মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত
প্রিয় পাঠক, মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় এবং মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে এই আর্টিকেল টি আপনার জন্য। এই আর্টিকেল জুড়ে জানতে পারবেন মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় এবং মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।
ঘরোয়া ভাবে চুল পড়া বন্ধের জন্য বিভিন্ন হেয়ার প্যাক ব্যাবহার করার পাশাপাশি কিছু নিয়ম কানুন জানতে, মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের বিস্তারিত বলব।
মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
নারীদের কেশেই বেশ, গুরুজন দের এই কথার মর্ম প্রত্যেক নারীর জিবনেই রয়েছে। আমাদের দেশ এর ভিন্ন ভিন্ন মৌসুম থাকার কারনে এক এক মৌসুমে আমদের চুলের এক এক রকম সমস্যা দেখা দেয় যেমন শীতকালে মাথার স্কাল্পে খুশকি হলে চুল পরে, আবার গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরমে মাথায় ঘাম বসে যাওয়ার কারনে চুল পরে, সূর্যের আলো তে বেশি সময় থাকলে চুল রুক্ষ হয়ে ঝরে পরে যাওয়ার মতো সমস্যা তো রয়েছেই।
মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানেন কিন্তু চুলের সমস্যা না বুঝে ঘরোয়া উপায়ে চুল এর যত্ন করতে উল্টো চুলের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।যেমন যদি আপনার চুল ড্যামেজ হয়ে যায় তাহলে লেবু ব্যাবহার করা যাবে না এতে চুল আরো বেশি রুক্ষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরো পড়ুনঃ জাফরান সাবান এর উপকারিতা
ছেলেদের তুলনায় চুল পড়ার প্রবণতা মহিলাদের বেশি থাকে তাই মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে প্রত্যেকটি মহিলারই বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন। বর্তমানে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে দেখায় চুল পড়া রোধের নানা প্রডাক্টস আর্টিফিশিয়াল এই প্রোডাক্ট সমূহ সবার চুলের জন্য উপযোগী না হতে পারে ঘরে উপস্থিত সামান্য কিছু উপকরণ দিয়েই যদি চুল পড়া রোধ করা সম্ভব হয় তাহলে টাকা খরচ করে ক্ষতিকর কেমিক্যাল চুলে এপ্লাই না করাই ভালো। আসুন জেনে নেই মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে কিছু টোটকা-
খুশকির সমস্যা রোধ করতে ঘরোয়া উপায়ঃ খুশকি এমন এক ধরনের সমস্যা যা এক বার হলে নির্দিষ্ট সময় পর পুনরায় হয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই চিরতরে খুশকি দূর করতে লেবু এবং নারিকেল এর তেলের মিশ্রণ চুলে ব্যাবহার করতে পারেন। সাধারণত নিয়মিত চুল পরিষ্কার না করার কারণে মাথার স্কাল্পে ময়লা জমে থাকার কারণে খুশকি হয়ে থাকে এবং সেই জায়গাতে চুলের গোড়া থেকে পুষ্টি চলে যায় এ কারণে খুশকি হলে অতিরিক্ত চুল পড়ে।
লেবু খুব ভালো ময়লা কাটতে সাহায্য করে তাই লেবু এবং নারিকেলের তেলের মিশ্রণ চিরতরে খুশকি দূর করতে সাহায্য করে চুল মসৃণ করতে সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। অনেকের এলার্জিজনিত সমস্যার কারণে লেবু যদি ব্যবহার না করতে পারেন তাহলে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার করা যায়। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে 15 মিনিটের বেশি মাথার স্কেল ব্যবহার করা যাবে না এবং এটি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করবেন।
চুল আঁচড়ানোর ক্ষেত্রে কাঠের চিরনি ব্যবহার করা উচিৎ কেননা চুল যতবার আচড়াবেন মাথার স্কেলপে রক্ত সঞ্চালন তত বৃদ্ধি পাবে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পেলে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং খুশকির স্থানগুলো নমনীয় হবে তাই নিয়মিত চুল আঁচড়ানো এবং চুলে শ্যাম্পু করা চুলের খুশকি কমানোর অন্যতম উপকারী মাধ্যম। খুশকি সমস্যা অতিরিক্ত হয়ে গেলে বা খুশকি থেকে এলার্জিজনিত সমস্যা হলে অবশ্যই রেজিস্টার ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
আরো পড়ুনঃ মেথি ও কালোজিরা দিয়ে চুলের যত্ন
চুলের রুক্ষতা দূর করতে ঘরোয়া উপায়ঃ আমাদের দেশের আবহাওয়া বেশির ভাগ সময় গ্রীষ্মকাল থাকার কারনে বাতাসের আদ্রতা কমে যায় সেই সময় আমদের চুল ড্যামেজ বেশি হয়। অর্থাৎ চুলের আগা ফেটে যাওয়া বা চুলের মাঝে থেকে ভেঙ্গে যাওয়া কে বোঝায়। চুলের এই রুক্ষতা দূর করতে মইশ্চারাইজার ব্যাবহার করলে রুক্ষতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
প্রাকৃতিকভাবে নারিকেলের তেল, এলোভেরা জেল, ডিমের সাদা অংশ, জবা ফুল ইত্যাদি চুলের জন্য ভালো ময়শ্চারাইজার হিসাবে কাজ করেন। সপ্তাহে দুই-তিন দিন ব্যাবহার করলে চুলের রুক্ষতা কমে গিয়ে মসৃণ হয় এবং চুল পড়া কমে গিয়ে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
প্রিয় পাঠক, প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় টি চুল পড়া স্বাভাবিক কিন্তু মহিলাদের বয়স ভেদে চুল পড়ার পরিমাণ এক রকম হয় না। চুল পড়া রোধে মহিলাদের ৫ টি কার্যকর টিপস সম্পর্কে জানা উচিত। যে উপায় গুলো চুল পড়া বন্ধের পাশাপাশি চুল রাখবে গোড়া থেকে মজবুত। চলুন জানা যাক সেই ৫ টি অজানা বিষয় সম্পর্কে-
- প্রতিদিন অন্তত দুই বার চুল আঁচড়াতে হবে। কারন চুল আঁচড়ালে মাথার স্কাল্পে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। এতে চুল পড়া কমে এবং চুল স্ট্রেট হয়।
- চুলে সপ্তাহে ২ বার তেল দিন এবং তেল চুল এ দেয়ার আগে সামান্য গরম করে চুলে দিন। নারিকেল তেল এর সাথে মেথি, কালিজিরা, সিকাকাই ইত্যাদি তেল যোগ করে চুলে দিলে চুল পড়া কমে যাবে। চুলে তেল দেয়ার নিয়ম হল তেল সামান্য উষ্ণ গরম করে আঙ্গুল এর সাহায্যে আস্তে আস্তে মালিশ করুন প্রথমে স্কাল্পে এবং ধীরে ধীরে চুলের আগা পর্যন্ত তেল দিন। নিয়মিত যে তেল ব্যাবহার করেন এর সাথে সামান্য পরিমাণ ক্যাস্টর অয়েল এবং এসেন্সিয়াল অয়েল যোগ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
- ওমেগা-৬ ফ্যাট এর অভাবে মহিলাদের মাথার চুল পড়ে।আমদের শরীর এই ওমেগা-৬ ফ্যাট উৎপন্ন করতে পারে না। বিভিন্ন প্রকার বাদাম যেমন কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, আখরোট ইত্যাদি খেলে ওমেগা-৬ উৎপন্ন হয় এতে চুল পড়া অনেকাংশে কমে যায় এবং নতুন চুল গজায়।
- আমলকী এবং সিকাকাই এর নিয়মিত ব্যাবহার চুল পড়া কমাতে বেশ সাহায্য করে থাকে। চুল শ্যাম্পু করে পানি দ্বারা ধুয়ে পরিষ্কার করে, আমলকী এবং সিকাকাই ভিজিয়ে রাখা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এতে আমলকী ও সিকাকাই এর গুণাবলী চুলের গোঁড়ায় পৌঁছায়।
- নিয়মিত সুষম খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান, ভিটামিন- সি, ভিতামিন-ই, ভিটামিন-ডি, প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে চুল পড়া কমে যায় এবং চুল স্বাস্থ্যউজ্জ্বল করে তলে।
চুল পড়া বন্ধ করার ভিটামিন
সাধারণত ভিটামিন - ডি এর অভাবে চুল পড়ে এবং ভিটামিন- ই এর ঘাটতি হলে চুল পড়ে। তাই চুল পড়া বন্ধ করতে চাইলে ভিটামিন- ডি এবং ভিটামিন- ই সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।অনেকেই চুল পড়া রোধ করতে ই ক্যাপ ক্যাপসুল সেবন করে থাকে। নিয়মিত ই ক্যাপ খেলে সত্যি ই চুল পড়া কমে যায়।
আমদের চুল এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন হল ভিটামিন - বি যা বায়োটিন নামেও পরিচিত। এই ভিটামিন বি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। মজবুত করতে ভিটামিন বি 7 বা বায়োটিন খুবই দরকারি একটি ভিটামিন। চুলে ক্যারোটিন বৃদ্ধি করতে বায়োটিন সাহায্য করে।
এছাড়াও ক্যাস্টর অয়েল এর নিয়মিত ব্যবহার চুলের গোড়া মজবুত করে, নিয়মিত আয়োডিন জাতীয় খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ, সবুজ শাক-সবজি, চিয়া সিড, ফ্লাক্সসিড অর্থাৎ ওমেগা- ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে।
চুল পড়া বন্ধ করার তেলের নাম
বর্তমানে বাজারে চুলে ব্যবহার করার জন্য অনেক ধরনের তেল এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। আজকের এই পোস্ট এর মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন কোন সমস্যার জন্য কোন তেল ব্যাবহার করে চুল এর সমস্যা দূর করে সমাধান পেতে পারেন।ঘন কালো লম্বা চুল প্রত্যেকটা মেয়েরই স্বপ্ন। সামান্য একটু যত্ন আর সঠিক তেলের ব্যাবহার আপনার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারে তাই নিচের লিখা সম্পূর্ন বিষয়টি পড়ুন তাহলে বিভিন্ন তেল সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন-
নারিকেল তেলঃ প্রথমেই আসি নারিকেলের তেলে, আমদের দেশ এর প্রায় সকল নারীরা জীবনের যে কোন সময়ে নারিকেল এর তেল এর ব্যাবহার করেই থাকে।অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল দূর করতে নারিকেল তেলের জুরি নেই। মাথার স্কাল্পে ফাঙ্গাল সমস্যা দূর করে স্কাল্প পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে বিধায় চুল পড়া কমে যায়।
বাদাম তেলঃ বাদাম তেলকে অনেকেই আমন্ড অয়েল ও বলে থাকে। বাদাম এর তেল এ প্রচুর পরিমানে খনিজ পদার্থ থাকে, ভিটামিন- ই তে ভরপুর এই তেল ব্যাবহারে চুল এর গোঁড়া মজবুত করে এবং চুল ঘন ও মসৃণ করতে সাহায্য করে। গোঁড়া থেকে চুল কে মজবুত করতে অনেকেই বাদাম এর তেল ব্যাবহার করে থাকে। এই বাদাম এর তেল ব্যাবহার করলে চুল বাহিরে থেকেও ঝলমলে স্বাস্থ্যজ্জল দেখায়।
অলিভ অয়েলঃ অলিভ অয়েল অর্থাৎ জইতুন এর তেল বহু বছর আগে থেকেই ব্যাবহার হয়ে আসছে চুলের যত্নে। চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে, মসৃণ করতে এবং ঝলমলে স্বাস্থ্যজ্জল করতে অলিভ অয়েল ব্যবহৃত হয়। অলিভ অয়েল চুলের খুশকি দূর করতে, চুলে ময়েশারাইজার হিসাবে এবং চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
ক্যাস্টর অয়েলঃ চুলের গোড়ার রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহৃত হয় কারন এতে রয়েছে রিকিনোলেইক অ্যাসিড যা চুলের গোঁড়া মজবুত করে। যাদের চুল পাতলা তাদের জন্য ক্যাস্টর অয়েল ভীষণ উপযোগী ক্যাস্টর অয়েল চুলের ঘনত্ব বাঁড়ায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ক্যাস্টর অয়েলে তাই চুল পড়া রোধ করতে ক্যাস্টর অয়েল সাহায্য করে।
এসেন্সিয়াল অয়েলঃ এসেন্সিয়াল অয়েল বলতে আমরা রোজমেরি অয়েল, পেপারমিন্ট অয়েল, এবং ল্যাভেন্ডার অয়েল বুঝি যা চুলের গ্রোথ বৃদ্ধিতে কার্যকর। এসব তেল শুধু চুলের উপকার এর জন্যই নয় বরং স্ট্রেস মুক্তি এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নতিতে ব্যাপক কাজ করে।
লেখকের মন্তব্য: মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
প্রিয় পাঠক, মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় এবং চুল পড়া বন্ধ করার তেলের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এছাড়া মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। চুল নারীর সৌন্দয্যতা বাড়ায় চুলের যত্নে নিজেকে এগিয়ে রাখতে সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে চুলের যত্নের আদ্যোপান্ত জানতে পেরেছেন এবং চুলের প্রয়োজনীয় সব টিপস এবং ট্রিকস সম্পর্কে জানতে পেরেছেন বলে আশা করছি। দৈনন্দিন জীবনের নানান বিষয়ে, দেশ বিদেশের নানান অজানা তথ্য জানতে এবং সব বিষয়ে নিজেকে আপডেট রাখতে নিয়মিত চোখ রাখুন এই ওয়েবসাইটে। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url