আসল এলোভেরা জেল চেনার উপায় - এলোভেরা জেল ত্বকে ব্যবহারের নিয়ম
আসল এলোভেরা জেল চেনার উপায় এবং এলোভেরা জেল ত্বকে ব্যবহারের নিয়ম নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? কিন্তু কোথাও কোন সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না? তাহলে এই আর্টিকেলটি কেবল মাত্র আপনার জন্য যেখানে আপনি জানতে পারবেন আসল এলোভেরা জেল চেনার উপায় এবং এলোভেরা জেল ত্বকে ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে।
এই আর্টিকেলে আরো জানতে পারবেন- অ্যালোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের নিয়ম এবং অ্যালোভেরা জেল মুখে ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
ভূমিকা: আসল এলোভেরা জেল চেনার উপায় - এলোভেরা জেল ত্বকে ব্যবহারের নিয়ম
এলোভেরা জেল যা এলোভেরা গাছের পাতা থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। অনেকেই এই এলোভেরাকে ঘৃতকুমারী ও বলে থাকে। এই জেল সমৃদ্ধ পাতাটি মানুষ বহু বছর ধরে ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যবহার করে আসছে। চুল ও ত্বকে এটি ব্যবহারে বেশি উপকারিতা থাকায় সবাই এটি ব্যবহার করে থাকে।
এই এলোভেরা জেলে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বক ও চুলের যত্নে একটি পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক উপাদান। এছাড়া অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং ময়েশ্চারাইজিং উপাদানের জন্য এলোভেরা জেল অনেক বেশি জনপ্রিয়। এলোভেরা জেল সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে সমস্ত আর্টিকেলটি পড়ুন।
আসল এলোভেরা জেল চেনার উপায়
এলোভেরা জেল ত্বক ও চুলের যত্নে উপকারিতা অনেক বেশি। যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা নিয়মিত এলোভেরা জেল ব্যবাহর করে থাকে। এছাড়া ত্বক ও চুলের যত্নে সবার কাছে জনপ্রিয় একটি উপাদান হলো এলোভেরা জেল। যে কারণে বাজারে অনেক নকল এলোভেরা জেল পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি কেনার সময় যেন প্রতারিত না হয়ে থাকেন সেজন্য আসল এলোভেরা জেল চেনার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো।
এলোভেরা জেল কেনার আগে আপনাকে অবশ্যই জেলের বোতলে থাকা উৎপাদন তালিকাটি ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে। এই সকল এলোভেরা জেলে কি কি উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে তা উল্লেখ থাকবে। যদি অতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার হয়ে থাকে বা প্রাকৃতিক এলোভেরা জেল না থাকে তাহলে তা বর্জন করুন।
আরো পড়ুনঃ মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
আসল এলোভেরা জেল অনেকটা পাতলা এবং তেলতেলে হয়ে থাকে। যা হাতে নিয়ে অনেকটা পিচ্ছিল মনে হয় এবং বেশিক্ষন হাতে ধরে রাখা যায় না। তবে এই এলোভেরা জেল যদি অনেক ঘন এবং শক্ত হয়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এটি নকল এলোভেরা জেল। যা ক্রয় করা থেকে বিরত থাকুন।
এলোভেরা জেল খানিকটা হালকা সবুজ বা হলুদ রঙ্গের হয়ে থাকে। এটির রং যদি অন্য কোন রং বা গাঢ় কোন রঙ্গের হয়ে থাকে তাহলে এই ধরনের এলোভেরা জেল কেনার আগে সাবধাণতা অবলম্বন করতে হবে। এটি প্রাকৃতিক এলোভেরা জেল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। তবু ও কেনার আগে অন্যান্য বিষয়গুলো মিলিয়ে নিবেন।
এলোভেরা জেল কেনার আগে অবশ্যই ত্বকে পরিক্ষা করে নেয়া উচিত। তাহলে আসল বা নকল কিছুটা উপলব্ধি করা যাবে। প্রথমে একটু এলোভেরা জেল নিয়ে কনুইয়ের নিচের অংশে লাগিয়ে রাখুন। যদি জ্বালাপোড়া বা লালচে কোন ভাব হয়ে থাকে তাহলে এটি নকল এলোভেরা জেল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
এলোভেরা জেল অনেক তাড়াতাড়ি ত্বক থেকে শুকিয়ে যায়। কিন্তু আপনি যদি দেখেন অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারের অনেক পরেও আপনার ত্বকে এলোভেরা জেল লেগে আছে বা আপনার ত্বকে একটি আঠালো অনুভূতি দেয় তাহলে বুঝতে হবে এটি নকল এলোভেরা জেল। যা কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আশা করি আসল এলোভেরা জেল চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যেহেতু এলোভেরা আপনার ত্বকে বা চুলে ব্যবহার করবেন, সেহেতু এটি ক্রয় করার পূর্বে উপরে উল্লেখিত নিয়ম গুলো প্রয়োগ করে কেনা উচিত। যাতে আপনার ত্বক বা চুলে কোন পাশ্বপ্রতিক্রিয়া না ফেলতে পারে।
এলোভেরা জেল ত্বকে ব্যবহারের নিয়ম
এলোভেরা জেল ত্বকের জন্য এক প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বকের যাবতীয় সকল সমস্যা দূর করতে সক্ষম। এলোভেরা জেল ত্বকে ব্যবহারের অনেক নিয়ম রয়েছে। যেই নিয়ম গুলো মেনে এলোভেরা জেল ব্যবহার করলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। চলুন জানি এলোভেরা জেল ত্বকে ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে-
এলোভেরা জেল সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা যায়। প্রথমে ব্যবহৃত স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর অ্যালোভেরা জেল ত্বকে লাগিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট হালকা ম্যাসাজ করতে হবে। এভাবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট টকে লাগিয়ে রেখে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ত্বক ভালোভাবে ফেলতে হবে।
অ্যালোভেরা জেল ক্রিসমাস হিসেবে ও ত্বকে ব্যবহার করা যায়। তার জন্য প্রথমে একটি পাত্রে মুলতানি মাটি, দই, মধু এবং এলোভেরা জেল একসাথে মিশিয়ে একটি ফেস মাস্ক তৈরি করে নিতে হবে। তারপর সেই তৈরিকৃত ফেস মাস্কটি ত্বকে আলতো ভাবে লাগাতে হবে। এভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখার পরে ধরে ফেলতে হবে।
এলোভেরা জেল টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তার জন্য একটি পাত্রে এলোভেরা জেল এবং গোলাপ জল একসাথে মিশিয়ে টোনার তৈরি করতে হবে। টোনার তৈরি হয়ে গেলে কটন বলের সাহায্যে আলতো করে ত্বকে লাগাতে হবে। টোনার ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই ত্বক ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
এছাড়া ও এলোভেরা জেল আই মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এজন্য প্রথমে অল্প পরিমান এলোভেরা জেল নিয়ে, সেগুলো কটন বলে ভিজিয়ে নিতে হবে। এবার কটন বল গুলো চোখের উপর রেখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট বিশ্রাম করতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর কটন বল গুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। উপরিউক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে ত্বকে এলোভেরা জেল ব্যবহার করা যায়।
অ্যালোভেরা জেল মুখে ব্যবহারের উপকারিতা
অ্যালোভেরাতে থাকা নানা পুষ্টি উপাদান মুখে ব্যবহারে নান উপকারিতা পাওয়া যায়। অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক উপাদান হওয়াতে এটির কোন পাশ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। যা অত্যন্ত নিরাপদ এবং ত্বকের সকল সমস্যা সমাধানে কার্যকারী। নিম্নে অ্যালোভেরা জেল মুখে ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ত্বক উজ্জ্বল করে: অ্যালোভেরা জেল নিয়মিত আমাদের ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারে ত্বকে থাকা মৃত কোষ গুলো অপসরণ হয় এবং ত্বকে নতুন কোষের সৃষ্টি করে যার কারণে আমাদের ত্বক হয় অনেক বেশি উজ্জ্বল এবং প্রণবন্ত। তাই ত্বক উজ্জ্বল করতে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার কার্যকারি একটি উপায়।
রোদে পোড়া দাগ দূর করতে: ছেলে হোক বা মেয়ে আমাদের সবার একটি কমন সমস্যা হলো আমাদের ত্বকে রোদেপোড়া দাগ অনেক বেশি। রোদে পোড়া দাগ দূর করতে অ্যালোভেরা জেল খুবই উপকারি। অ্যালোভেরা জেল ত্বকে ব্যবহারে আমাদের ত্বক প্রাকৃতিক ভাবে শীতল এবং নরম হয়ে যায়। যার কারণে আমাদের ত্বক থেকে রোদে পোড়া দাগ দূর হয়।
ব্রণের দাগ বা গর্ত সারাতে: প্রায় ৮০ ভাগ ছেলে এবং মেয়েদের একটি নিদিষ্ট বয়সে অনেক বেশি ব্রণ হয়ে থাকে। আর এই ব্রণ গুলো এত বেশি হয় যে, তাভালো হওয়ার পর অনেক বেশি দাগ এবং গর্ত হয়ে থাকে। এই ব্রণের দাগ বা গর্ত সারাতে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যালোভেরা ব্যবহারে কোষ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং যাবতীয় সকল দাগ আস্তে আস্তে মিশে যায়।
ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে: আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী আমাদের ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক। বিশেষ করে শীত কালে অনেক বেশি হয়ে থাকে। এই শুষ্ক ত্বক থেকে মুক্তি পেতে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যালোভেরা জেল আমাদের ত্বকের গভীরে গিয়ে ময়েশ্চারাইজ করে এবং শুষ্কতা দূর করে। যার ফলে আমাদের ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে।
বয়সের ছাপ এড়াতে: বয়সের ছাপ এড়িয়ে চলতে অ্যালোভেরা জেল একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান। অ্যালোভেরা জেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি ত্বকে থাকা কোষ গুলোকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। যার কারণে কোন কোষের মৃত হয় না। ফলে আমাদের ত্বকে টানটান ভাব থাকে। এতে করে আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না।
অ্যালোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের নিয়ম
ইতি মধ্যে আমরা ত্বকে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জেনেছি। এবার জানবো অ্যালোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে। চুল সকল সমস্যা সমাধানে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যালোভেরা জেল চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি উপাদান। চলুন বিস্তারিত জানি-
অ্যালোভেরা জেল ও নারিকেল তেলের মিশ্রন তৈরী করে চুলে ব্যবহারের একটি সহজ নিয়ম। তার জন্য শুরুতে একটি পাত্রে অ্যালোভেরা জেল এবং নারিকেল তেল ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশানোর সময়ে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে অ্যালোভেরা জেলের পরিমান এবং নারিকেল তেলের পরিমান একই থাকে। এবার মিশ্রনটি ভালো ভাবে চুলে ম্যাসাজ করুন। মিশ্রনটি শুকে গেলে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যালোভেরা জেলে সাথে মধু মিশিয়ে ও চুলে ব্যবহার করা যেতে পারে। এজন্য একটি পাত্রে সমপরিমান অ্যালোভেরা জেল এবং সমপরিমান মধু এক সাথে মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট তৈরী করে নিতে হবে। এবার পেস্টটি হাতের তালুতে নিয়ে ভালো করে চুলে ম্যাসাজ করুন। এভাবে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যালোভেরা জেলের সাথে টক দই মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করা যায়। তার জন্য অ্যালোভেরা জেল এবং টকদই এক সাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরী করে নিতে হবে। এমন ভাবে মিশাতে হবে যাতে মিশ্রনটিতে অ্যালোভেরা বা দই আলাদা না হয়ে থাকে। এবার এই মিশ্রনটি চুলের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে লাগাতে হবে। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পরে তা ধুয়ে ফেলতে হবে।
লেখকের শেষ মন্তব্য: আসল এলোভেরা জেল চেনার উপায় - এলোভেরা জেল ত্বকে ব্যবহারের নিয়ম
প্রিয় পাঠক, এতক্ষনে আসল এলোভেরা জেল চেনার উপায় এবং এলোভেরা জেল ত্বকে ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জেনেছেন। আবার অ্যালোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের নিয়ম এবং অ্যালোভেরা জেল মুখে ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে সকল তথ্য পেয়েছেন। অ্যালোভেরা একটি প্রাকৃতিক উপাদান, কিন্তু সকল সমস্যা সমাধানের ঔষধ নয়।
তাই অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারে সর্তক হওয়া উচিত। এতক্ষন আমাদের পাশে থাকায় এবং আপনার মূল্যবান সময় নিয়ে আর্টিকেলটি পড়ায় আপনাকে সুস্বাগতম। এইরকম পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। এছাড়া কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url