বাচ্চা না ঘুমালে কি করনীয় - বাচ্চা রাতে না ঘুমালে দোয়া
বাচ্চা না ঘুমালে কি করনীয় কি এবং বাচ্চা রাতে না ঘুমালে দোয়া সম্পর্কে জানতে চেয়ে আর্টিকেলটিতে ক্লিক করেছেন। আমি এই আর্টিকেলে আপনাদের জানাবো বাচ্চা না ঘুমালে কি করনীয় কি? বাচ্চা কি কি করলে অনেক দ্রুত ঘুমিয়ে যায় এবং বাচ্চা রাতে না ঘুমালে কি দোয়া পড়তে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
এছাড়া আরো জানবেন- বয়স অনুযায়ী শিশুর ঘুমের তালিকা এবং বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাকুনি "কিসের" লক্ষণ সে সম্পর্কে জানতে পারবেন।
ভূমিকা: বাচ্চা না ঘুমালে কি করনীয় - বাচ্চা রাতে না ঘুমালে দোয়া
বাচ্চাদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশে ঘুম অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। তবে এই ঘুম না হওয়া অতি সাধারণ একটি বিষয়। বিভিন্ন কারনেই বাচ্চারা ঘুমাতে চায় না বা পারে না অথাবা ঘুমাতে অসুবিধা হয়ে থাকে। বিশেষ করে নবজাতক থেকে শুরু করে ৫/৬ মাসের বাচ্চাদের এই সমস্যা গুলো হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত
ঘুম না হওয়া কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- শারীরিক অস্বস্তি কারণে, পরিবেশগত কারণে বা মানসিক কারণ ঘুম না হওয়ার কারন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ সকল কিছু সাইডে রেখে, প্রতিদিন বাচ্চার ঘুম নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া বাচ্চার শেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা, মনোযোগের অভাব, মেজাজ খিটখিটে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাচ্চা না ঘুমালে কি করনীয়
বাচ্চা না ঘুমানো অনেক কারণই থাকতে পারে। তার নিয়ে বাবা মায়ের চিন্তার কোন কারণ নেই। এটি অতি সাধারণ বিষয়। বাচ্চা যদি ঘুমাতে না চায় বা ঘুমের সমস্যা হলে নিম্নে লিখিত কিছু উপায় মেনে বাচ্চাকে সহজেই ঘুমে দেওয়া সম্ভব। চলুন জানি বাচ্চা না ঘুমালে কি করনীয় রয়েছে সে সম্পর্কে-
নিদিষ্ট সময়ে ঘুম: প্রতিদিন বাচ্চাকে একই সময়ে ঘুমানোর সুযোগ করে দিন। যাতে সেই সময়টি আসলেই তার ঘুম চলে আসে। ঘুমানোর আগে বাচ্চাকে শিক্ষনীয় গল্প শোনানো, গান, গজল বা কুরআন তিলওয়াত শুনাতে পারেন। এটি নিয়মিত হতে বাচ্চার মস্তিকে একটি জায়গা দখল হবে যে, এই সময়টি তার ঘুমানোর সময়।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন বাড়ানোর খাবার
দিনে ব্যস্ত রাখুন: আপনার সন্তানকে দিনের বেলা যেকোন শারীরিক শক্তি ক্ষয় হয় এমন কাজে ব্যস্ত রাখুন। যাতে ঘুমানোর আগে বাচ্চা অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর যদি বাচ্চা এমদম ছোট হয় তাহলে বাচ্চাকে হাত পা ধীরে ধীরে ম্যাসেজ করে দিন বাচ্চা ধীরে ধীরে ঘুমে যাবে।
সঠিক পরিবেশ: বাচ্চার ঘুমের জন্য অবশ্যই একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরী করার চেষ্টা করুন। যেখানে অনেক বেশি আলো থাকবে না। আশে পাশে কোন শব্দ থাকবে না এবং তাপমাত্রা যাতে স্বাভাবিক থাকে সেদিকে ও লক্ষ রাখতে হবে। শান্ত পরিবেশে বাচ্চাকে অল্প আলোতে ঘুমাতে দিন। এছাড়া বাচ্চাকে নানা ধরণের ছড়া শুনিয়ে ঘুমনোর চেষ্টা করুন।
স্কিন প্লে থেকে দূরে রাখুন: বাচ্চাদের ঘুমানো ২ ঘন্টা আগে থেকে বাচ্চাদের কোন মোবাইল, ট্যাবলেট বা কম্পিউটার ব্যবহারে বিরত রাখার চেষ্টা করুন। ঘুমানোর আগে বাচ্চারা মোবাইল বা অন্য কোন ডিভাইজে সময় কাটালে, তাতে করে তাদের মস্তিস্ক আরো সক্রিয় হয়ে ওঠে। যার কারণে বাচ্চাতে ঘুমাতে অসুবিধা হয়।
অতিরিক্ত খাবার বর্জন: কেবলমাত্র ঘুমানোর আগে নয়, বাচ্চাকে কখনোই অতিরিক্ত খাবার খাওয়াবেন না। এতে করে বাচ্চার শারীরিক অস্বস্তির কারণ হতে পারে। তাই বাচ্চাকে ঘুমানো আগে অতিরিক্ত খাবার বা পানীয় পান করাবেন না। এতে বাচ্চার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
উপরিউক্ত অভ্যাসগুলো তৈরী করতে অনেকটাই সময়ের প্রয়োজন। তাই বাবা মায়ের উচিত বাচ্চাকে অনেকটা সময় নিয়ে উক্ত বিষয় গুলোতে অভ্যাস করানো উচিত। তাহলে বাচ্চার ঘুমের যে সমস্যা তা আস্তে আস্তে দূর হবে এবং বাচ্চা নিয়মিত সময় করে ঘুমাতে পারবে।
বাচ্চা রাতে না ঘুমালে দোয়া
ইসলামীক শরিয়াহ ভিত্তিক বাচ্চাদের অনেক ঘুমানোর দোয়া রয়েছে, যেগুলো পড়ে বাচ্চাদের অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে দেওয়া সম্ভব। তাই বাচ্চা যদি রাতে না ঘুমায় বা অস্থিরতা বোধ করে তাহলে নিম্নউক্ত কিছু দোয়া পড়ে বাচ্চাদের গায়ে ফুঁ দিলে বাচ্চারা অতি দ্রুত ঘুমে পড়ে। চলুন দোয়া গুলো সম্পর্কে জানি-
আয়তাল কুরসি: বাচ্চা যদি রাতে না ঘুমায় তাহলে আয়তাল কুরসি পড়ে তার শরীরের ফু দিতে পারেন। এটি করার ফলে বাচ্চা শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবে এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে। নিম্নে আয়তাল কুরসির বাংলা উচ্চরণসহ দেওয়া হলো-
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম। লা তা'খুঝুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাওম। লাহু মা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ ইন্দাহু ইল্লা বিইযনিহি। ইয়ালামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খলফাহুম। ওয়ালা ইউহীতুনা বি শাইইঁ মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা'আ। ওয়াসিআা কুরসিয়্যুহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফযুহুমা ও হুয়াল আলিয়্যুল আজীম।
সূরা ইখলাস, ফালাক, নাসঃ বাচ্চা কান্না বন্ধ সহ বাচ্চা অতি দ্রুত ঘুমানোর জন্য তিনবার সুরা ইখলাস, তিনবার সুরা ফালাক এবং তিন বার সুরা নাস পড়ে ফু দিলে বাচ্চা অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। এই দোয়া গুলো পড়ার পড়ে বাচ্চা মানসিক ভাবে শান্তি পেয়ে আরামে ঘুমে যাবে। আর এই পদ্ধতিতে বাচ্চাকে ঘুমিয়ে দেওয়া সম্ভব।
ঘুমানোর দোয়াঃ ঘুমানোর আগে একটি দোয়া রয়েছে সেটি পড়তে পারেন। সেই দোয়াটি হলো- আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া। যার বাংলা অর্থ হলো- হে আল্লাহ, আমি আপনার নামেই ঘুমিয়ে পড়ি আবার আপনার নামেই জাগ্রত হই। আপনার বাচ্চা যদি রাতে না ঘুমায় উপরিউক্ত দোয়া গুলো পড়তে পারেন।
বয়স অনুযায়ী শিশুর ঘুমের তালিকা
বয়স অনুযায়ী শিশুদের ঘুমের চাহিদা আলাদা হয়ে থাকে। শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ছোট শিশুদের ঘুমের কোন বিকল্প নেই। তবে কিছু শিশুর শারীরিক গঠন ও পরিবেশের উপর নির্ভর করে ঘুমের সময় আলাদা হতে পারে। নিম্নে বয়স অনুযায়ী শিশুর ঘুমের তালিকা দেওয়া হলো-
০ থেকে ৩ মাস বয়সের শিশু: এই বয়সের শিশুদের প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৭ ঘন্টা ঘুমানো দরকার। সেটি দিনে বা রাতের যে কোন সময় হতে পারে। তবে এই বয়সের শিশুরা যেকোন সময় ঘুমাতে পারে আবার জাগ্রত হতে পারে। তবে ০ থেকে ৩ মাসের শিশুরা একটানা ৩ থেকে ৪ ঘন্টা ঘুমাতে পারে।
৩ থেকে ৬ মাস বয়সের শিশু: এই বয়সের শিশুরা প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ ঘন্টা ঘুমাতে পারে বা তাদের ঘুমের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এই বয়সে শিশুরা রাতে বেশি ঘুমিয়ে থাকে। দিনে ও ঘুমাতে পারে কিন্তু আগের চেয়ে একটু কম হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ নবজাতকের গায়ের রং পরিবর্তন হয় কেন
৬ থেকে ১২ মাসের শিশু: এই বয়সের শিশুরা প্রতি দিন ১৩ থেকে ১৪ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমাতে পারে। ৬ মাসের পর থেকে শিশুরা মূলত রাতে অনেক বেশি ঘূমিয়ে থাকে। ৬ থেকে ১২ মাসের শিশুরা ২৪ ঘন্টায় ২ থেকে ৩ বার ঘুমাতে পারে এবং সেটি স্বাভাবিক।
১ থেকে ২ বছরের শিশু: এই বয়সের শিশুরা মূলত দিনে ১১ থেকে ১৪ ঘন্টা পযর্ন্ত ঘুমাতে পারে। রাতে ঘুমানোর পাশাপাশি দিনে ও ঘুমাতে পারে।
৩ থেকে ৫ বছরের শিশু: ৩ থেকে ৫ বছরের শিশুরা প্রতিদিন ১০ থেকে ১৩ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমাতে পারে। এই বয়সের শিশুরা বেশির ভাগ রাতে ঘুমায় এবং দিনে ১ বার ঘুমাতে পারে।
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাকুনি "কিসের" লক্ষণ
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাকুনিকে মাইয়োক্লোনিক জার্ক বলা হয়। এটি সাধারণত ঘুমের শুরুর দিকে হয়ে থাকে, বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি অনেক বেশি হয়ে থাকে। তবে এই বিষয় নিয়ে অনেক মা বাবা চিন্তা করেন। এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই এটি স্বাভাকি একটি ঘটনা। চলুন জানি বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাকুনি "কিসের" লক্ষণ-
স্বাভাবিক ঝাকুনি: বাচ্চারা ঘুমের মধ্যে হালকা ঝাকুনি দিয়ে থাকে এটি প্রচলিত একটি ঘটনা। ঘুমের শুরুর দিকে বাচ্চাদের শরীর যখন শান্ত হওয়া শুরু করে, তখন বাচ্চাদরে পেশী গুলো ততক্ষনাত সংকোচন হয়ে যায়। আর মূলত এই কারনেই বাচ্চারা ঘুমের মধ্যে ঝাকুনি দিয়ে ওঠে। এই ঝাকুনিকে বলা হয় হিপনিক জার্ক।
স্লিপ মাইযোক্লোনাস: এটি হলো যখন বাচ্চারা ঘুমিয়ে থাকে, এটি অন্য সকল কিছুর মত স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। যা কেবল মাত্র ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। এটি বাচ্চার শরীরের জন্য ক্ষতির কোন কারণ নয়। আবার পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়াতে ও এটি হতে পারে। তাই বাচ্চার বয়স অনুযায়ী ঘুম নিশ্চিত করা জরুরি।
মানসিক চাপ: অনেক সময় বাচ্চারা অনেক পড়াশোনা বা অন্য কোন বিষয় নিয়ে মানসিক চাপে থাকলে এই সমস্যা হতে পারে। এছাড়া বাচ্চারা নতুন পরিবেশ বা নতুন কোন পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পেরে অনেকটা মানসিক চাপে থাকে। যে কারনে বাচ্চারা ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি দিতে পারে।
মৃগী রোগের লক্ষন: যদি বাচ্চারা ১ থেকে ২ বার ঝাঁকুনি দেয় তাহলে সেটি স্বাভাবিক। কিন্তু বাচ্চা যদি অনেক বেশি ঝাঁকুনি দেয় এবং তা একটু পরপর দেয় তাহলে তা এটি মৃগী রোগের লক্ষণ হতে পারে। আপনার সন্তান যদি এই ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরার্মশ নেওয়া উচিত।
লেখকের মন্তব্য: বাচ্চা না ঘুমালে কি করনীয় - বাচ্চা রাতে না ঘুমালে দোয়া
প্রিয় পাঠক, এতক্ষনে বাচ্চা না ঘুমালে কি করনীয় হতে পারে এবং বাচ্চা রাতে না ঘুমালে দোয়া সমূহ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এছাড়া বয়স অনুযায়ী শিশুর ঘুমের তালিকা এবং বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাকুনি "কিসের" লক্ষণ সম্পর্কে পূনাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন। তাই উপরে উল্লেখিত তালিকা অনুযায়ী প্রতিদিন বাচ্চাদের ঘুম নিশ্চিত করুন।
অন্যথায়, বাচ্চাদের ঘুম কম হলে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হতে পারে। এতক্ষন আমাদের পাশে থাকায় এবং আপনার মূল্যবান সময় নিয়ে আর্টিকেলটি পড়ায় আপনাকে সুস্বাগতম। এইরকম পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। এছাড়া কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url