কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা - কাঁচা কলা খেলে কি ওজন বাড়ে
অনেকেই জানতে চেয়েছেন কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং কাঁচা কলা খেলে কি ওজন বাড়ে নাকি স্বাভাবিক থাকে। আমি রাবেয়া আপনাদের মাঝে আলোচনা করবো কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং কাঁচা কলা খেলে কি ওজন বাড়ে নাকি কমে সে সম্পর্কে বিস্তারিত। তাই মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ন আর্টিকেলটি পড়ুন।
এছাড়া আরো আলোচনা করবো- গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা, কাঁচা কলা খাওয়ার নিয়ম এবং কাঁচা কলা খেলে কি গ্যাস হয় নাকি হয় না। সময় দিয়ে সাথে থাকুন আশা করি উপকৃত হবেন।
ভূমিকা: কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা - কাঁচা কলা খেলে কি ওজন বাড়ে
কাঁচা কলা একটি পুষ্টিগুন সম্পূর্ন খাবার, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি। কাঁচা কলাতে প্রাকৃতিক চিনি কম থাকে এবং শ্বেতসার অনেক বেশি থাকায়, এটি ধীরে ধীরে গ্লুকোজে রুপান্তর হয়ে আমাদের রক্তে থাকা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে। কাঁচা কলা আমাদের ওজন কমাতে ও বেশ কার্যকর।
এছাড়া কাঁচা কলাতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি। যা আমাদের শরীরে সম্পূর্ণরুপে পুষ্টি যোগান দেয়। কাঁচা কলা মূলত রান্না করে খাওয়া হয় এবং সব ধরনের রান্নাতেই খাওয়া যায়। কাঁচা কলা আমাদের রান্নার স্বাদ আরো দ্বিগুন করে তোলে। কাঁচা কলা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে নিচের অংশটুকু পড়ুন।
কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁচা কলা যাকে অনেকেই সবুজ কলা ও বলে থাকে। পাক কলার তুলনায় কাঁচা কলাতে ভিটামিন বা অন্যান্য পুষ্টিগুন অনেক বেশি থাকে। যা আমাদের শারীরিক নানা পুষ্টি প্রদান করে। তবে প্রতিটি জিনিসেরই ভালো এবং খারাপ দিক থাকে। তেমনি কাঁচা কলার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতা ও রয়েছে। চলুন জানি কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে-
কাঁচা কলার উপকারিতা:
- কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে এতে থাকা ফাইবারের কারনে আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং কোষ্টকাঠিন্য থেকে শুরু করে পেটে সকল সমস্যা দূর করে।
- যাদের ওজন অনেকটা বেশি তারা ওজন কমাতে কাঁচা কলা খেতে পারেন। কাঁচা কলা অনেকটা আঁশ জাতীয় খাবার হওয়াতে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষুদা কম লাগে। কম খেতে হয় যার কারনে ওজন কমে যায়।
- উচ্চ রক্তচাপে কাঁচা কলা এক বিকল্পহীন খাবার। কাঁচা কলা থাকা পটাশিয়াম আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে।
- কাঁচা কলা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। এর মূল কারণ হলে কাঁচা কলায় থাকা ভিটামিন সি।
- কাঁচা কলায় থাকা কার্বোহাইড্রেট আমাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং শক্তি সঞ্চয় করতে সহায়তা করে।
- যাদের অনেক বেশি ডায়াবেটিস তারা কাঁচা কলা খেতে পারেন। কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস অনেকটা কমে যায়।
- কাঁচা কলা হৃদপিন্ডের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ও বেশ কার্যকর হয়ে থাকে। এতে থাকা পটাশিয়াশ যার মূলে রয়েছে।
- কাঁচা কলা যেকোন পরিবেশে যে কোন রান্নায় ব্যবহার করা যায় এবং রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে দেয়।
কাঁচা কলার অপকারিতা:
- অনেকের কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যাদের কাঁচা কলাতে অ্যালার্জি রয়েছে তারা কাঁচা কলা এড়িয়ে চলুন।
- স্বাভাবিক মাত্রায় কাঁচা কলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা অনেক থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
- যাদের কিডনি রোগের সমস্যা রয়েছে তাদের কাঁচা কলা না খাওয়াই উত্তম। কাঁচা খাওয়ার ফলে অতিরিক্ত পটাশিয়াম স্বাভাবিক মাত্রায় শরীর থেকে বের হয় না যার কারনে কিডনি সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
- কাঁচা কলা মাত্রাতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আমাদের পেটের গ্যাসের সমস্যা বা পেট ফাঁপার মত সমস্যা হতে পারে। কার ফাইবার স্বাভাবিক মাত্রায় খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় আর অতিরিক্ত খেতে বদহজম হয়ে থাকে।
- মাত্রাতিরিক্ত কাঁচা কলা খেলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। স্বাভাবিক মাত্রায় খেলে ক্যালরি স্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায় কিন্তু অতিরিক্ত খেলে অধিক ক্যালোরি বৃদ্ধি হওয়ার কারনে আমাদের ওজন অনেকটাই বৃদ্ধি পায়।
কাঁচা কলা খেলে কি ওজন বাড়ে
অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করে থাকেন যে, কাঁচা কলা থেলে কি ওজন বাড়ে বা ওজন বাড়ার সাথে কাঁচা কলা খাওযার সম্পর্ক রয়েছে? তাদের প্রশ্নে উত্তর হলো কাঁচা কলা খাওয়ার সাথে ওজন বাড়ার কোন সম্পূর্ক নেই বরং ওজন কমানো সহ অন্যান্য শারীরিক উপকারিতায় বিশেষ ভাবে ভূমিকা রাখতে সক্ষম এই কাঁচা কলা। চলুন কাঁচা কলা খেলে কি ওজন বাড়ে নাকি না সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
কাঁচা কলা খেলে ওজন এই কারনেই বাড়ে না যে কাঁচা কলায় চর্বি ও ক্যালোরির মাত্রা অনেক কম থাকে। এছাড়া কাঁচা কলা আঁশ জাতীয় খাবার হওয়াতে এবং এতে শ্বেতসার বেশি হওয়াতে আমাদের হজম প্রক্রিয়া অনেক ধীর গতিতে হয়ে থাকে। যার ফলে অতিরিক্ত কোন খাবার থেতে হয় না এবং দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা যায় বিধায় আমাদের ওজন কমে।
এছাড়া কলাতে থাকা নানা ধরনের পুষ্টিকর উপাদান আমাদের ওজন কমাতে বেশ কার্যকারি হয়ে থাকে। যার মধ্যে ভিটামিন, অ্যান্টিক্সিডেন্ট এবং খনিজ অন্যতম ভূমিকা পালন করে। এই পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের শরীরের মেটাবেলিজম বৃদ্ধি করে যা অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ণ করতে সাহায্য করে, যা কারনে আমাদের ওজন অনেকটা কমে যায়।
তবে কিছু ক্ষেত্রে কাঁচা কলা খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেকোন খাবারই হোক না কেনো তা অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়ে, কলার ক্ষেত্রে ও একই। শুধু কলা খেয়ে ওজন বাড়ে এমন কথাটি সত্য নয়। কাঁচা কলা খাওয়ার সাথে অন্যান্য খাবার গুলোর দিকে লক্ষ করুন। অন্যান্য খাবার খাওয়ার জন্য ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থা প্রতিটি গর্ভবতী মায়েরা গুরুত্বপূর্ন এবং বিশেষ একটি সময়। এই সময়ে সকল তারা অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে থাকেন। গর্ভাবস্থায় শরীরে পুষ্টির চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। সেই পুষ্টির অন্যতম খাবার হতে পারে কাঁচা কলা। গর্ভবতী মায়েদের জন্য কাঁচা কলার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। চলুন জানি গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ গর্ভবতী মায়েরা কাঁচা কলা খেয়ে থাকেন। কারণ কাঁচা কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি৬। যা গর্ভে থাকা শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। যে কারণেই মায়েরা গর্ভাবস্থায় শিশুর স্বাভাবিক মস্তিষ্ক বিকাশে কাঁচা কলার বিভিন্ন তরকারি বা ভাজি খেয়ে থাকেন।
শিশুর পেশি গঠনে ও কাঁচা খাওয়া যেতে পারে। কারণ কাঁচা কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম, যা মায়ের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে এবং শিশুর পেশি গঠনে সাহায্য করে। এছাড় ও কাঁচা কলাতে উপস্থিত ফোলেটের কারণে শিশুর স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে বিশেষ ভাবে কাজে করে। তাই মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে গর্ভবতী মায়েদের কাঁচা কলা খাওয়া উচিত।
গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে বেশি পেটের সমস্যায় ভূগেন। এক্ষেত্রে তাদের অতিরিক্ত পেট খারাপ হয় নয়তো কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা হয়ে থাকে। তাদের এই সকল সমস্যার সমাধান করতে পারে কাঁচা কলাতে থাকা উপস্থিত ফাইবার। যা গর্ভবতী মায়েদের হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।
কাঁচা কলা খাওয়ার নিয়ম
কাঁচা কলা খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই রয়েছে। এটি খেতে যেমন অনেকটা সুস্বাদু তেমনি এর পুষ্টি উপকারিতা ও অনেক। কিন্তু এই কাঁচা কলা খাওয়ার কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। যা অনুসরন করে খেলে কাঁচা কলাতে থাকা সকল পুষ্টিগুন সঠিক ভাবে পাওয়া সম্ভব। চলুন জানি কাঁচা কলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-
কাঁচা কলা যেকোন সময় যেকোন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে কিছু নিয়ম বা পরিমানে খেলে অধিক উপকারিতা পাওয়া যায়। প্রতিদিন ১ থেকে ২ টির বেশি কাঁচা কলা খাওয়া যাবে না। এতে করে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কাঁচা কলা সবসময় অন্য খাবারের সাথে খাওয়ার চেষ্টা করুন। খালি পেটে খেলে পেটে গ্যাস হতে পারে।
তাই চেষ্টা করুন কাঁচা কলা সকালের নাস্তার পর বা দুপুরের খাবারের সাথে খাওয়ার। রাতে ও খেতে পারেন। কাঁচা কলা অধিক সিদ্ধ করবেন না। এতে করে কাঁচা কলা অনেকটা নরম হয়ে এর পুষ্টিগুন নষ্ট হয়ে যায়। তাই চেষ্ট করুন অল্পপরিমানে সিদ্ধ করে তরকারিতে ব্যবহার করতে বা কম তেলে ভাজি করতে।
কাঁচা কলা রান্না করতে অতিরিক্ত মসলা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে কাঁচা কলার আসল গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া কাঁচা কলা দুধ বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে স্মুদি তৈরী করে ও খাওয়া যেতে পারে, সাথে কিছু ফলও যোগ করতে পারেন। এছাড়া আধা সিদ্ধ করে সালাদ হিসেবে খেতে পারেন কাঁচা কলা।
কাঁচা কলা খেলে কি গ্যাস হয়
কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে আমাদের অনেক সময় গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। কারণ এই কাঁচা কলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে ফাইবার যা আমাদের গ্যাস সৃষ্টি করার প্রধাণ কারণ হিসেবে ধরা হয়। কাঁচা কলাতে ফাইবার থাকাতে আমাদের অনেকর শরীরে এনজাইম কখনো বৃদ্ধি পায় বা কমে যায়। যে কারণে আমাদের গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
কাঁচা কলাতে থাকা ফাইবার আমাদের পেটের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সাথে মিশে গিয়ে গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে। এছাড়া কাঁচা কলাতে থাকা ফ্রুক্টোজ আমাদের গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আমরা যখন কাঁচা কলা অন্যান্য খাবারের সাথে খেয়ে থাকি, সেই সকল খাবারের সাথে মিশে গ্যাসের সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে।
এই গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করা যেতে পারে। তাহলো- একবারে অনেক পরিমানে কাঁচা কলা বা কাঁচা কলার যে কোন তরকারি খাওয়া যাবে না। বেশি গরম থাকা অবস্থাতে ও খাওয়া যাবে না। বেশি গরম খাবার খেলে গ্যাস হয় আমরা সকলেই জানি। তাই কিছুটা ঠান্ডা করে খাওয়া উচিত।
কাঁচা কলা এমন ধরনের খাবারের সাথে খাওয়ার অভ্যাস করুন, যে খাবার গুলো সহজেই হজম হতে পারে। এছাড়া কাঁচা কলার যেকোন রান্না খাওয়ার পর অনেক পরিমানে পানি পান করুন এবং কিছুক্ষন হাটাহাটি করুন। এতে করে কাঁচা কলা খাওয়ার পর গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যাবেন।
লেখকের শেষ মন্তব্য: কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা - কাঁচা কলা খেলে কি ওজন বাড়ে
প্রিয় পাঠক, এতক্ষনে কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং কাঁচা কলা খেলে কি ওজন বাড়ে নাকি বাড়ে না তা জনাতে পেরেছেন। এছাড়া গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা, কাঁচা কলা খাওয়ার নিয়ম এবং কাঁচা কলা খেলে কি গ্যাস হয় নাকি হয় না সে সম্পর্কে ও বিস্তারিত জেনেছেন। উপরিউক্ত নিয়ম গুলো অনুসরণ করে কাঁচা কলা খাওয়ার চেষ্টা করুন।
এতে করে কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে আপনার গ্যাস বা অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন এবং তাদের ও পড়ার সুযোগ করে দিন। আর যদি আপনার বিশেষ কোন মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url