শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় - সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম

শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় এবং সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার ইচ্ছা নিয়ে আর্টিকেলটিতে ক্লিক করেছেন। উক্ত আর্টিকেলে আপনাদের সুবিধার্থে শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় এবং সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম সহ দিনে কতটুকু কিসিমিস খাওয়া প্রয়োজন সে সম্পর্কে জানতে পারবেন।
সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
এছাড়া এই আর্টিকেলে আরো জানবেন- সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম এবং প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

ভূমিকা: শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় - সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম

কিসমিসকে অধিকাংশ মানুষ সুপারফুড হিসেবে চেনেন। আঙ্গুর শুকানোর পর যে রুপ ধারণ করে সেটিই আমরা কিসসিম হিসেবে চিনি। কিসমিস কেবলমাত্র স্বাদের জন্য খাওয়া হয় না এর নানা শারীরিক উপকারিতা ও রয়েছে। কিসমিসের পুুষ্টিগুনের জন্যই যারা স্বাস্থ্য সচেতন তাদের কাছে অনেক জনপ্রিয় একটি খাবার।
প্রাচীনকাল থেকেই প্রায় সকল দেশের মানুষ কিসমিস খাওয়ার পাশাপাশি ডিকরেশনের কাজে ও ব্যবহার করে থাকে। কিসমিসে নান ধরনের ভিটামিন, আয়রন, পটাশিয়াম সহ নান ধরনের স্বাস্থ্য উপযোগী প্রোটিন থাকে। যা আমাদের শারীরিক কার্যক্ষমতাকে বাড়াতে এবং নান ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়

শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় তা অনেকেই জানতে চান। তাদের অবগতির জন্য- কিসমিস এমন একটি খাবার যেটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে, এতে থাকা নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান আমাদের শারীরিক উন্নতিতে কাজ করে এবং মানসিক বিকাশে ও ভূমিকা রাখে। চলুন শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় তা জেনে নেই-
শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়
রক্তস্বল্পতা রোধে কার্যকারী: আপনি যদি রক্তস্বল্পতায় ভোগেন, তাহলে এর প্রতিকার হিসেবে আপনি শুকনো কিসমিস খেতে পারেন। করণ কিসমিসে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় আয়রণ। যা আমাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। এর ফলে আমরা রক্তস্বল্পতা থেকে মুক্তি পাই বা রক্তের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে।

হার্ট ভালো রাখে: আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন, যাদের হার্টের সমস্যা বা হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে। তাদের জন্য কিসমিস অত্যন্ত উপকারি একটি খাবার। নিয়মিত কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা ঠিক থাকে। আর পটাশিয়াম আমাদের উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রন করে। ফলে আমাদের হার্ট ভালো থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে: যারা চোখে কিছুটা কম দেখেন অথবা আপনি চান না আপনার দৃষ্টিশক্তি কমে যাক। তাহলে আপনি এর প্রতিকার হিসেবে শুকনো কিসমিস খেতে পারেন। কিসমিসে বিদ্যমান ভিটামিন কে আপনার দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে কাজ করে বা আপনার দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করে।

হাড় মতবুত করে: বর্তমান সময়ে ৪০ বছরের বেশি বয়সের মানুষদের কমন একটি সমস্যা হাড় ক্ষয়ে যাওয়া। হাড় ক্ষয় যাওয়া রোধে শুকনো কিসমিস খাওয়া যেতে পারে। কারণ কিসমিসে ক্যালসিয়াম সহ নানা খনিজ উপাদান থাকে যা হাড় ক্ষয় যাওয়া রোধে কাজ করে এবং হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার রোধে কাজ করে: আপনি যদি চান আপনার কখনো যেন ক্যান্সার না হয় অথবা যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত রয়েছেন। তার জন্য আপনাকে শুকনো কিসমিস খাওয়া জরুরি। কেননা শুকনো কিসমিসে রয়েছে ক্যান্সারের কোষ প্রতিরোধী উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আপনার ক্যান্সার হওয়ার সম্বাবনা অনেকটাই কমাতে সক্ষম। যারা আক্রান্ত রয়েছেন তারা ও কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন।

সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম - কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম

আমরা অনেকেই যারা স্বাস্থ্য সচেতন, আমরা শারীরিক উন্নতিতে কিসমিস খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই রয়েছি কিসমিস সকালে খাওয়া বেশি উপকারী। আবার জানলেও কিভাবে খেতে হয় কি পরিমানে খেতে হয় সেই নিয়ম গুলো জানি না। সেজন্য কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের যে ‍উপকারিতা ‍গুলো পাওয়ার কথা, তা অনেক অংশেই কম পাই। সেজন্য সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ।

রাতে ঘুমানোর আগে ১০ থেকে ১২ টি কিসমিস ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে, এক গ্লাস পানিতে ছেড়ে দিন এবং সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। ভিজিয়ে রাখার ফলে কিসমিসে থাকা ফাইবার অনেকটা নরম হয়ে যায়। যা হজম শক্তিতে বেশি কাজ করে। এছাড়া এখান থেকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যা শরীর দ্রুত শোষণ করতে পারে।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কোন কিছু না খেয়ে কিসমিস ভেজানো পানি থেকে আলাদা করে পানি খালি পেটে পান করুন। আপনি চাইলে কিসমিস গুলো ও চিবিয়ে খেতে পারেন। যা শরীরের জন্য ক্ষতির কোন কারণ নয় ববং এটি চিবিয়ে খাওয়ার ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু অনেকেই এটি খেতে পছন্দ করেননা।

সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার ফলে কিসমিসে থাকা প্রাকৃতিক চিনি ও অন্যান্য উপাদান আমাদের পেটের সকল সমস্যা দূর করে। বিশেষ করে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তাদের জন্য অনেক বেশি উপকারি। এছাড়া প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায় এবং আপনাকে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া নিয়মিত খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের ত্বকের মলিনতা দূর করে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। আবার এতে থাকা ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে নান ধরনের রোগ থেকে আমাদের ভালো রাখে।

প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত

প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত তার নির্ভর করে সম্পূর্ণ শারীরিক চাহিদার উপর। আপনি যদি অনেক পরিমানে খেতে পারেন এবং তাতে যদি কোন সমস্যা না হয় তাহলে খেতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কিসমিস খাওয়া নিদিষ্ট একটি পরিমান রয়েছে। যেই পরিমানের বেশি খেলে আপনার শারীরিক অবনতি হতে পারে। চলুন জানি প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে-

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক স্বাভাবিক মানুষের জন্য প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৫ টি বা ২০ থেকে ৩০ গ্রাম পরিমান কিসমিস খাওয়া উচিত। তবে আপনার বয়স, শারীরিক গঠন এবং ওজন অনুযায়ী এর পরিমান কম বেশি হতে পারে। তবে একজন স্বাভাবিক ব্যক্তির জন্য ২০ থেকে ৩০ গ্রামের বেশি কিসমিস খাওয়া উচিত নয়।
আপনি যদি নিদিষ্ট মাত্রায় কিসমিস গ্রহন করেন, তাহলে এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি, আয়রন, ফাইবার আপনার শারীরিক পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করবে। অন্যথায় আপনি যদি নিয়মিত এর চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনার ওজন অধিক পরিমানে বেড়ে যেতে পারে। রক্তে হিমোগ্লবিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

এছাড়া বদহজম, গ্যাসের সমস্যা সহ পেটের অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং অনেক বেশি মিষ্টি খাওয়ার ফলে আপনার দাঁত ক্ষয় হতে পারে। তাই কিসমিস থেকে সঠিক পুষ্টি আহরণ করতে আপনাকে নিয়মিত পরিমান মত কিসমিস খাওয়া উচিত। অন্যাথায় আপনি উপরিউক্ত সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে পারে।

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা সবসময় ভাবি কিসমিস খেলে আমাদের কেবলমাত্র উপকার হয়। কিন্তু কিসমিস খেলে যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষতি ও হয় তা আমরা কখনো কল্পনা ও করি না। কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে তার অপকারিতা ও। তাই সেই সকল উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জেনে আমাদের কিসমিস খাওয়া উচিত। চলুন জানি কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে-
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতাঃ
  • কিসমিস হলো উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি খাবার। যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ডায়েট ফাইবার সহ আয়রন ও পটাশিয়াম। যা আমাদের শরীরে পয়োজনীয় শক্তি যুগীয়ে ভিতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে এবং আমাদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
  • আমাদের ওজন বেশি হলে আমরা ডায়েট ফুডে কিসিমিস যোগ করতে পারি। কেননা কিসমিসে থাকা প্রাকৃতিক চিনি আমাদের অনেক সময় ধরে খাওয়া থেকে বিরত রাখতে সক্ষম। কিসমিস আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করে দীর্ঘসময় ধরে শক্তি যোগায়। যেকারনে কম খেতে হয় এবং আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে।
  • বার্ধক্যের ছাপ এড়িয়ে ত্বক উজ্জ্বল রাখতে কিসমিসের উপকরিতা অপরিসীম। নিয়মিত কিসমিস খেলে কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীর থেকে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। যার কারনে চেহারতে বার্ধক্যের ছাপ এড়িয়ে ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করতে পারে।
  • কিসমিস হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ও স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। আবার উচ্চরক্তচাপ থেকে শুরু করে ক্যান্সার পর্যন্ত সেকল রোগের প্রাথমিক ঔষধ হিসেবে কাজ করে এই কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আয়রন এবং আমাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখে কিসমিস।
কিসমিস খাওয়ার অপকারিতাঃ
  • কিসমিস মাত্রাতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ফ্রুক্টোজের মাত্র বৃদ্ধি পেয়ে, রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
  • কিসমিস বেশি খাওয়ার ফলে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে হাইপোক্যালেমিয়া নামক এক অবস্থার সৃষ্টি হয়। যার ফলে হার্টের সমস্যা সহ হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • আপনার যদি কিসমিসে এলার্জির সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা কিসমিস খেলে আপনার েএলার্জির সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের দাঁত ক্ষয় যেতে পারে। কারণ কিসমিস খাওয়ার সময় তা আমাদের দাঁতের ফাঁকে আটকে যায়। সেই জন্য আমাদের দাঁতে বিভিন্ন জীবানু বাসা বাঁধে।
  • কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি ও পেতে পারে। কারণ কিসমিস একটি উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবার। এটি যদি নিয়মিত অনেক বেশি খাওয়া হয়। তাহলে আমাদের ওজন বেড়ে যেতে পারে।

লেখকের শেষ মন্তব্য: শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় - সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, এতক্ষনে শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় এবং সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এছাড়া প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত এবং কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে যাবতীয় সকল কিছু বুঝতে পেরেছেন। প্রতিদিন পরিমিত কিসমিস গ্রহন করুন।

মাত্রাতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া বর্জন করুন। খাওয়ার আগে অবশ্যই কিসমিস পানি দিয়ে খেতে হবে। এতক্ষন আমাদের পাশে থাকায় এবং আপনার মূল্যবান সময় নিয়ে আর্টিকেলটি পড়ায় আপনাকে সুস্বাগতম। এইরকম পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। এছাড়া কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url