কোন গোলাপ জল ভালো - গোলাপ জল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
কোন গোলাপ জল ভালো তা জানতে চান? অথবা গোলাপ জল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আপনি ঠিক আর্টিকেলটিতে ক্লিক করেছেন। এই পুরো আর্টিকেল জুড়ে আমি রাবেয়া আপনাদের জানাবো কোন গোলাপ জল ভালো হবে এবং গোলাপ জল দিয়ে ফর্সা হওয়ার নানা উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।
আপনাদের সুবিধার্থে আরো জানাবো- ব্রণ দূর করতে গোলাপ জলের ব্যবহার, গোলাপ জলের দাম কত এবং গোলাপ জলের উপকারিতা সম্পর্কে।
ভূমিকা: কোন গোলাপ জল ভালো - গোলাপ জল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
গোলাপ জল হলো একধরনের প্রাকৃতিক সুগন্ধিযুক্ত তরল। যা গোলাপের পাপড়ি থেকে তৈরী করা হয়ে থাকে। গোলাপের পাপড়ি পানির সাথে ফুটিয়ে তা বাষ্পতে পরিণত করা হয়। সে বাষ্পকে সংরক্ষন করে গোলাপ জ পাওয়া যায়।গোলাপ জল আমাদের সৌন্দর্য এবং স্বাস্থগত উন্নতিতে ব্যবহার করা হয়।
গোলাপ জলে মনোমুগ্ধকর সুঘ্রাণ এবং ত্বক সুরক্ষার সকল বৈশিষ্ট বিদ্যমান থাকায় গোলাপ জল অনেক বেশি জনপ্রিয়। কেবলমাত্র শারীরিক যত্নেই নয় গোলাপজল বিভিন্ন খাবার তৈরী বা মিষ্টিতে সুগন্ধ বৃদ্ধি করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গোলাপ ফলের আরো উপকারিতা সম্পর্কে জানতে সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কোন গোলাপ জল ভালো
গোলাপ জল আমাদের ত্বক বা শারীরিক যত্নে খুবই উপকারী একটি উপাদান। তবে এই গোলাপ জলে গুনমান যদি কৃত্রিম ভাবে নষ্ট করা হয়, তাহলে সেটি ব্যবহারে আমাদের ত্বক বা শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই গোলাপ জল ক্রয় করার পূর্বে অবশ্যই এর গুনমান সম্পর্কে জেনে কোন গোলাপ জল ভালো সেটি ক্রয় করা উচিত। চলুন জানি বাজারে কোন গোলাপ জল ভালো বা আপনার জন্য উপযুক্ত-
গোলাপ জল অবশ্যই প্রাকৃতিক উপাদান সম্পূর্ণ হতে হবে। বাজারে নানা ধরনের গোলাপ জল পাওয়া যায়। যার বেশির ভাগই প্রিজারভেটিভ যুক্ত রং বা সুগন্ধিযুক্ত হয়ে থাকে। তাই গোলাপ জল ক্রয় করার পূর্বে গোলাপ জলটি সম্পূর্ন প্রাকৃতিক উপদান দিয়ে তৈরী কি না তা নিশ্চিত করুন। তার জন্য গোলাপ জলের বোতলে কি কি উপাদান দিয়ে তৈরী তা দেখে নিন।
প্রাকৃতিক গোলাপ জলের গন্ধ খুব বেশি গাঢ় বা তীব্র হয় না। বাজারে প্রচলিত কিছু গোলাপ জল রয়েছে যাতে সুগন্ধি বৃদ্ধি করার জন্য পারফিউম ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের গোলাপ জল এড়িয়ে চলুন। কারণ এটি আপনার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। ক্রয় করার সময় অবশ্যই হালকা গন্ধযুক্ত বা প্রকৃতিক গন্ধযুক্ত গোলাপ জল কিনুন। এই ধরনের গোলাপ জল শারীরিক যত্নে ভালো।
কিছু গোলাপ জলে অ্যালোভেরা বা ভিটামিন ই সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। এই ধরনের গোলাপ জল ত্বক এবং শারীরিক যত্নে অনেক বেশি ভালো হয়ে থাকে। কারণ অ্যালোভেরা এবং ভিটামিন ই দুটি আমাদের ত্বক ও শরীরের জন্য উপকারি। তবে আপনার ত্বক কেমন বা আপনার ত্বকে কোন ধরনের গোলাপ জল মানান সই সেটি নির্বাচন করা জরুরি।
কিছু ভালো মানের গোলাপ জল যা আপনি বাজার যাচাই করলেই জানতে পারবেন। বাজারে যেসকল গোলাপ জলের চাহিদা অনেক বেশি, উচ্চ মুল্যে হলেও সেই গোলাপ ফলটি কেনার চেষ্টা করুন। কারণ যে গোলাপ জল সবাই ব্যবহার করা ফলে উপকৃত হচ্ছে, আপনি ও হবেন। তবে চেষ্টা করবেন সবসময় বাহিরের গোলাপ জল ব্যবহার করার। নিম্নে কিছু ভালো গোলাপ জলের নাম দেওয়া হলো-
- Dabur Gulabari
- Kama Ayurveda rose water
- forest essentials rose water
- patanjali rose water
- juicy chemistry bulgarian rose water
গোলাপ জল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
গোলাপ জল ত্বক ফর্সা করার প্রচীন কাল থেকেই প্রচলিত একটি উপাদান। এর নানা পুষ্টি উপাদান ত্বককে উজ্জ্বল করার পাশাপাশি ত্বকের দাগ থেকে শুরু করে সকল কিছু নিরাময়ে কাজ করে। তবে যে কেবলমাত্র গোলাপ জল ব্যবহার করেই ফর্সা হওয়া যায় বিষয়টি এমন না। তবে অন্যান্য উপাদানের সাথে ব্যবহার করলে ফর্সা করতে সাহায্য করে। চলুন জানি গোলাপ জল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে-
গোলাপ জল ও মধু ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখা সম্ভব। প্রথমে ১ টেবিল চামচ পরিমান গোলাপ জলের সাথে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে সহজেই পেস্ট তৈরী করে নিন এবং শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার ত্বক আগের থেকে অনেকটা নরম ও ময়েশ্চারাইজ হওয়ার সাথে সাথে ফর্সা ও হয়েছে।
গোলাপ জল ও কাঁচা দুধ ব্যবহার করে ফর্সা হওয়া সম্ভব। তার জন্য আপনাকে একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ পরিমান গোলাপজল এবং ২ টেবিল চামচ পরিমান কাঁচা দুধ একসাথে ভালোভাবে মিশ্রিত করুন। মিশ্রিনটি হয়ে গেলে এবার আপনার ত্বকে ধীরে ধীরে লাগান এবং একটু পরে তা ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন দুধে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিট এবং গোলাপ জলের পুষ্টিকর উপাদান মিশে আপনাকে প্রাকৃতিক ভাবে ফর্সা করতে সাহায্য করবে।
গোলাপ জলের সাথে লেবুর রস মিশে ও নিজেকে প্রাকৃতিক ভাবে ফর্সা করা যায়। তার জন্য একটি লেবু চিপে যে পরিমান রস হয়ে তা সাথে পরিমান মত গোলাপ ফল মিশান। পরিমান যাতে অনেক বেশি বা কম না হয়ে যায়। এমন ভাবে তৈরী করুন যাতে আপনার সমস্ত মুখে লাগানো যায়। এবার আস্তে আস্তে আপনার ত্বকে গোলাপ জল ও লেবুর মিশ্রনটি লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট পরে তা ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার ত্বকে থাকা সকল ময়লা অপসরণ হয়ে ত্বক ফর্সা হয়েছে।
গোলাপ জল ও মুলতানি মাটি ব্যবহার করে নিজেকে ফর্সা রাখা যায়। এজন্য আপনাকে প্রথমে খাঁটি মুলতানি মাটি সংগ্রহ করতে হবে। তার পর সেই মাটিকে মিহি করে গুড়া করে তাতে পরিমান মত গোলপ জল দিয়ে একটি প্যাক তৈরী করতে হবে। প্যাকটি যাতে অনেক বেশি শক্ত বা নরম না হয়ে যায় তা লক্ষ রাখতে হবে। এবার প্যাকটি মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষ করুন, শুকালে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি আপনার ত্বকে থাকা সকল তেল, ময়লা কাটিয়ে আপনার ত্বককে ফর্সা করবে।
গোলাপ জলের উপকারিতা
গোলাপ জল এমন এক পুষ্টিকর উপাদান যা শারীরিক বা মানসিক দুই অবস্থাতেই প্রশান্তি যোগাতে পারে। সেই বহু বছর আগে থেকেই সবাই এটি ব্যবহার করে আসছে তাদের ত্বক এবং শারীরিক যত্নে। গোলাপ জলের বহুমুখী উপকারিতার জন্য সবার কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয় এই গোলাপ জল। চলুন জানি গোলাপ জলের উপকারিতা সম্পর্কে-
ত্বকের যত্নেঃ আমরা ইতমধ্যে জেনেছি ত্বকের জন্য কতটা উপকারি। গোলাপ জল আমাদের ত্বককে হাইড্রেট রাখে এবং প্রাকৃতিক ভাবে ময়েশ্চারাইজ করে। আমাদের ত্বকের আদ্রতা বজায় রেখে শষ্কতা থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে গোলাপ জল। নিয়মিত গোলাপ জল ব্যবহারে ত্বক কোমল ও মসৃণ।
ত্বকের ব্যথা কমাতেঃ আমাদের ত্বকে নান ধরনের সমস্যা যেমন- ব্রণ, অ্যার্লজি, চুলকারি সমস্যা হয়ে থাকে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গোলাপ জল ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ গোলাপ ফলে থাকা অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট আমাদের ত্বকে যাবতীয় সকল ব্যথা দূর করতে কাজ করে। এছাড়া রোদে পোড়া দাগ দূর করতে ও গোলাপ জল বেশ কার্যকারি।
চোখের প্রশান্তিঃ আমরা সারাদিন বিভিন্ন ডিভাইজ ব্যবহার করে থাকি যার কারণে আমাদের চোখ অনেক সময় জ্বালা করে এবং বিভিন্ন কারণে চোখ ফুলে যায় ও ঝাপসা দেখি। এই সমস্যা সমাধানে গোলাপ জল বেশ উপকারি হয়ে থাকে। গোলাপ জল দিয়ে চোখ পরিস্কার করলে বা তুলাতে করে গোলাপ জল চোখের উপরে রাখলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যার কারণে চোখ অনেকটা সতেজ হয় এবং আমরা চোখে অনেক ভালো দেখি।
চুলের যত্নেঃ চুলের জন্য গোলাপ ব্যবহার সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি এবার জানবো উপকারিতা। এটি চুলে ব্যবহারের ফলে চুলের আদ্রতা স্বাভাবিক থাকে। চুলে থাকা খুশকি অনেকটা কমে যায়। এছাড়া নিয়মিত চুলে গোলাপ জল ব্যবহার করার ফলে চুল হয় উজ্জ্বল ও ঝলমলে। যার জন্য চুল আলাদা করে সাইনিং করার প্রয়োজন হয় না, গোলাাপ জল ব্যবহারে প্রাকৃতিক ভাবেই হয়ে যায়।
ব্রণ দূর করতে গোলাপ জলের ব্যবহার
ব্রণ দূরকরতে গোলাপ জল একটি কার্যকর উপাদান। যা নিয়মিত ব্যবহারের ফলে মুখ থেকে ব্রণ দূর হওয়ার পাশাপাশি মুখ থেকে যাবতীয় সকল দাগ ও দূর হয়ে যায়। এর মূল কারণ হলো গোলাপ জলে থাকা সকল প্রাকৃতিক উপাদন। চলুন জানি ব্রণ দূর করতে গোলাপ জলের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত-
গোলাপ জলে রয়েছে অ্যান্টি ব্যকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা আমাদের মুখের সকল ব্যকটেরিয়া ধ্বংস করতে সক্ষম। গোলাপ জল ব্যবহারের ফলে ত্বকে থাকা পিএইচ স্তর স্বাভাবিক থাকে, যা ব্রণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। গোলাপ জল ব্যবহারে ত্বকে থাকা ব্রণ হতে যে ব্যথা বা প্রদহের সৃষ্টি হয় তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
গোলাপ জলের সাথে চায়ের তেল ব্যবহারে ব্রণ দূর করা সম্ভব। ৩ থেকে ৪ ফোঁটা চায়ের তেলের সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে কটন দিয়ে ব্রণের উপর লাগিয়ে রাখলে ব্রণ রোধে কাজ করে। কারণ এটি একটি অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। তাই ব্রণে থাকা যত ব্যকটেরিয়া সবগুলো ধ্বংস করে ত্বক থেকে ব্রণ দূর করে।
গোলাপ জলের সাথে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারের মাধ্যমে ও ব্রণ দূর করা সম্ভব। এ জন্য গোলাপ জলের সাথে অ্যালোভেরা জেল সমপরিমান নিয়ে একটি প্যাক তৈরী করুন এবং ১০ থেকে ১৫ মিনিট আপনার ব্রণ আকান্ত জায়গায় লাগিয়ে রাখুন। এতে করে আপনার ব্রণের প্রদাহ কমার সাথে সাথে ব্রণ ও ভালো হবে, কোন দাগ ও থাকবে না।
লেখকের মন্তব্য: কোন গোলাপ জল ভালো - গোলাপ জল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
প্রিয় পাঠক, এতক্ষনে কোন গোলাপ জল ভালো তা জানার সাথে সাথে গোলাপ জল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে ও জানতে পেরেছেন। আবার ব্রণ দূর করতে গোলাপ জলের ব্যবহার এবং গোলাপ জলের উপকারিতা কি কি সে সম্পর্কে ও জেনেছেন। নিয়মিত গোলাপ জল ব্যবহারে ত্বকে সৌন্দর্যতা বাজায় থাকে।
কিন্তু নকল গোলাপ জলের অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বকের ক্ষতির কারণ হতে পরে। এতক্ষন আমাদের পাশে থাকায় এবং আপনার মূল্যবান সময় নিয়ে আর্টিকেলটি পড়ায় আপনাকে সুস্বাগতম। এইরকম পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। এছাড়া কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url