আপাং গাছের শিকড় খেলে কি হয় জেনে নিন বিস্তারিত

আপাং গাছ সম্পূর্ণ একটি ওষুধি গুণসম্পন্ন গাছ। প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে এই গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রিয় পাঠক, আপনি কি আপাং গাছের শিকড় খেলে কি হয় এই সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেল ক্লিক করেছেন? তাহলে ধৈর্য ধরে আমাদের সাথে থাকুন। কেননা আমরা আপাং গাছের শিকড় আপনার শরীরের কি কি কাজ করবে এবং আপাং গাছের উপকারিতা কি কি এসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আপাং গাছের শিকড় খেলে কি হয়
পুরো আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা আপাং গাছের শিকড় খেলে কি হয় এবং আপাং গাছের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। তাছাড়া আপনার আরো জানতে পারবেন, আপাং গাছ কোথায় পাওয়া যায় এবং আমাশয় ও কলেরা নিরাময়ে আপাং গাছ কিভাবে খেতে হয়।এ সকল বিষয়ে তথ্য পেতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।

ভূমিকা: আপাং গাছের শিকড় খেলে কি হয়

আপাং গাছের মূল, কাণ্ড, পাতা, বীজ সকল অংশই ঔষধি গুন সম্পূর্ণ। এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Achyranthes aspera এবং ইংরেজি নাম prickly chaff flower,Apang,Chaff flower ইত্যাদি। আমাদের দেশে সাধারণত দুই ধরনের আপাং গাছ পাওয়া যায়। একটি হলো লাল আপাং এবং আরেকটি সাদা আপাং গাছ। 
এটি একটি হার্ব জাতীয় উদ্ভিদ এবং সারা দেশের পতিত জমিতে অথবা রাস্তার ধারে জন্মে। চারিদিকে শাখা প্রশাখা ছাড়ানো এই গাছের আগায় বাঁকানো কাটাযুক্ত ফুল ফুটে দেখা যায়।আপাং গাছের শিকড়ের নানা ঔষধি গুণ রয়েছে। আপাং গাছের শিকড় কিভাবে খেলে আপনি উপকৃত হবেন সে সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথে থাকুন।

আপাং গাছের শিকড় খেলে কি হয়

প্রাচীনকাল থেকে ভেষজ ঔষধ হিসেবে আপাং গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। আপাং গাছের শিকড় খেলে শুধু উপকার হবে তা নয় পুরো আপাং গাছটাই ঔষুধি গুন সম্পন্ন। তবে আর্টিকেলের এই অংশে আপাং গাছের শিকড় খেলে কি হয় এবং কি কি সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
  • আপাং গাছের শিকড় ছেঁচে এর রস দিনে ২ থেকে ৩ বার খেলে আমাশয় ও কলেরা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • কেটে যাওয়া স্থানে আপাং গাছের শিকড়ের নির্যাস লাগালে রক্তপাত দ্রুত বন্ধ হয়।
  • আপাং গাছের শিকড়ের রস জ্বরে খুব ভালো কাজ করে। জ্বর হলে এই গাছের শিকড় ছেঁচে দিনে দুইবার এর রস খেলে জ্বর গায়েব হয়ে যায়।
  • যাদের বুক ধরফর করে এবং হৃদযন্ত্র দুর্বল তারা আপাং গাছের শিকড়ের রস নিয়মিত খেলে এ সমস্যার সমাধান পাবেন।
  • দীর্ঘদিনের ক্ষতস্থান বা বাগি রোগে আপাং গাছের শিকড়ের রস দিনে ২ থেকে ৩ বার লাগালে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
  • ক্ষুধা কমে গেলে এবং হজমের সমস্যা হলে আপাং গাছের শিকড়ের সাথে কয়েকটি লবঙ্গ মিশিয়ে বেটে ছোট ছোট বড়ি করে শুকিয়ে রেখে প্রতিদিন একটা করে বড়ি খেলে উপকার পাবেন।

আপাং গাছের উপকারিতা

বর্ষাকালে জঙ্গলে ঝোপেঝাড়ে বেড়ে ওঠা আপাং গাছ অনেক রোগের প্রতিষেধক। হিন্দিতে একে চিড়চিটা আবার অনেকে লটজিরা বলে থাকেন। আপাং একবর্ষজীবি উদ্ভিদ। এই গাছের মূল, পাতা,কাণ্ড, ফুল, বীজ সবকিছুই ঔষধি গুন সম্পন্ন। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে আপাং গাছের ব্যবহার আদিকাল থেকে হয়ে আসছে। আপাং গাছের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আপাং গাছের বিশেষ শারীরিক উপকারিতার নিচে আলোচনা হলঃ
আপাং গাছের শিকড় খেলে কি হয়

  • অশ্ব রোগের যন্ত্রণা এবং রক্ত পড়া বন্ধ করতে আপাং গাছের বীজ বেশ উপকারী। আপাং গাছের বীজ ভালোভাবে ধুয়ে বেটে সকালে একবার নিয়মিত কয়েকদিন খেলে অশ্ব রোগ আরোগ্য হয়।
  • হজমের সমস্যার সমাধান করে ডায়রিয়া ও কলেরা নিরাময়ের সাহায্য করে আপাং গাছ।
  • গর্ভবতী মায়ের অকাল প্রসবের সম্ভাবনা দেখা দিলে আপাং গাছের শিকড় কোমরে বেঁধে দিলে অকাল প্রসবের সম্ভাবনা কমে যায়।
  • গর্ভবতী মায়ের প্রসবের সময় আপাং গাছের শিকড় কোমরে বেধে দিলে প্রসব বেদনা কমে যায় এবং সহজে প্রসব হয় ।
  • আপাং গাছের রয়েছে এন্টি-ক্যান্সার উপাদান। এই গাছের নির্যাস ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে এবং ক্যান্সার কোষের বিভাজনক প্রক্রিয়াকে ধীর করে।
  • কোথাও আঘাত লেগে অথবা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে গেলে রক্তপাত বন্ধ করতে আপাং গাছের পাতা বেটে লাগিয়ে দিতে হবে। তাহলে রক্তপাত বন্ধ হয়।
  • বাতের ব্যথা ও জ্বর নিরাময় আপাং গাছ কার্যকরী। আপাং গাছের শিকড় ছেচে দিনে দুইবার খেলে জ্বর ও বাতের ব্যথা নিরাময় হয়।
  • সর্দি, কাশি ও হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টে আপাং গাছ প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • আপাং গাছের পাতা ও ফুলের নির্যাসে রয়েছে প্রাকৃতিক উপাদান যা মানসিক চাপ বা স্ট্রেস কমিয়ে ঘুমের উন্নতি করতে সাহায্য করে। আপং গাছের পাতার চা প্রতিদিন খেলে ঘুম ভালো হয়।
  • আপাং গাছের মূলের নির্যাস চোখের জ্বালাপোড়া কমিয়ে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং চোখের পুষ্টি বজায় রাখে। 
  • চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রাচীনকাল থেকেও আপাং গাছ ব্যবহার হয়ে আসছে।
  • আপাং গাছের পাতার রস শরীরের রক্ত পরিষ্কার করে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ দূর করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ব্রণ ও ফুসকুড়ি দূর করে।
  • আপাং গাছের নির্যাস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
  • দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা সমাধান করতে এবং বীর্য গাড়ো করতে লাল আপাং গাছের শিকড় তুলে কোমরে বাধুন। আস্তে আস্তে এর ফলাফল আপনি নিজেই দেখতে পাবেন।
  • বিষাক্ত পোকামাকড় ও পাগলা কুকুর কামড়ে দিলে সেই স্থানে আপাং গাছের পাতা বেটে লাগালে বিষ নষ্ট হয়ে যায়।
  • যাদের খিদে কম এবং মুখের রুচি নেই আপাং গাছের শিকড়ের সাথে কয়েকটি লবঙ্গ বেটে ছোট ছোট বড়ি করে শুকিয়ে রেখে প্রতিদিন খেলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
  • আপাং গাছের পাতা আতপ চাল এর সঙ্গে বেটে ফোড়ার চারিদিকে লাগিয়ে রাখলে ফোঁড়ার মুখ ফেটে গিয়ে দূষিত জীবাণু বের হয়ে যায়।
  • প্রস্রাবের ইনফেকশন এবং প্রসাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে দুই থেকে তিন চামচ আপাং গাছের পাতার রস এক গ্লাস ডাবের পানির সাথে মিশিয়ে খেলে প্রসারে সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।
  • খোসপাঁচড়া ও চুলকানিতে আপাং গাছ বেশ কার্যকরী। দুই কাপ পানিতে পাঁচ গ্রাম আপং গাছের পাতা জাল করে এক গ্লাস বানিয়ে নিয়ে ছেঁকে নিয়মিত ১০ থেকে ১৫ দিন পান করলে খোশপাঁচড়া ও চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

আপাং গাছ কোথায় পাওয়া যায়

বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, মিয়ানমার সহ আরো বিভিন্ন দেশে এই গাছ জন্মে। সাধারণত দুই ধরনের আপাং গাছ হয়ে থাকে। একটি লাল ও আরেকটি সাদা। এ আপাং গাছের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঔষধি গুন সম্পন্ন। বাড়ির আশেপাশে ঝোপঝাড়ে এই গাছ জন্মে। তাছাড়া রাস্তার ধারেও এইগাছ জন্মাতে দেখা যায়।
আপাং গাছের ঔষধি গুণাবলীর জন্য প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত এই গাছের পরিচিতি রয়েছে ব্যাপক। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সাপে কাটা বিষ প্রতিরোধে আপাং গাছের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। বিষাক্ত সাপের অথবা বিছে পোকা দংশন করলে সেই স্থানে আপাং গাছের পাতা বেটে লাগিয়ে দিলে বিষ শরীরে ছড়িয়ে পড়ে না।

আপাং গাছ বাংলাদেশের সর্বত্র ঝোপে ঝড়ে, বন জঙ্গলে, রাস্তার ধারে পাওয়া যায়। আপনি যদি আপাং গাছ চিনে থাকেন তাহলে বন জঙ্গল থেকে এই গাছ সংগ্রহ করে বাড়ির উঠোনে লাগিয়ে রেখে ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারেন।

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনায় আপাং গাছের নানান শারীরিক এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তাছাড়া আপাং গাছের শিকড় খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করি, আপনারা এই সকল বিষয়ে অবগত হতে পেরেছেন।

আমাশয় ও কলেরা নিরাময়ে আপাং গাছ কিভাবে খেতে হয়

আপাং গাছের নানান ঔষধি গুন রয়েছে। তার মধ্যে আমাশয় ও কলেরা নিরাময়ে এটি বেশ কার্যকরী। আপনি যদি আমাশয় ও কলেরা নিরাময় করতে চান তাহলে আপাং গাছের শিকড় ছেচে রস করে ভালোভাবে ছেঁকে নিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার খেলে বেশ উপকার পাবেন। 
ক্ষুধামন্দা সমস্যা দূর করে হজম শক্তি বাড়িয়ে পেটের নানা ধরনের সমস্যা সমাধানে কাজ করে আপাং গাছ। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে, আপাং গাছ দিয়ে নানা ধরনের ঔষধ বানানো হয় যেগুলো আমাশয় ও কলেরা নিরাময়ের সাহায্য করে। 

তাছাড়া এই গাছের পাতা, ফুল, বীজ সবকিছুই বিভিন্ন ধরনের শারীরিক উপকার করে থাকে। এই গাছের কান্ড দিয়ে দাঁত ঘষলে যে কোন মানুষের বাকসিদ্ধি লাভ করা সম্ভব। আপাং গাছের যত উপকারের কথাই বলি না কেন তা কম হয়ে যায়। এই গাছকে প্রকৃতির আশীর্বাদ বলে মনে করা হয়।

লেখকের মন্তব্য: আপাং গাছের শিকড় খেলে কি হয়

প্রিয় পাঠক, যদি আপনারা পুরো আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে আপনি নিশ্চয় অবগত হতে পেরেছেন, আপাং গাছের শিকড় খেলে কি হয় সে সম্পর্কে। আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন। এবং আপাং গাছের উপকারিতা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পেরে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন।

এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য এবং আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। আজকের আর্টিকেল সম্পর্কে বিশেষ কোনো মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url