হাত-পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানুন ।
আপনি কি হাত-পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে চেয়ে এই আর্টিকেলটিতে ক্লিক করেছেন? আমি আজ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো, হাত-পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় কি সে সম্পর্কে। এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইল।
আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা আরো জানতে পারবেন হাত-পায়ের তালু অতিরিক্ত ঘামার কারণ, হাত-পা ঘামা কিসের লক্ষণ, হাত-পা ঘামার ঘুমের ঔষধ, ছোট বাচ্চাদের হাত-পা ঘামার কারণ এ সকল বিষয় বিস্তারিত।
হাত-পায়ের তালু অতিরিক্ত ঘামার কারণ :
হাত-পায়ের তালু ঘেমে যাওয়া, অনেকেই এই সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে পরীক্ষার খাতায় লিখতে গিয়ে হাতের তালু ঘেমে যাওয়ার সমস্যা অনেকের রয়েছে। অনেকের আবার পায়ের তালু ঘেমে যায়। ঘেমে যাওয়ায় মজা ও ঘেমে যায়। যার জন্য পায়ের দুর্গন্ধ হয়। সব সময় পা ঘেমে ভেজা থাকার কারণে পায়ে ফঙ্গাস জনিত রোগ দেখা দেয়।
আরো পড়ুনঃ কোন গাছের পাতা খেলে সুগার কমে।
অতিরিক্ত হাত ও পা উভয়ে ঘেমে গেলে তাকে Palmoplanter Hyperhidrosis বলা হয়। হাত পা ঘামার কারণ এবং হাত-পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের সাথে থাকুন। হাত ও পায়ে তালু অতিরিক্ত ঘামার সঠিক কারণ বলা যায় না। তবে চিকিৎসকদের মতে কিছু বিশেষ কারণে হাত পায়ের তালুতে ঘাম হতে পারে তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত হাত ও পা ঘেমে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, হতাশা, জেনেটিক কারণেও হাত -পা এর তালু ঘামাতে পারে।
- যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের হাত ও পায়ের তালু ঘেমে যেতে পারে।
- কিছু ওষুধ যা নিয়মিত সেবনে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে হাত ও পা ঘামতে পারে।
- ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় ও অ্যালকোহল পান করলে অতিরিক্ত ঘাম ঝরতে পারে।
- ডায়াবেটিস হওয়ার কারণে হাত ও পায়ের তালুতে ঘাম হতে পারে।
- কিছু ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় হাত ও পায়ের তালু ঘেমে যায়।
- অতিরিক্ত ঝাল বা মসলাদার খাবার খেলেও এ সমস্যা দেখা দেয়।
- মহিলাদের মেনোপজের সময় হাত-পা অতিরিক্ত ঘেমে যেতে পারে।
- রক্তে গ্লুকোজের স্বল্পতা থেকে হাত ও পায়ের তালুতে ঘাম হতে পারে।
হাত -পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায়:
অনেকেরই হাত -পায়ের তালু অতিরিক্ত ঘেমে যায় বিষয়টা খুবই অস্বস্তিকর। কারো আবার শীতকালেও এ সমস্যা দেখা দেয়। পরীক্ষার হলে লিখতে গিয়ে অথবা কোন একটা দুশ্চিন্তায় পড়লে হাতের তালু ঘেমে যায়। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মতো হাত পা ঘামাও একটি স্বাভাবিক বিষয়।
কিন্তু অতিরিক্ত হাত-পা ঘামা বিভিন্ন রোগের আভাস দিয়ে থাকে। তাই অনেকে হাত-পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে চান। কিছু ঘরোয়া উপায়ে হাত-পা ঘামা প্রতিরোধ করা যায় যা জানলে আপনারা উপকৃত হতে পারেন।
প্রচুর পানি পান করুন: প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এতে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং ঘাম কম হয়। দিনে কমপক্ষে ৩ লিটার পানি পান করুন। এতে শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং ঘাম প্রতিরোধ হবে।
দুই বেলা গোসল করুন: নিয়মিত দুই বেলা গোসল করুন। গরম পানিতে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন। গোসলের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা বের হয়ে যায়। তাই দিনে দুইবার ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকটাই কমে যায়। এতে হাত -পা ঘামা কিছুটা কম হওয়া সম্ভব।
হাত-পা পরিষ্কার রাখুন: ঠান্ডা পানিতে হাত-পা বার বার ধুয়ে নিন। পানিতে হাত পা ধুয়ে নিলে সাময়িক কিছুক্ষণের জন্য হাত-পা ঘাম থেকে বিরত থাকে।তাছাড়া ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে হাত পায়ে ঘাম হতে পারে। তাই হাত ও পা সব সময় পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। এবং সুতি বা নরম কাপড় দিয়ে হাত পা মুছে শুষ্ক রাখার চেষ্টা করুন।
অ্যাপেল সিডর ভিনেগার: হাত ও পায়ের তালু ঘামা প্রতিরোধ করতে কার্যকরী একটি ঘরোয়া সমাধান অ্যাপেল সিডার ভিনেগার।রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হাত-পা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে তুলা ভিজিয়ে হাত ও পায়ের তালুতে লাগিয়ে সারা রাত রাখুন। এবং সকালে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে হাত শুকনো রাখার চেষ্টা করুন।
বেকিং সোডা: হাত ও পা ঘামা প্রতিরোধ করতে বেকিং সোডা অন্যতম ঘরোয়া উপাদান। একটি বলে বেশ কিছু পানি নিয়ে তাতে ৩-৪ টেবিল চামচ বেকিং সোডা দিন। এবার এ বলের মধ্যে হাত ও পা ভিজিয়ে রাখুন। প্রায় আধা ঘন্টা হাত-পা ভিজিয়ে রাখার পর শুকনো ভালো পরিষ্কার কাপড় দিয়ে হাত পা মুছে ফেলুন। এভাবে কয়েকদিন নিয়মিত করলে হাত পায়ে ঘাম অনেকটা কমে যায়।
লেবুর রস: লেবুর রসে বিদ্যমান অ্যাস্ট্রিজান্ট উপাদান যা অতিরিক্ত ঘাম কমাতে সাহায্য করে। লেবুররস হাত ও পায়ের তালুতে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পরে ধুয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত কয়েকদিন ব্যবহারের ফলে হাত পায়ের ঘাম প্রতিরোধ করা যায়।
কর্পূর: একটি পাত্রে হালকা গরম পানি নিয়ে তাতে সামান্য পরিমাণ কর্পূর মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাত ও পা ভিজিয়ে রাখুন। কর্পূর এ থাকা শীতল কারোক উপাদান ঘাম কমাতে সাহায্য করে।
হাত-পা ঘামা কিসের লক্ষণ:
হাত পায়ের তালু ঘেমে যাওয়া একটি বিরক্তকর সমস্যা। অনেক সময় লেখালেখি করতে গিয়ে হাত ঘেমে যায়। আবার জুতা পরে কিছুক্ষণ থাকলে পা ঘেমে পায়ের দুর্গন্ধ হয়।
অনেকে এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজেন। উপরের অংশে আমরা আলোচনা করেছি হাত-পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে ।অনেকেই চিন্তায় পড়ে যান যে হাত পা ঘামা কিসের লক্ষণ, কোন বড় রোগের লক্ষণ নয় তো? আসুন জেনে নিই হাত-পায়ের তালু ঘেমে যাওয়া কি কি রোগের লক্ষণ হতে পারে সে সম্পর্কে।
- আজকাল ডায়াবেটিসের সমস্যা অহরহ। রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে অনেক সময় হাত পায়ের তালু ঘেমে যায়। তাই দীর্ঘদিন হাত পায়ের তালু ঘেমে গেলে ব্লাড টেস্ট করে নেবেন। বলা যায় না আপনার অজান্তেই ডায়াবেটিস হয়তো আপনার শরীরের বাসা বেধেছে।
- থাইরয়েডের সমস্যা হলে হাত ও পায়েরর তালু ঘামতে পারে। তাই হঠাৎ হাত ও পায়ের তালু ঘামার সমস্যা দেখা দিলে একবার রক্ত পরীক্ষা করে নিন।
- দুই এক সপ্তাহ বা ২-৩ মাস ধরে হঠাৎ হাত ও পায়ের তালু ঘামার সমস্যা দেখা দিলে সেটা হতে পারে হার্টের সমস্যা জনিত কারণে। কারণ হাতের তালু ঘামা হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে। তাই দেরি না করে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
- তাছাড়া অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে হাত পায়ের তালু ঘামতে পারে। সেজন্য সব সময় পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। এবং হাত শুকনো রাখার চেষ্টা করুন।
- সাধারণত মহিলাদের ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার সময় হলে হাত ও পা ঘেমে যায়। এটা কোন অসুখ নয়। একে মেনোপজ বলে। হাত-পা ঘামা মেনোপজ এর লক্ষণ হতে পারে।
হাত-পা ঘামার হোমিও ঔষধ :
হাত-পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। হাত পা ঘামার হোমিও চিকিৎসা অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনেকে হাত-পা ঘামার হোমিও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চান। হোমিও ঔষধ অত্যন্ত ধৈর্য নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে খেতে হয়। তাহলে সঠিকভাবে এই ঔষধ কাজ করে।হোমিও চিকিৎসায় কিছু ওষুধ আছে যা আপনার হাত-পায়ের ঘাম থেকে মুক্তি দিতে পারে।
কিন্তু ধৈর্য ধরে দীর্ঘদিন খেলে আপনি ভালো ফলাফল পাবেন। হাত-পা ঘামা দূর করতে হোমিও ঔষধ হিসেবে আপনি r32 dr.reckeweg এর হাইপারহাইড্রোসিস ড্রপ সেবন করতে পারেন। প্রতিদিন ১০-১৫ ফোটা ৩ বার ২-৩ মাস সেবন করলে আপনি ভালো ফলাফল পাবেন। তাছাড়া আরো যেসব হোমিওপ্যাথি ঔষধ আছে যেমন
- Silicea 200
- Jaborandi 30
প্রিয় পাঠক, আশা করি, হাত- পা ঘামার হোমিও ঔষধ সম্পর্কে আপনারা ধারণা পেয়েছেন।আপনাদের সতর্কতার জন্য জানাতে চায় যে কোন ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করা উচিত। সব থেকে ভালো হবে আপনি যদি একটি ভালো হোমিও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করেন।
ছোট বাচ্চাদের হাত-পা ঘামার কারণ:
আপনারা অনেকেই জানতে চান ছোট বাচ্চাদের হাত-পা ঘামার কারণ কি? ছোট বাচ্চারা সবাই কমবেশি ঘামে। তার কারণ হচ্ছে তারা মায়ের বুকের দুধ পান করে। মায়ের বুকের দুধ অত্যন্ত পুষ্টিকর হওয়ায় যখন বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ পান করে তখন তার শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাছাড়া বাচ্চা উদ্বিগ্ন,নার্ভাস বা কান্নাকাটি করলে বাচ্চাদের হাত-পা ঘেমে যায়।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের মুখে ঘা হলে করণীয় কি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় ছোট বাচ্চাদের ত্বকের পৃষ্ঠের অংশে প্রতি ইউনিটে বেশি সংখ্যক ঘামগ্রন্থি থাকে। যার জন্য বাচ্চাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়। বাচ্চাদের হাত ও পায়ের তালুর ঘামগ্রন্থি গুলো শরীরের অন্যান্য ঘামগ্রন্থির তুলনায় বেশি সক্রিয় হাওয়ায় হাত ও পায়ে অতিরিক্ত ঘাম হয়।
বাচ্চার হাত-পা ঘামলে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই।ছোট বাচ্চাদের সব সময় সুতি ও নরম পাতলা কাপড় পরিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন। এবং মায়ের বুকের দুধ পান করার সময় হালকা বাতাসের ব্যবস্থা করুন। তাছাড়া অতিরিক্ত ঘাম হলে বা তার সঙ্গে বাচ্চার অন্যান্য অসুবিধা হলে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য :হাত-পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায়
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে নিশ্চয় পুরো আর্টিকেল পড়ে আপনারা অবগত হতে পেরেছেন, হাত-পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে। তাছাড়া আরো জানতে পেরেছেন, হাত-পায়ের তালু অতিরিক্ত ঘামার কারণ, হাত-পা ঘামা কিসের লক্ষণ, হাত-পা ঘামার হোমিও ঔষধ এবং ছোট বাচ্চাদের হাত-পা ঘামার কারণ সম্পর্কে।
আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম বিভিন্ন তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের এই সাইটটি ভিজিট পড়ার অনুরোধ রইলো। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন এবং তাদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন। আর এ বিষয়ে কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url