ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা
ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয় এবং ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আজ আমি আপনাদের জানাবো ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয় না স্বাভাবিক থাকে আবার ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের ব্যবহার কিভাবে করতে হয়? কি পরিমান ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
এছাড়া আরো যে বিষয় গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন তাহলো- ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা, চুলের যত্নে ভাতের মাড়ের ব্যবহার এবং শিশুদের ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা।
ভূমিকা: ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয় - ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের ব্যবহার
ভাত রান্না করা প্রায় শেষের দিকে একধরনের তরল পদার্থ আলাদা করা হয়, সেটিকেই আমরা মাড় বলে থাকি। গরম পানিতে চাল ফুটানোর যে প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়ার একটি অংশ হলো ভাতের মাড়। ভাতের মাড় শুধু খাওয়া যায় তা নয়, ভাতের মাড়ের নান স্বাস্থ্য উপকারিতা ও রয়েছে। এছাড়া আমাদের ত্বক এবং চুলের যত্নে আমরা ভাতের মাড় ব্যবহার করে থাকি।
ভাতের মাড় অত্যান্ত পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ একটি খাবার, যা নিয়মিত খাওয়ার ফলে আমাদের নান শারীরিক উপকারিতা মেলে। ভাতের মাড়ে থাকা ভিটামিন ই, ভিটামিন বি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ প্রচুর পরিমানে থাকে। যা প্রাচীন কাল থেকেই নানা পুষ্টিগুনের কারনে সকলের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয় খাবার। ভাতের মাড় সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয়
ভাতের মাড় খাওয়ার সাথে মোটা হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। তবে যেহেতু ভাতের মাড় একটি শর্করা জাতীয় খাবার, সেহেতু সামান্য পরিমান ক্যালোরি ধারণ করে থাকে। এই ক্যালোরি শরীরে মোটা বা চিকন হওয়ার প্রভাব ফেলে না। ভাতের মাড় খেলে মোটা না হয়ে বরং আমরা এর উপকারিতা উপভোগ করতে পারি।
আমাদের প্রায় সবারই একটি ভূল ধারনা রয়েছে যে, যেকোন খাবার খেলেই আমরা মোটা হতে পারি। মোট হওয়ার জন্য শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরির প্রয়োজন হয়ে থাকে। যা ভাতের মাড়ে নেই। তবে ভাতের মাড় খাওয়ার পরিমান, আপনি দিনে কতক্ষন পরিশ্রম করেন এবং আপনার লাইফস্টাইলের উপর মোটা বা চিকন হওয়া নির্ভর করে থাকে।
ভাতের মাড়ে যে পরিমান ক্যালোরি তা আমাদের মোটা হওয়ার থেকে আমাদের শারীরিক উন্নতিতে ভূমিকা রাখে। তবে ভাতের মাড়ের সাথে অন্যান্য খাবার যদি গ্রহন করা হয়ে থাকে এবং তা যদি বার্ণ না করা হয় তাহলে আমাদের ওজন বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হয়। তবে এটি বিজ্ঞান সম্মত কথা নয়।
মোট হওয়ার জন্য যে পরিমান ক্যালোরি আমাদের শরীরে প্রয়োজন তা ভাতের মাড় বহন করে না। এতে থাকা ভিটামিন, ফাইবার এবং মিনারেলস আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় নানা উপকারে আসে। তবে অতিরিক্ত ভাতের মাড় গ্রহন না করাই উত্তম। এতে করে মোটা না হলেও আমাদের অন্যান্য শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।
ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের ব্যবহার6 - ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের উপকারিতা - ভাতের মাড় মুখে লাগানোর নিয়ম
আপনি অবাক হতে পারেন ভাতের মাড় আবার ত্বকের যত্নে কিভাবে ব্যবহার হয়। জ্বি, ভাতে মাড় ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু তার ত্বকে ভাতের মাড়গ ব্যবহারের নিয়ম বা কিভাবে ব্যবহার করলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়, সেটি জানা জরুরি। চলুন জানি ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের ব্যবহার, উপকারিতা এবং লাগানোর নিয়ম সম্পর্কে-
ভাতের মাড় বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যায়। যার মধ্যে রয়েছে সরাসরি মুখে ব্যবহারের পদ্ধতি। ভাত থেকে আলাদাকৃত মাড় আপনি মুখে লাগিয়ে যেভাবে ফেসওয়াস ব্যবহার করে, সেভাবে ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বক আগের থেকে অনেকটা পরিষ্কার হবে এবং ত্বকের পিএইচ লেভে স্বাভাবিক থাকবে।
আপনার ত্বকে যদি ছোট ছোট দাগ বা গর্ত থাকে তাহলে আপনি টোনার হিসেবে ভাতের মাড় ব্যবহার করতে পারবেন। কারণ ভাতের মাড় ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বক শীতল হবে এবং ছোট ছোট দাগ বা গর্ত গুলো ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবে। মুখে থাকা দাগ ও গর্ত সারাতে খুবই উপকারি একটি পদ্ধতি হলো ভাতের মাড় ব্যবহার।
ভাতের মাড় আপনি ফেস মাস্ক হিসেবে ও ব্যবহার করতে পারবেন। তার জন্য ভাতের মাড়ের সাথে মুলতানি মাটি এবং মধু মিশিয়ে প্রথমে একটি ফেসমাস্ক তৈরি করে নিতে হবে। তারপর সেই মিশ্রণটি সমস্ত ত্বকে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। যা ফলস্বরুপ আপনার ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগানোর পাশাপাশি আপনার ত্বকে টান টান ভাবে ফিরে আসবে।
আপনার চোখের নিচে যদি কালো দাগ বা ফুলে যেয়ে থাকে, তাহলে আপনি তার প্রতিকার হিসেবে ভাতের মাড় আই মাস্ক হিসেবে ব্যহার করতে পারেন। কারণ ভাতের থাকা প্রয়োজনীয় পুুষ্টিগুন আপনার চোখের নিচের কালো দাগ অপসরণ করতে এবং চোখের নিচে ফুলে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে ভাতের মাড়ের ব্যবহার - ভাতের মাড় চুলে দেওয়ার নিয়ম
আমাদের মধ্যে অনেকেই জানি না ভাতের মাড়ের উপকারিতা সম্পর্কে। ত্বকের যত্নের পাশাপাশি ভাতের মাড় চুলের যত্নে ও ব্যবহার করা যায়। যা আমাদের চুলকে মজবুত করার সাথে সাথে আমাদের চুল করে উজ্জ্বল ও মসৃন। যার মূল কারণ হলো এতে থাকা ভিটামিন ও অ্যামিনো অ্যাসিড। চলুন চুুলের যত্নে ভাতের মাড় ব্যবহার ও নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
শ্যাম্পু করার আগে চুলে ভাতের মাড় ব্যবহার করা যেতে পারে। তার জন্য চুলে শ্যাম্পু করার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পূর্বে চুলে ভাতের মাড় লাগিয়ে রাখতে হবে। তারপর কেবল মাত্র ১ বারই শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। তাহলে ভাতের মাড় আপনার চুলে একটি প্রাকৃুতিক প্রলেপ তৈরি করবে যা ফলে চুল অদ্রতা বাজায় থাকা সাথে চুল হবে অনেকটা মসৃণ।
ভাতের মাড় আমরা কন্ডিশনার হিসেবে ও ব্যবহার করতে পারি। এজন্য চুলে হালকা শ্যাম্পু করার পর আমরা চুলে ভাতের মাড় কন্ডিশানের মত করে ব্যবহার করতে পারি। যার কারনে ভাতের মাড়ে থাকা ভিটামিন সি চুলে গোড়া ভিতর থেকে করে শক্তিশালী এবং চুল লম্বা করতে সাহায্য করে। এটি প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
আপনার চুল যদি শুষ্ক হয়ে থাকে এবং চুলে জোট বাধে, তা সমাধান হিসেবে ভাতের মাড় ব্যবহার করা যেতে পারে। ভাতের মাড় আপনার মাথার উপরিভাগে লাগিয়ে কিছুক্ষন ম্যাসাজ করুন এবং শুকে গেলে তা শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার চুলে শুষ্কতা দূর হয়ে চুল হবে কোমল এবং কোন ধরনের জোট থাকবে না।
চুলে ভাতের মাড় হেয়ার মাস্ক হিসেবে ও ব্যবহার করা যায়। তার জন্য আপনাকে ভাতের মাড়ের সাথে মধূ এবং অ্যালোভেরা জেলে একটি মিশ্রণ তৈরি করে হেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। এতে করে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা হওয়ার সাথে সাথে চুলে জমে থাকা ময়লা ও দূর হয়ে থাকে। তাই চুলের যত্নে নিয়মিত ভাতের মাড় ব্যবহার করুন।
শিশুদের ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা
ভাতের মাড় শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ন একটি খাবার বিশেষ করে বাচ্চারা যখন মায়ের দুধ ছাড়া বাহিরের খাবার খাওয়া শুরু করে। অধিকাংশ বাচ্চারাই এটি খেতে পছন্দ করে থাকে। শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশে ভাতের মাড় সঠিক ভাবে কাজ করে। শিশুদের ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা চলুন আরো বিস্তারিত জানি।
ভাতের মাড় শিশুদের প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টিগুন বহন করে। যেমন- শকর্রা, প্রোটিন খনিজ লবন সহ অন্যান্য ভিটামন ভাতের মাড়ে থাকে। যার কারণে শিশুরা সকল পুষ্টি সঠিক ভাবে পেয়ে থাকে। এছাড়া বাচ্চাদের বমি বা ডায়রিয়া হলে ভাতের মাড় হালকা খাবার হিসেবে খাওয়ানো যায়। ফলে তাদের পুষ্টির যে ঘাটতি হয় এবং পানি শূন্যতা পূরনে কাজ করে।
বাচ্চাদের হজমের সমস্যা অনেক বেশি হয়ে থাকে। যার কারনে তাদের হালকা খাবার হিসেবে ভাতের মাড় খাওয়ানো যেতে পারে। শিশুরা যখন সলিড খাবার খেতে শুরু করে কখন তাদের হজম শক্তি স্বাভাবিক হয় না। যেকারনে ভাতের মাড় খাওয়ালে বাচ্চারা দ্রুত হজম করতে পারে এবং তা ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত হতে শুরু করে।
কিছু বাচ্চা রয়েছে যারা শারীরিক ভাবে অনেকটা দূর্বল হয়। তাদের শরীরে শক্তির ঘাটতি দেখা দেয়। সেই সকল বাচ্চাদের ভাতের মাড় খাওয়ানো যেতে পারে। কারণ ভাতের মাড়ে থাকা কার্বোহাইড্রেট বাচ্চাদের শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। ফলে বাচ্চারা তাদের দৈনিক সকল কার্যক্রমে সঠিক শক্তি প্রয়োগ করতে পারে।
বাচ্চাদের ওজন নিয়ে অনেকেই চিন্তায় পড়েন। চিন্তার কারণ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমন কারণ হলো- বাচ্চা অনেক বেশি চিকন হয়ে ওজন অনেক কমে যায় নয়তো অনেক বেশি মোটা হয়ে ওজন বৃদ্ধি পায়। সেজন্য বাচ্চার ওজন স্বাভাবিক রাখতে বাচ্চাকে ভাতের মাড় খাওয়ানো যেতে পারে। ভাতের মাড়ে ক্যালোরি অনেক কম পরিমানে থাকে। সেজন্য বাচ্চা মোটা বা চিকন হয় না।
ভাতের মাড় কখন খাবো
ভাতের মাড় যেকোন সময় খাওয়া যেতে পারে। তবে এটি যেহেতু ভাত রান্না করার সময়ই কেবল পাওয়া যায় সেহেতু, ভাতের মাড় হালকা গরম খাওয়াই উত্তম। এছাড়া আপনার শারীরিক চাহিদা এবং খাদ্যাভ্যাসের উপর নির্ভর করে ভাতের মাড় কখন খাবেন। চলুন জেনে নেই ভাতের মাড় কখন খাবো সে বিষয়ে বিস্তারিত।
অসুস্থতায়: আপনি যদি জ্বর বা ডাইরিয়ার মতো অবস্থায় কিছু না খেতে পারেন। এবং আপনার শরীর অনেকটা চড়া হয়ে যায়। তাহলে আপনি ভাতের মাড় খেতে পারেন। ভাতের মাড় না চিবিয়ে খাওয়া যায় এবং তা শরীর সহজেই হাইড্রেট রাখতে পারে এছাড়া পুষ্টি সরবরাহ করতে সহায়তা করে এই ভাতের মাড়।
সকালে খালি পেটে: সকালে কিছু না খেয়ে খালি পেটে ভাতের মাড় খেতে পারেন। এটি আমাদের শরীরে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে কাজ করে। এছাড়া সকালে খালি পেটে খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায় এবং আমাদের শরীরের পানি শূণ্যতা রোধে ভূমিকা রাখে।
শারীরিক পরিশ্রমের পর: যারা শারীরিক ভাবে অনেক পরিশ্রম করে থাকেন অথবা শারীরিক ব্যায়াম করেন, তারা তাদের কার্যক্রম শেষে ভাতের মাড় খেতে পারেন। এই ভাতের মাড়ে থাকা কার্বোহাইড্রট শরীরকে দ্রুত সতেজ করতে সাহায্য করে এবং পুনরায় কাজ করার শক্তি প্রদান করে থাকে। তাই শারীরিক পরিশ্রমের পর ভাতে মাড় খাওয়া যেতে পারে।
লেখকের শেষ মন্তব্য: ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয় - ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের ব্যবহার
প্রিয় পাঠক, এতক্ষনে ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয় এবং ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আবার ভাতের মাড় কখন খাবো, চুলের যত্নে ভাতের মাড়ের ব্যবহার এবং শিশুদের ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। ভাতের মাড় অতিরিক্ত খেতে পেটের সমস্যা হতে পারে।
তাই নিয়মিত ভাতের মাড় খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং সুস্থ্য থাকুন। আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম নানা শিক্ষামূলক তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করার অনুরোধ রইলো। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url