গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
প্রিয় পাঠক, গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে করণীয় কি এই বিষয়ে আপনারা অনেকেই গুগলের কাছে জানতে চান। আজ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আপনাদের জানাতে চলেছি গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত। সঠিক তথ্য পেতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইলো।
এছাড়া এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা আরো জানতে পারবেন গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়, গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশনের লক্ষণ, গর্ভাবস্থায় যোনিতে চুলকানি হলে করণীয়, গর্ভাবস্থায় প্রসাবে ইনফেকশন হলে বাচ্চার কি কোন ক্ষতি হয় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত।
গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়:
আপনারা অনেকেই গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাব নিয়ে চিন্তায় থাকেন।আপনারা অনেকে জানতে চান ঘন ঘন প্রস্রাব হলে কি প্রসাবে ইনফেকশন হয় এবং গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে করণীয় কি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে।আজ এ সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা একটি কমন ব্যাপার।
প্রায় সকল গর্ভবতী মায়ের এই সমস্যা হয়। কেননা প্রতিনিয়ত মায়ের গর্ভে ভ্রুন বৃদ্ধি পাচ্ছে আর তাকে জায়গা দিতে গিয়ে জরায়ু বিস্তৃত হয়। আর এই বেড়ে যাওয়া জরায়ু ইউরিনারি ব্লাডারের উপর চাপ প্রয়োগ করে এটাই হচ্ছে মূল কারণ গর্ভবতী মায়েদের ঘন ঘন প্রস্রাবের।
তাছাড়া গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের ব্যাপক পরিবর্তন হয় যা কিডনি ও ব্লাডারকে আক্রান্ত করে। এর ফলে গর্ভা বস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। গর্ভাবস্থার মহিলাদের শরীরের hCG হরমোন যা বৃক্কের রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহের কারণে বৃক্বে বেশি মুত্র উৎপন্ন করে। যার ফলে গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। অনেক সময় গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।
গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন এর লক্ষণ:
প্রসাবে ইনফেকশন এখন একটি খুবই সাধারণ বিষয়। পুরুষ এবং মহিলা যে কারো প্রস্রাবে ইনফেকশন হতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন সমস্যা প্রায় অনেকেরই হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় ৬-২৪ তম সপ্তাহের মধ্যে (ইউটিআই) ঝুঁকি সবথেকে বেশি থাকে। প্রায় ৩১ শতাংশ মহিলাদের গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশনের যেসব লক্ষণ দেখা দেয় সেগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- প্রস্রাব করার সময় জ্বালা যন্ত্রণা হয়
- তল পেটে ব্যথা বা টান ধরে থাকে
- বারবার অল্প অল্প প্রস্রাব হয়
- প্রস্রাবের দুর্গন্ধ হয়
- গায়ে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হয়
- প্রস্রাবের সাথে হালকা রক্ত যায়
- বমি বমি ভাব এবং বমি হয়
আশা করি, গর্ভাবস্থায় প্রসাবে ইনফেকশন এর লক্ষণ গুলো সম্পর্কে আপনারা অবগত হতে পেরেছেন। এবার আসুন গর্ভাবস্থায় প্রসবের ইনফেকশন হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে করণীয় কি:
বিশেষ করে নারীদের গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন (ইউটিআই) মুত্র তন্ত্রের সংক্রমণ একটি খুবই স্বাভাবিক বিষয়। মুত্রতন্ত্রের যে কোন অংশে সংক্রমণ হলে তাকে প্রস্রাবের ইনফেকশন বলা হয়। গর্ভাবস্থায় এ সমস্যা গর্ভবতী মা এবং গর্ভের সন্তানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
এক্ষেত্রে প্রসাবে জ্বালাপোড়া, ঘনঘন প্রসব হওয়া, তলপেট ব্যথা করা,জ্বর, বমি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। এক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান করণীয় হচ্ছে একজন ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করা। রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তাররা নিশ্চিত হন যে কোন ঔষধ বা এন্টিবায়োটিক দেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা।
মনে রাখবেন গর্ভাবস্থায় যে কোন ঔষধ আপনার জন্য মারাত্মক হতে পারে। তাই যে কোন ঔষধ অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করুন। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে করণীয় কি তার কিছু উপায় বা কৌশল সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- প্রচুর পরিমাণে পানি এবং অন্য তরল জাতীয় খাবার যেমন, ডাবের পানি, ফলের রস, লেবু পানি ইত্যাদি পান করুন।
- কখনোই প্রস্রাব চেপে রাখবেন না। যখন প্রস্রাবের বেগ আসবে সঙ্গে সঙ্গে সেরে ফেলুন। দীর্ঘ সময় প্রস্রাব চাপিয়ে রাখলে ব্লাডারে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যায় ফলে ইউরিন ইনফেকশন হয়।
- ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন চা, কফি, সফট ড্রিঙ্কস (কোকাকোলা, সেভেনআপ,ফান্টা পেপছি) ইত্যাদির মত পানীয় থেকে বিরত থাকুন।
- নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। গর্ভাবস্থায় টয়লেট টিস্যু ব্যবহারের ক্ষেত্রে সামনে থেকে পেছনের দিকে পরিষ্কার করতে হবে যেন জীবাণু মূত্রনালীতে সংক্রমিত না করতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় বেশি করে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান। যেমন লেবু, কমলা লেবু, ক্যাপসিকাম, কিউই, আমড়া, পেয়ারা ইত্যাদি।
- ক্যানবেরি রসে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট যা শরীর সুস্থ রাখে এবং ব্যাকটেরিয়ার শরীরে প্রবেশ বাধা দেয়।
- গর্ভাবস্থায় নরম, সুতি, আরামদায়ক এবং ঢিলাঢালা জামা কাপড় পরার অভ্যাস করুন। টাইট ফিটিং জামা কাপড় থেকে বিরত থাকুন।
- তাছাড়া গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে হবে।
- গর্ভাবস্থায় সুষম খাবার গ্রহণ করুন এবং স্বাভাবিক শরীরচর্চা করে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন।
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনায় আপনারা অবগত হতে পেরেছেন যে, গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে করণীয় কি।গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন যেমন ঘাবড়ানোর বিষয় না তেমনি এটাকে অবহেলা করাও একদমই উচিত নয়। কেননা দীর্ঘস্থায়ী ইনফেকশনে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রস্রাবে সংক্রমণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
গর্ভাবস্থায় যোনিতে চুলকানি হলে করণীয়:
গর্ভাবস্থায় অনেকের এই সমস্যা দেখা যায় যে মাসিকের রাস্তায় চুলকানি হয়। গর্ভাবস্থায় এই সমস্যার অনেক কারণ থাকতে পারে যেমন হরমোনের পরিবর্তন, অতিরিক্ত সাদা স্রাব, যৌনাঙ্গের চুল, সাবান বা বিভিন্ন প্রসাধনী ইত্যাদি। এক্ষেত্রে আপনি ঘরোয়া ভাবে কিছু কার্যকরী উপায়ে গর্ভাবস্থায় যোনিতে চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে পারেন।গর্ভাবস্থায় চলিতে চুলকানি হলে কি কি করবেন আসুন জেনে নিই।
- যৌনাঙ্গ সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোন সুগন্ধি সাবান বা প্রসাধনী ব্যবহার থেকে ইনফেকশন হতে পারে। তাই এসব এড়িয়ে চলুন।
- বড় এক গামলা হালকা কুসুম গরম পানিতে ১-২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে তার ভেতরে দুই পা ফাঁক করে বসুন যেন সোডা মেশানো পানির যৌনাঙ্গে সংস্পর্শে যায়। এভাবে ৫-৭ মিনিট দিনে দুইবার বসে থাকুন।
- সুতির নরম পাতলা এবং ঢিলা ঢালা কাপড় পরিধান করলে এ সময় অনেকটাই আরাম পাওয়া যায়।
- ঠান্ডা পানি অথবা বরফের টুকরা যেহেতু চুলকানি কমাতে সাহায্য করে, সেহেতু আক্রান্ত স্থানে সুতির কাপড়ে বরফের টুকরা মুড়িয়ে সেঁক দিতে পারেন।
- সহনীয় গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে এই পানি দিয়ে গোসল করুন এবং যৌনাঙ্গে ব্যবহার করুন এতে চুলকানি কিছুটা কমবে।
- আক্রান্ত স্থানে নারিকেল তেল লাগালে সাময়িক উপশম পাওয়া যায় এবং যোনি চুলকানি নিরময় করতে সাহায্য করে।
- ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে এন্টিফাঙ্গল ঔষধ যেমন ট্যাবলেট, ক্রিম বা মলম ব্যবহার করা যেতে পারে।
- এছাড়া গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে চুলকানি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। রাতের চেয়ে দিনের বেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন তাতে ঘুমের কোন ক্ষতি হয় না।
- প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় দই রাখতে পারেন। দই আপনার শরীরে সুষম ph মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় মিষ্টি ছাড়া টক দই বেশি উপকারী।
গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে বাচ্চার কি কোন ক্ষতি হয়:
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, গর্ভাবস্থায় প্রথম ত্রৈমাসিকে (ইউটিআই) প্রস্রাবে ইনফেকশন বাচ্চার উপর তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। তবে এই ইনফেকশন যদি বারংবার ফিরে আসে তবে কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং গর্ভের শিশুর ওজনে প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি প্রি ম্যাচিউর বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।অর্থাৎ বাচ্চা হওয়ার সময় এর আগেই অপূর্ণ বাচ্চা জন্ম হওয়া। যার ফলে বাচ্চা পুষ্টিহীনতায় ভুগতে পারে।
বিশেষ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। ডাক্তারদের মতে মহিলাদের গর্ভবতী অবস্থায় (ইউটিআই) প্রস্রাবে ইনফেকশন সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে এবং এবং তারা যদি সংক্রমিত হওয়ার বিভিন্ন লক্ষণ বুঝতে পারেন তাহলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে চিকিৎসা নিতে হবে।
লেখক এর মন্তব্য :গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে করণীয় কি
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনারা জানতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে। এবং আপনারা আরো জানতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে পুরো আর্টিকেল পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এ আর্টিকাল এর মাধ্যমে আমরা আরো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি যে, গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন এর লক্ষণ, গর্ভাবস্থায় যোনিতে চুলকানি হলে করণীয়, গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে বাচ্চার কি কোন ক্ষতি হয় ইত্যাদি বিষয়ে।
মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থার যেকোনো ছোটখাটো সমস্যা আপনার বাচ্চার উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।আর গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন নিয়ে কোন অবহেলা করা উচিত নয়। অবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন যেমন যন্ত্রণাদায়ক তেমনি মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এমতাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।
আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন।তাছাড়া আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানান। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url