আসল চন্দন চেনার উপায় এবং চন্দন মুখে লাগানোর নিয়ম
আসল চন্দন চেনার উপায় এবং চন্দন মুখে লাগানোর নিয়ম সম্পর্কে জানেন না বলেই এই আমার লেখা এই আর্টিকেলটিতে ক্লিক করেছেন। আমি আপনাদের সাথে আছি রাবেয়া, আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের জানাবো আসল চন্দন চেনার উপায় সম্পর্কে এবং কিভাবে চন্দন মুখে ব্যবহার করবেন সেটি লাগানোর নিয়ম সম্পর্কে।
এছাড়া ও আপনাদের আরো অনেক অজানা প্রশ্ন যেমন- চন্দন মুখে দিলে কি হয় এবং চন্দন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় ইত্যাদি। এই সকল প্রশ্নের উত্তর থাকছে আজকের এই আর্টিকেলটিতে।
ভূমিকা: আসল চন্দন চেনার উপায় - চন্দন মুখে লাগানোর নিয়ম
প্রিয় পাঠক, চন্দন একটি অতি মূল্যবান এবং বহুমুখী গাছ। বর্তমান সময়ে চন্দন খুবই দুর্লভ বা সহজেই পাওয়া যায় না এমন একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। চন্দন সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ তার উপকারে ব্যবহার করে আসছে। চন্দন উপৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ভারতের তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটক রাজ্য।
এছাড়া অস্ট্রিলিয়াতে ও চন্দন চাষ করা হয়। চন্দনের এত বেশি জনপ্রিয়তার করণ হলো এর বহুমুখী উপকারিতার জন্য। চন্দন গাছ থেকে সংগৃহীত কাঠ ও তেল নানা কিছু তৈরীতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে বেশি ব্যবহৃত হয় সুগন্ধি বা আতর, নান ধরনের ব্যবহার পণ্য, ঔষধি গুণাবলী এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহারের কারণে।
আসল চন্দন চেনার উপায়
বর্তমান বাজারে আসল চন্দন খুব কমই পাওয়া যায়। বাজারে নকল চন্দন সবচেয়ে বেশি এবং বিক্রি করার সময় তারা আসল চন্দন বলেই বিক্রি করে থাকেন। তাই আসল চন্দন চেনা খুবই গুরুত্বপূর্ন। আসল চন্দন চেনার উপায় অনেক তার মধ্যে থেকে কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করবো, যাতে আপনাদের আসল চন্দন চিনতে সুবিধা হয়।
- আসল চন্দন খুবই ভারী এবং ঘন হয়ে থাকে। এক টুকরো চন্দনের ওজন ও অনেক বেশি মনে হবে। আর নকল যে চন্দন তা তুলনামূলক ভাবে খুবই হালকা হয়ে থাকে।
- আসল চন্দন তার প্রকৃত রং হালকা হলুদ বা বাদামী বর্ণের হতে পারে। বাহিরের অংশের থেকে ভিতরের অংশ বেশি গাঢ় হয়ে থাকে। আর নকল চন্দনের রং খুবই উজ্জ্বল প্রকৃতির হয়ে থাকে বা কখনো অনেক হালকা রঙ্গের হয়ে থাকে।
- আসল চন্দনের গন্ধ খুব বেশি তীব্র হয়না। এর গন্ধ হয় মিষ্টি এবং প্রশান্তি যোগায়। আর এটির গন্ধ দীর্য সময় ধরে থাকে। কিন্তু নকল চন্দনের গন্ধ অনেক তীব্র হয়ে থাকে। এটি কৃত্রিম উপায়ে বানানো হয় বলে এর গন্ধ দীর্য়স্থায়ী হয় না।
- আসল চন্দনের ঘনত্ব অনেক বেশি হওয়াতে, এটি কখনোই পানিতে ভেসে থাকে না। পানিতে রাখার সাথে সাথেই পানির তলানিতে চলে যায়। আর নকল চন্দনের ঘনত্ব অনেক কম হয়। যার কারনে সবসময়ই পানিতে ভাসে।
- এছাড়া আসল চন্দন আগুনে পোড়ালে তার একটি মিষ্টি সুগন্ধ বের হয় এবং তা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু নকল চন্দন পোড়ালে তা থেকে খুব একটা গন্ধ বের হয় না। আর যদি বের হয় তাহলে তা অতি তীব্র হয়, যা নাকে অস্বস্তির কারণ হয়।
আশা করি উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আসল চন্দন ও নকল চন্দন সম্পর্কে ধারনা পেয়েছেন। তাই চন্দন কেনার পূর্বে যেকোন একটি উপয় অবলম্বন করে চন্দন কেনার চেষ্টা করুন। বাজার যাচাই করুন এবং উপরের আলোচনার সাথে মিলে গেলে চন্দন ক্রয় করুন। অন্যথায় চন্দন কেনা থেকে বিরত থাকুন।
চন্দন মুখে লাগানোর নিয়ম
নিয়মিত চন্দন ব্যবহারে আমাদের ত্বকে থাকা তেলতেলে ভাব, ব্রণ ও ছোট ছোট দাগ বা গর্ত আপসরণ হয় এবং ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন চন্দন ব্যবহার করা উত্তম এছাড়া নিয়মিত চন্দন ব্যবহারে ত্বকে পরিবর্তন লক্ষনীয়। চন্দন ব্যবহারে আরো অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়, তার জন্য সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে মুখে চন্দন লাগাতে হয়। চন্দন মুখে অনেক উপায়ে লাগানো যায়। চলুন জানি চন্দন মুখে লাগানোর নিয়ম সম্পর্কে-
চন্দনের পেস্ট: চন্দনের পেস্টে তৈরি করে মুখে লাগানো যেতে পারে। চন্দনের পেস্ট তৈরি করতে উপকরন লাগবে চন্দন গুড়া, দুধ এবং গোলাপ জল। এবার একটি পরিষ্কার পাত্রে ১ থেকে ২ চা চামচ পরিমান চন্দনের গুড়া নিন। তাতে ১ চামচ পরিমান গোলাপ জল এবং এক চা চামচ পরিমান দুধ মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্টেটি তৈরি করুন।
গোলাপ জল বা দুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ব্যবহার করুন। পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে তা সমস্ত মুখ জুড়ে সমানভাবে লাগিয়ে নিন। এবার পেস্টটি মুখে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ড পরিষ্কার পানি দিয়ে ধীরে ধীরে ধুয়ে ফেলুন। পরিবর্তন আপনি নিজেই লক্ষ করতে পারবেন।
চন্দন ও বেসনের ফেসপ্যাক: চন্দন ও বেসনের প্যাক তৈরি করতে উপকরণ লাগবে চন্দনের গুড়া ১ চা চাামচ, বেসন ১ চা চামচ এবং গোলাপ জল অথবা দুধ লাগবে পরিমান মত। যেকোন দুধ ব্যবহার করতে পারবেন। এবার একটি পাত্রে ১ চামচ চন্দনের গুড়া নিয়ে তাতে ১ চা চামচ পরিমান বেসন ব্যবহার করুন এবং সর্বশেষ গোলাপ জল অথবা দুধ পরিমান মত ব্যবহার করুন।
প্যাক তৈরী ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে প্যাক যাতে অনেক বেশি ভারী বা অনেক পাতলা না হয়ে যায়। এবার সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশিয়ে প্যাক টি তৈরী করুন। প্যাক তৈরি হয়ে গেলে তা মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বেসনের সাথে চন্দন ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হয়।
চন্দন ও হলুদের ফেসপ্যাক: চন্দন ও হলুদের প্যাক তৈরী করতে উপকরণ প্রয়োজন হবে- ১ চা চামচ চন্দন গুড়ো, ১ চিমটি পরিমান হলুদের গুড়ো এবং দুধ অথবা মধু পরিমান মত। উপকরন নেয়া হয়ে গেলে এবার একটি পরিষ্কার পাত্র নিন। তাতে ১ চামচ পরিমান চন্দনের গুড়ো নিয়ে, তাতে হলুদ গুড়ো যোগ করুন এবং সর্বশেষ দুধ অথবা মধু দিয়ে যোগ করুন।
সবগুলো উপকরন একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি মাঝারি আকারের প্যাক তৈরি করুন। প্যাক তৈরি শেষে এবার লাগানো পালা। উক্ত প্যাকটি সমানভাবে আপনার মুখে এবং ঘাড়ে লাগিয়ে নিন। প্যাকটি রাতে ব্যবহার করলে সারা রাত রাখতে পারেন। আর যদি দিনে ব্যবহার করেন, তাহলে প্যাকটি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। চন্দন ও হলুদের প্যাক ব্রণ দূর করতে সাহায়ক হিসেবে কাজ করে।
চন্দন মুখে দিলে কি হয়
ত্বকের জন্য সবচেয়ে প্রাকৃতিক ও কার্যকারী উপাদান হলে চন্দন। যা বহুবছর আগের থেকেই রুপচর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদের ত্বক উজ্জ্বল ও প্রাকৃতিভাবে সুন্দর করতে সহায়তা করে। এছাড়া চন্দনের আরো নানা উপকারিতা রয়েছে। চলুন জানি চন্দন মুখে দিলে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত-
আমরা অনেকেই রয়েছি যাদের ত্বকে অনেক তেলতেলে ভাব সবসময় থাকে। এই তেলতেলে ভাব থেকে আমাদের মুখকে সুরক্ষিত রাখতে চন্দন ব্যবহার করতে পারি। নিয়মিত চন্দন ব্যবহারে আমাদের ত্বক থেকে তেলতেলে ভাব পুরোপুরি ভাবে দূর করা সম্ভব। চন্দন অতিরিক্ত তেল শোষন করে নেয়।
আমাদের মুখে যদি অনেক বেশি ব্রণ হয় এবং ব্রণ থেকে দাগের সৃষ্টি হয়। তাহলে আমারা চন্দন ব্যবহার করতে পারি। চন্দনে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা আমাদের ত্বক থেকে ব্রণ নির্মূল করতে সাহায্য করে এবং চন্দনে থাক অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান ব্রণ থেকে দাগ বা প্রদাহের সৃষ্টি হয় তা প্রাথমিক অপসরণ করতে সহায়তা করে।
আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যাদের অতি অল্প বয়সে ত্বকে বয়সের ছাপ লক্ষ করা যায়। ত্বক থেকে বয়সের ছাপ মুছে দিতে আমরা চন্দন ব্যবহার করতে পারি। চন্দনে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বকের মৃতকোষ গুলোকে অপসরণ করে নতুন কোষের সৃষ্টি করে। এর ফলে আমাদের ত্বক থেকে বয়সের ছাপ মুছে যায়।
আবার অনেকেই রয়েছেন যাদের যাদের ত্বকে অনেক বেশি রোদে পোড়া দাগ সহ ত্বকে মলিনতার প্রভার রয়েছে। এই রোদে পোড়া দাগ ও মলিনতা দূর করতে চন্দন ব্যবহার করা যেতে পারে। নিয়মিত চন্দন ব্যবহারের ফলে ত্বক প্রাকৃতিক ভাবে শীতল হয়ে ত্বকের রোদে পড়া দাগ দূর হয় এবং ত্বক নরম ও মসৃন হওয়ার সাথে সাথে ত্বক থেকে মলিনতা কাটিয়ে যায়।
চন্দন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
চন্দন আমাদের ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক একটি উপাদান। যা আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে সহায়ক হতে পারে। তবে চন্দন ব্যবহারে ত্বক ফর্সা হওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে সবার ক্ষেত্রে এটি কাজ নাও করতে পারে। কারণ আমাদের ত্বকের রং জিনগত বা বিভিন্ন হরমোনের কারণে হয়ে থাকে। তবে সাময়িক ফর্সা বা উজ্জ্বলতার জন্য আমরা নিম্ন উক্ত উপায়ে চন্দন ব্যবহার করতে পারি। চলুন জানি চন্দন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে-
ফর্সা হওয়ার উপায় হিসেবে আমারা চন্দনকে তিনটি উপায়ে ব্যবহার করতে পারি। যা আমাদের ত্বক ফর্সা করতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তবে আপনার যদি চন্দনে অ্যালার্জি থাকে তাহলে এই উপায় গুলো গুলো এগিয়ে চলুন। উপায় তিনটি হলো-
- চন্দন পেস্ট
- চন্দন ফেসপ্যাক এবং
- চন্দনের তেল
চন্দন পেস্ট: ইতিমধ্যে আমরা চন্দনের পেস্ট কিভাবে তৈরি করতে হয়, সে সম্পর্কে জেনেছি। উপরিউক্ত নিয়ম অনুসারে চন্দনের পেস্টে তৈরি করে তা মুখে ব্যবহার করুন। দেখবেন আপনার ত্বক আগের তুলনায় অনেকটা ফর্সা হওয়ার পাশাপাশি ত্বক হবে কোমল ও মসৃন এছাড়া ত্বকে থাকা সকল ডার্ক সার্কেল থেকে ও মিলবে মুক্তি।
চন্দন ফেসপ্যাক: আমারা উপরিউক্ত আলোচনা থেকে চন্দন ফেসপ্যাক তৈরি করার উপায় এবং ব্যবহার বিধি সম্পর্কে জেনেছি। চন্দন ফেসপ্যাক ব্যবহারে ত্বক থেকে তেলতেলে ভাব দূর করে আপানাকে করবে ভিতর থেকে উজ্জ্বল ও ফর্সা। তাই ত্বক ফর্সা ও ত্বকের আদ্রতা বাজায় রাখতে নিয়মিত চন্দনের ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
চন্দনের তেল: চন্দনের তেল আমরা আমাদের ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করতে পারি। চন্দনের তেল আমাদের ত্বকে ম্যাসাজ করার ফলে ত্বকের নীচে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ত্বক হয় উজ্জ্বল ও ফর্সা। তার জন্য ৩ থেকে ৪ ফোঁটা চন্দনের তেল হাতে নিয়ে আলতো ভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। যার ফলে এটি আমাদের ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বককে নরম করে তোলে, যার ফলস্বরুপ আমরা একটি উজ্জ্বল ও ফর্সা ত্বক পেয়ে থাকি। চন্দনের তেল রাতে ব্যবহার করা সবচেয়ে উত্তম।
লেখকের শেষ মন্তব্য: আসল চন্দন চেনার উপায় - চন্দন মুখে লাগানোর নিয়ম
প্রিয় পাঠক, এতক্ষনে আসল চন্দন চেনার উপায় এবং চন্দন মুখে লাগানোর বিভিন্ন নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আবার চন্দন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় এবং চন্দন মুখে দিলে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। মানুষ সুন্দর হতে ত্বক ফর্সা হওয়া জরুরি নয়। সুন্দর হওয়ার নেশায় যা ইচ্ছা তাই ব্যবহার করবেন না।
চন্দন ক্রয় করার পূর্বে অবশ্যই আসল চন্দন কেনার চেষ্টা করুন। এতক্ষন আমাদের পাশে থাকায় এবং আপনার মূল্যবান সময় নিয়ে আর্টিকেলটি পড়ায় আপনাকে সুস্বাগতম। এইরকম পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। এছাড়া কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url