
  • ব্লাক কফিতে ক্যালোরি অনেক কম থাকে এবং এটি খাওয়ার ফলে আমাদের ক্ষুধা অনেক কম পায়। যেকারনে ভারী খাবার থেকে বিরত থাকা যায়। ফলে আমাদের ওজন কমে।
  • ব্লাক কফিতে দুধ বা চিনির ব্যবহার অনেক কম হয় বা হয় না বললেই চলে, সেক্ষেত্রে আমাদের শরীর অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহন করে না বলেই আমাদের ওজন স্বাভাবিক থাকে।
  • ব্লাক কফি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে তাপ উৎপন্ন ক্ষমতা বেড়ে যায়, সেজন্য আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত তেল চর্বি বার্ণ হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের ওজন কমে যায়।
  • ব্লাক কফি খাওয়ার ফলে আমাদের মনোযোগ এবং কাজ করা প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। আর কাজে ব্যস্ত থাকলে আমাদের শরীর থেকে অনেক বেশি ক্যালোরি বার্ণ হয় এবং আমাদের ওজম কমে যায়।

লেখকের শেষ মন্তব্য: দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কফি খাওয়ার সঠিক সময়

প্রিয় পাঠক, এতক্ষনে দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সহ কফি খাওয়ার সঠিক সময় সময় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আবার ব্ল্যাক কফি বানানোর নিয়ম এবং ব্ল্যাক কফি খেলে কি ওজন কমে সে সম্পর্কে ও বিস্তারিত জেনেছেন। কফি নিয়মিত এবং পরিমান মত খেলে আমাদের শারীরিক উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।


কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত কফি পান করা বা নিয়ম না মেনে কফি পান করা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই উপরিউক্ত নিয়ম মেনে কফি পান করুন। আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম বিভিন্ন তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের এই সাইটটি ভিজিট পড়ার অনুরোধ রইলো। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন এবং তাদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন। আর এ বিষয়ে কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url