কোন আমল করলে চেহারা সুন্দর হয় সহ দোয়া কবুলের আমল
প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, পরিবার-পরিজনদের নিয়ে ভালো আছেন। কোন আমল করলে চেহারা সুন্দর হয়, এই বিষয় নিয়ে জানার আগ্রহ থেকে আপনি এই আর্টিকেলে ক্লিক করেছেন? তাহলে আপনি একদম ঠিক জায়গায় এসেছেন। আজ আমরা কোন আমল এবং দোয়া করলে চেহারা সুন্দর হয় সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।
পুরো আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন, কোন আমল করলে চেহারা সুন্দর হয়। তাছাড়া আপনারা আরো জানতে পারবেন, দোয়া কবুলের আমল কোন জিকির করলে চেহারা সুন্দর হয়, কোন নামাজ পড়লে চেহারা সুন্দর হয় এ সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত। সঠিক তথ্য পেতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
ভূমিকা : কোন আমল করলে চেহারা সুন্দর হয় সহ দোয়া কবুলের আমল
আল্লাহ মানুষকে 'আশরাফুল মাখলুকাত' অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরি করেছেন। আল্লাহ মানুষকে সুন্দর আকৃতি দান করেছেন। ইসলাম অর্থ শান্তি যা মানুষের চলার পথ সহজ ও শৃঙ্খল করে। পবিত্র কোরআনে সবকিছু সমাধান রয়েছে। মানুষ তার চেহারা সুন্দর করার জন্য অনেক ধরনের প্রচেষ্টা করেন। কিন্তু মহান আল্লাহ তাআলা যে সুন্দর অবয়বে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার শুকরিয়া করে শেষ করা যায় না।
পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষের মধ্যে একজনের চেহারার সাথে অন্যজনের চেহারার কোন মিল নেই এটা আল্লাহর কত বড় কুদরত। উপরের সৌন্দর্যের থেকে আন্তরের সৌন্দর্যকে আল্লাহ তাআলা বেশি পছন্দ করেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, 'আমি মানুষকে উৎকৃষ্ট অবয়বে সৃষ্টি করেছি। '(সূরা: ত্বিন আয়াত : ৪)।
কোন আমল করলে চেহারা সুন্দর হয়
বর্তমান সময়ে মানুষ তার চেহারা সুন্দর করার জন্য অনেক কিছু করে থাকেন। এমনকি সার্জারির মাধ্যমে এখন চেহারা সুন্দর করা হয়। কিন্তু আল্লাহর দেওয়া এই সুন্দর চেহারা কে পরিবর্তন করার মানুষের কোন অধিকার নেই। আল্লাহ নিশ্চয়ই সৌন্দর্য পছন্দ করেন। তবে বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে আত্মার সৌন্দর্য অর্থাৎ ঈমান এবং আমলের সৌন্দর্য তিনি বেশি পছন্দ করেন।
চেহারা সুন্দর করার কিছু দোয়া ও আমল রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বোচ্চ সুন্দর ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি আমাদের শিখিয়েছে কোন আমল করলে চেহারা সুন্দর হয়। এছাড়া রাসূল (সাঃ) আয়নায় মুখ দেখার সময় আল্লাহর কাছে তার চরিত্র সুন্দর করার জন্য দোয়া করতেন। নবীজি (সাঃ) আমাদের আয়না দেখার যে দোয়া শিখিয়েছেন তা হলঃ
বাংলা উচ্চারণ: 'আল্লাহুম্মা আহসানতা খালকি ;ফা আহসিন খুলুক্বি।'
অর্থ :হে আল্লাহ! আপনি আমার চেহারা সুন্দর করেছেন। অতএব, আমার চরিত্র সুন্দর করে দিন।
এই দোয়া থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় চেহারার সাথে আমাদের চরিত্রের ও সৌন্দর্য অত্যন্ত প্রয়োজন। তাছাড়া আপনারা সূরা নূর এর ৩৫ নং আয়াত প্রত্যেকদিন পাঠ করে দুহাতে ফু দিয়ে মুখমন্ডল এবং পুরা শরীরে মাখবেন। এটি চেহারা সুন্দর করার একটি পরীক্ষিত আমল কিন্তু তেলাওয়াতে কোন ভুল থাকা যাবে না। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের মানুষ রয়েছে কেউ কাল, কেউ ফর্সা, কেউ ধূসর বর্ণের ইত্যাদি। এসব মানুষই আল্লাহর সৃষ্টি।
কারো চেহারা নিয়ে অবজ্ঞা করা ইসলামে বহির্ভূত কাজ।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে যে ওযু করা হয় তাতে আমাদের চেহারার উজ্জ্বলতা ফুটে ওঠে। ওযু করার মাধ্যমে আমাদের চেহারা সতেজ ও উজ্জ্বল হয়। অজু করলে যেমন আত্মার শুদ্ধ হয় তেমনি ত্বক থেকে ময়লা অপসারণ করে ত্বক উজ্জ্বল করে। কেউ যদি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পড়েন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া চান আল্লাহ তাকে নুরানী চেহারা দান করবেন ইনশাআ
দোয়া কবুলের আমল :
মহান আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি তার সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষ সবকিছুর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাই। আর আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলে আল্লাহ বান্দাকে কখনো খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না। কিন্তু আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়ার কিছু পদ্ধতির সময় এবং আমল রয়েছে। দোয়া কবুলের আমল সম্পর্কে এখন আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।
- আল্লাহ পবিত্রতা পছন্দ করেন। তাই অজু করে আপনি পবিত্র হয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলে আল্লাহ কবুল করেন
- নফল নামাজ পড়ে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন। তাই দিনে যেকোনো সময় যদি আপনি নকল নামাজ পড়ে দোয়া করেন তাহলে আল্লাহ কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ।
- অত্যন্ত বিনীতভাবে এবং বিনয়ের সঙ্গে দোয়া চাইলে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। নবীজি( সাঃ) বলেছেন, 'দোয়ায় বারবার অনুনয়- বিনয়কারীকে আল্লাহ তা'আলা পছন্দ করেন'।
- দোয়া করার সময় দুহাত তুলে বিনয় ও দাসত্ব প্রকাশ করে দুই হাতের তালু আসমানের দিকে রাখতে হবে এবং দুই হাতের মাঝে ২/১ আঙ্গুল পরিমাণ ফাক রেখে দোয়া করতে হবে।
- আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না।
- হালাল উপার্জনকারীকে আল্লাহ ভালবাসেন। হালাল উপার্জন দোয়া কবুলের খুব ভালো উপায়। হালাল উপার্জনকারী দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা তা কবুল করবেন।
- আযানের পর এবং ইকামতের মাঝখানে এই সময় দোয়া কবুল হয়। আযানের উত্তর দেওয়ার পর থেকে নামাজ শুরু হওয়ার ইকামত পর্যন্ত দোয়া করলে দোয়া কবুল হবে ইনশাআল্লাহ।
- ভোর রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে দোয়া চাইলে আল্লাহ সে বান্দার দোয়া কবুল করেন।
- আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া চাওয়ার আগে বেশি করে তওবা পাঠ করা। দোয়া চাওয়ার আগ মুহূর্তে তওবা করে নিলে দোয়া কবুল হয়।
- জুমুয়ার দিন আসরের পর থেকে মাগরিবের সময় পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়। তাই এ সময় আপনি দোয়া করতে পারেন।
কোন জিকির করলে চেহারা সুন্দর হয়
আল্লাহ তাআলার সুন্দর সুন্দর গুনবাচক নামের মধ্যে বিভিন্ন নামের বিভিন্ন ফজিলত রয়েছে। তার মধ্যে 'আল খালিক্বু' যার অর্থ সকল কিছুর সৃষ্টিকারী।
ফজিলত
যে ব্যক্তি সব সময় এগুনবাচক নাম 'আল খালিক্বু' এর জিকির করবেন, আল্লাহ তাআলা তার অন্তর ও চেহারা কে উজ্জ্বল করে দেন।যে ব্যাক্তি 'আল খালি কু আল্লাহর এই গুণবাচক নামের জিকির করবেন আল্লাহ তাআলা তার জন্য এমন একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করবেন তার জন্য কিয়ামতের দিন পর্যন্ত ইবাদত করতে থাকবে।
হযরত আব্দুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি রাতের বেলায় 'আল খালিক্বু' আল্লাহর এই গুণবাচক নাম যে ব্যক্তি রাতে বেশি বেশি জিকির করবেতার অন্তর ও মুখো মন্ডল আলোময় ও উজ্জ্বল হবে এবং সব ভালো কাজে যুক্ত থাকবে।
আর যে ব্যক্তি ১০০০ বার আল্লাহর এ গুণবাচক নাম আল 'আল খালিক্বু' জিকির করবে আল্লাহর ইচ্ছায় তার ছেলে সন্তান নসিব হবে। আমাদের প্রিয় নবীজি আল্লাহর এই গুণবাচক নামের আলাদা আলাদাভাবে আমল করার ঘোষণা করেছেন।আশা করি, আল্লাহর কোন নাম জিকির করলে চেহারা সুন্দর বৃদ্ধি পায় সে সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন।
কোন নামাজ পড়লে চেহারা সুন্দর হয়
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে একজন ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক নানান উপকারিতা রয়েছে। ফজরের নামাজ দিনের শুরুতে একটি ফরজ ইবাদত। ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করলে শরীর ও মন সতেজ হয়। আত্মা প্রশান্ত হয়।ফজরের নামাজ পড়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, মানসিক চাপ কমে যায় ইত্যাদি নানান উপকার হয়।
ফজরের নামাজ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ( সাঃ) 'ফজরের দুই রাকাত নামাজ দুনিয়া ও তার সব কিছুর চেয়ে উত্তম'। আমরা অনেকেই বলে থাকি, ফজরের নামাজের চেহারার নূর বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই কথার সত্যতা কতখানি তা বলা যায় না। অনেক জায়গায় পাওয়া যায়, ফজরের নামাজ পড়লে চেহারার নুর বৃদ্ধি পায়, জোহরের নামাজ পড়লে বরকত হয়, আসরের নামাজ পড়লে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়, মাগরিবের নামাজ পড়লে দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়, এশার নামাজ পড়লে প্রশান্তিময় ঘুম হয়।
আরো পড়ুনঃ পিরিয়ডের ব্যাথা কমানোর ইসলামিক উপায়।
কিন্তু অনেক জায়গায় বলা হয় এটার কোন সহীহ হাদিস নেই।এটা সম্পর্কে নবীজির (সা.)বলেছেন কিনা তা কোথাও জানা যায় না। অতএব নবীজি (সা.) যে কথা বলেন নি সে কথার মিথ্যা প্রচার ইসলামে বহির্ভূত কাজ। তবে এ কথা সত্য যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন উপকার সাধিত হয়। তাই আল্লাহতালা আমাদের সবাইকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুন।
লেখকের মন্তব্য :কোন আমল করলে চেহারা সুন্দর হয়
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনারা জানতে পেরেছেন কোন আমল করলে চেহারা সুন্দর হয় সহ দোয়া কবুলের আমল সম্পর্কে।তাছাড়া আপনারা আরো জানতে পেরেছেন, কোন জিকির করলে চেহারা সুন্দর হয় এবং কোন নামাজ পড়লে চেহারা সুন্দর হয়। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকটি মানুষকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন।
তার সৃষ্টির কোন তুলনা হয় না। তবে তার সৃষ্টির মানুষের মধ্যে গঠনগত বা চেহারার রং গত কিছু পার্থক্য রয়েছে। তাই কিছু কিছু মানুষ তার চেহারার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। তবে ইসলামের চেহারা পরিবর্তনের কোন আদেশ নেই। তবে আপনি চেহারা ভালো রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক রূপচর্চা, খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি করতে পারবেন।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ মানুষের চেহারায় নুর সৃষ্টি করেন। তাই আমাদের সকলের উচিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া।প্রিয় পাঠক, আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এরকম বিভিন্ন তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের এই সাইটটি ভিজিট করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url