বাজরিগার পাখি বছরে কতবার ডিম দেয় তা জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি বাজরিগার পাখি বছরে কতবার ডিম দেয় তা জানতে চাচ্ছেন ? এবং বাজরিগার পাখি ডিম খেয়ে ফেলে কেন সে সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলে ক্লিক করেছেন? তাহলে আপনি একদম ঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা বাজরিগার পাখি বছরে কতবার ডিম দেয় এবং বাজরিগার পাখি ডিম খেয়ে ফেলে কেন সে সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। যাতে করে এই সকল বিষয়ে সঠিক তথ্য পেয়ে আপনি বাজরিগার পাখি পালনে লাভবান হয়ে থাকেন।
আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের বাজরিগার পাখি বছরে কতবার ডিম দেয় এই সম্পর্ক বিস্তারিত আলোচনা করব। তাছাড়া আপনারা আরো জানতে পারবেন বাজরিগার পাখির ডিম পাড়ার লক্ষণ, বাজরিগার পাখি কত মাস বয়সে ডিম দেয়, বাজরিগাড় পাখি ডিম খেয়ে ফেলে কেন, বাজরিগার পাখির দাম ২০২৪, বাজরিগার পাখি মেল ফিমেল চেনার উপায়, বাজরিগার পাখি পালন পদ্ধতি, বাজরিগার পাখির খাবার তালিকা এবং বাজরিগার পাখি কি কথা বলতে পারে এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত।
বাজরিগার পাখির ডিম পাড়ার লক্ষণ
বাজরিগার পৃথিবীর জনপ্রিয় পোষা পাখিদের মধ্যে অন্যতম। বিশ্বে তৃতীয় পোষা প্রাণী হিসেবে স্বীকৃত এই বাজরিগার পাখি। বাজরিগার পাখি বছরে কতবার ডিম দেয় সে সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথে থাকুন। বাজরিগার পাখি ডিম পাড়ার আগে সাধারণত এদের নাকের অংশগুলো বাদামী রঙ ধারণ করে এবং মাথার সাদা অংশ হলুদ রং ধারণ করে।
তাছাড়া আপনি ডিম পাড়ার জন্য যে হাঁড়ি দিয়ে রাখবেন বাজিগার পাখি তার ধরালো ঠোঁট দিয়ে হাড়ি কামড়াতে থাকবে এবং হাড়ির ভেতরে সকল ময়লা আঁচড়িয়ে বের করতে থাকবে। কেননা হাড়িটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করবে। বারবার ফিমেল বাজরিগার পাখি হাঁড়ির ভেতরে যাওয়া আশা করবে।
তাছাড়া আরও একটি লক্ষণ যা দেখে বুঝবেন আপনার বাজরিগার পাখির ডিম পারবে। সেটা হল বাজরিগার পাখির পায়খানার পরিমাণ বেড়ে যাবে। এবং পায়খানা নরম ও পাতলা হবে । তাছাড়া বাজরিগার পাখি ডিম দেওয়ার আগে ঘনঘন মিটিং করবে। মেল ও ফিমেল পাখিটি দিনে দুই থেকে তিনবার মিটিং করতে দেখা যাবে।
ডিম পাড়ার আগে বাজরিগার পাখি নরম ও পানীয় জাতীয় খাবার বেশি খাবে। যেমন ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন জাতীয় খাবার আগের তুলনায় বেশি খাবে।ডিম দেওয়ার আগে বাজরিগার পাখি ঠোঁট থেকে খাবার ঝেড়ে ফেলবে এবং খাবার নষ্ট করার লক্ষণ দেখা দিবে।
বাজরিগার পাখি কত মাস বয়সে ডিম দেয়
বাজরিগার পাখি সাধারণত প্রজনন উপযোগী হতে ৪ মাস সময় লাগে। ৪ মাস থেকে ৮ মাস বয়সে প্রজনন ক্ষমতা অনেক বেশি হয়। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজরিগার পাখির ৮ মাস বয়সের আগে মেল ও ফিমেল পাখির জোড়া তৈরি করা ঠিক নয়। ৮ মাস পর মাস পরে এরা ঘন ঘন মিটিং করে। মিটিং করার ৮-১০ দিন পর থেকে এরা ডিম পাড়া শুরু করে। প্রাথমিক অবস্থায় তার থেকে পাঁচটি ডিম দিয়ে থাকে। তারপরে ৮ থেকে ৯ টি ডিম ও দিয়ে থাকে এই বাজরিগার পাখি।
বাজরিগার পাখি ডিম খেয়ে ফেলে কেন
বাজরিগার পাখিকে সাধারণত উপযুক্ত বয়সে ব্রিডিং করানো এবং পুষ্টিকর খাবার না খাওয়ানো এই পাখির ডিম খেয়ে ফেলার অন্যতম কারণ।ব্রিডিং দেওয়ার উপযুক্ত সময় ১০ মাসের উপরে অনেক সময় ৮ মাস বয়সে। এর আগে যদি পাখিকে ব্রিডে দেওয়া হয় তাহলে অনেক সময় পাখি ডিম দিয়ে ডিম নষ্ট করে বা খেয়ে ফেলে।
পাখি কে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট এবং ভালো মানের খাবার না দিলে ডিম পারার পর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম চলে যায় যার জন্য পাখি অসুস্থ হয়ে পড়ে।তাছাড়া আপনারা অনেকেই খাঁচায় দাওয়া হাড়ির দিকে বারবার নাড়াচাড়া ও উকিল দিয়ে থাকেন। অথবা সব সময় হাড়ির দিকে আলো দিয়ে রাখলেও বাজরিগার পাখি তার ডিম খেয়ে ফেলে বা নষ্ট করে ফেলে।
বাজরিগার পাখি বছরে কতবার ডিম দেয়
বাজরিগার পাখি একটি পোষা ছোট টিয়া নামে পরিচিত। সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব ও দক্ষিণ পশ্চিম বন্য অঞ্চলে এই পাখি দেখা যায়। এই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Melopsittacus Undulatu। এই পাখিরা তৃণভূমিতে ঝাকে ঝাকে একসাথে উড়ে বেড়ায়। বন্য অঞ্চলে এক জোড়া বাজরিগার পাখি বছরে একবার ডিম পাড়ে।
কিন্তু বন্দী অবস্থায় অথবা খাঁচার ভেতরে পালন করা অবস্থায় একজোড়া স্ত্রী ও পুরুষ পাখি মিলনের পর ৮ থেকে ১০ দিন পর ডিম পাড়া শুরু করে। সাধারণত ৪ থেকে ৮ টি ডিম পাড়ে এবং ১৮ থেকে ২১ দিন সময় লাগে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হতে। বাজরিগার পাখির বাচ্চা ৩৫ থেকে ৪২ দিন বয়স থেকে একা একা খেতে এবং অল্প অল্প উড়তে শুরু করে।
বাচ্চার জন্ম দেওয়ার পরে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে এই বাজরিগার পাখিগুলো আবার ডিম পাড়া শুরু করে। তবে বাণিজ্যিকভাবে বাজরিগার পাখি পালনের ক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করে বাজরিগার পাখির ডিম পাড়ার হাড় বৃদ্ধি করা হয়। যেমন, সঠিক খাদ্য, পর্যাপ্ত পরিশ্রম, উন্নত বাসা এবং সঙ্গমের ব্যবস্থা করলে এসব পাখি সময়মতো নিয়মিত ডিম সক্ষম হয়।
বাজরিগার পাখি বছরে কতবার ডিম পারবে তা এই পাখির ডিম পাড়ার একটি নির্দিষ্ট চক্রের উপর নির্ভর করে। পাখির বয়স স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত কারণে এই চক্র প্রভাবিত হয়। ডিম পাড়ার জন্য এই পাখির যথেষ্ট পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরী।তবে আপনি যদি শখের বশে বাজরিগার পাখির পালন করেন, তাহলে বছরে দুইবার ব্রিডিং করিয়ে ডিম বাচ্চা নেওয়া।
আর কেউ যদি বাণিজ্যিকভাবে বছরে সব সময় ডিম বাচ্চা নিয়ে নিতে চান তাহলে বছরে ৫ থেকে ৬ বার ডিম বাচ্চা নিতে পারবেন। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে পাখির খাবারে এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের উপর নজর দিতে হবে। কেননা বার বার ডিম বাচ্চা দেওয়ার ফলে পাখির শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে আপনি ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার এবং প্রয়োজন পড়লে সাপ্লিমেন্ট দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে একজন পশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
বাজরিগার পাখির দাম ২০২৪
সাধারণত বাজরিগার পাখির বয়স অনুযায়ী এর দাম নির্ধারিত হয়। বাজরিগার পাখির দাম বিভিন্ন জায়গা ভেদে বিভিন্ন রকম। সাধারণত বাচ্চা পাখি গুলোর দাম ৩০০ থেকে শুরু হয় এবং বড় পাখিগুলো মূল্য ১২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ছোট সাইজের বাজরিগার ১ টি পাখির মূল্য ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। বাজারে একজোড়া মাঝারি সাইজের বাজরিগার পাখি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। বড় সাইজের একজোড়া বাজরিগার পাখির দাম ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা হয়ে থাকে। তাছাড়া জাত ভেদে এ পাখির দাম বিভিন্ন রকম হয়।
বাজরিগার পাখি মেল ফিমেল চেনার উপায়
আমরা অনেক সময় বাজরিগার পাখি কেনার সময় পুরুষ ও স্ত্রী পাখি না চিনে একই লিঙ্গের দুটো পাখি কিনে ফেলি। যার জন্য আমরা বিভিন্ন সমস্যা ফেস করি। তখন দেখা যায় পাখির ডিম দেয় না, বাচ্চা হয় না তখন অনেকে হতাশ হয়ে যায়। কিছু বিষয় লক্ষ্য করে আপনি যদি পাখি কিনেন তাহলে আপনি নিশ্চয়ই লাভবান হবেন।
সাধারণত বাজরিগার পাখির বয়স ৩ থেকে ৪ মাস হলেই নাকের উপরের রং দেখেই বোঝা যায় কোনটা স্ত্রী এবং কোনটা পুরুষ পাখি। সাধারণত প্রথম দিকে পুরুষ পাখির নাকের বর্ণ গোলাপি রঙের হয়। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে এর রং হবে নীল। আর স্ত্রী পাখির নাকের বর্ণ সাদা থাকে। আর বয়স বাড়ার সঙ্গে এর বর্ণ হবে খয়েরি বা বাদামি কালার।
বাজরিগার পাখি পালন পদ্ধতি
বাজরিগার পাখি পালন করতে গেলে প্রথমে আপনাকে একটি উপযোগী খাঁচা কিনতে হবে। একটি ব্রিডিং উপযোগী খাঁচার দাম সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা হয়ে থাকে। ভালো ফলাফলের জন্য আপনি প্রথমে ২ জোড়া বাজরিগার পাখি দিয়ে শুরু করতে পারেন। দুইটি পুরুষ ও দুইটি স্ত্রী পাখি কিনে এনে একটি খাঁচায় শুধু দুইটি পুরুষ পাখি এবং অন্য খাঁচায় শুধু দুটি স্ত্রী পাখি কমপক্ষে ছয় থেকে সাত মাস রাখুন।
তারপর দুই খাঁচায় পুরুষ এবং স্ত্রী পাখির জোড়া মিলিয়ে দিন।খাঁচায় দেওয়ার এক মাস পর খাঁচার এক কোণে হাড়ি ঝুলিয়ে দিন। এবং পাখির বসার লাঠি হতে হবে কাঠের বা বাঁশের। পাখির এই বসার লাঠির একপ্রান্ত হাড়ির মুখের কাছাকাছি দিতে হবে। নিরাপদ ও সুরক্ষিত স্থানে পাখির খাঁচা বসান। পাখির পানির পাত্র পাখির বসার জায়গা থেকে দূরে রাখুন। এবং খাবারের পাত্র খাঁচার এক কোণে দিন যেন পাখির মল খাবারের পাত্রে না পড়ে।
বাজরিগার পাখির খাবার তালিকা
বাজরিগার মানুষের অত্যন্ত প্রিয় একটি পাখি। এই পাখিটি খাঁচায় পোষ মানানো যায়। বিভিন্ন দেশে এই পাখি বিভিন্ন নামে পরিচিত। বাজরিগার পাখির প্রতিদিন খাবারের তালিকায় কাউন, চিনা এবং অল্প পরিমাণ সূর্যমুখীর বীজ, তিসি, গুজিতিল, কুসুম ফুলের বীজ ও পোলাওয়ের চালের ধান রাখতে হবে। এক সপ্তাহে প্রায় তিন দিন শাক- সবজি যেমন পালং শাক,কলমি শাক,লাল শাক, হেলেঞ্চা শাক,ফুলকপি, পাতা কপি, মুলা, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, শসা ইত্যাদি দিতে হবে।
প্রতিদিনের পানি বদলে দিতে হবে। প্রতিদিন খাবারের পাত্র পরিষ্কার করে নতুন খাবার দিতে হবে। বিশেষ করে বাজরিগার পাখির বাচ্চাদের খাবারের দিকে বেশ নজর দিতে হয়। বাজরিগার পাখির বাচ্চার হজম ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে কম থাকে তাই সময় নরম ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি বাচ্চা পাখিকে সিদ্ধ ডিমের সাদা অংশ, কলমি শাক, লাল শাক, পাতাকপি, গাজর, বরবটি ইত্যাদি দিতে পারেন।
বাজরিগার পাখি কি কথা বলতে পারে
বাজরিগার পাখি সাধারণত টিয়া পাখির একটি গোত্রের মধ্যে পড়ে। সাধারণত দুই ধরনের বাজরিগার পাখি হয় একটি হল ইংলিশ বাজরিগার এবং আরেকটি অস্ট্রেলিয়া বাজরিগার। ইংলিশ বাজরিগার পাখি আকৃতিতে বড় হয় এবং অস্ট্রেলিয়া বাজরিগার পাখি আকৃতিতে একটু ছোট হয়। আমাদের দেশে সাধারণত বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়া বাজরিগার পাখি পালন করা হয়।
বাজরিগার পাখি খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। মানুষ সহ বিভিন্ন পোষা পশু -পাখির সাথে এদের বন্ধুত্ব হয়ে থাকে। বাজরিগার পাখির শরীরের তুলনায় ব্রেন যথেষ্ট বড় হয়ে থাকে। অন্যান্য পাখির তুলনায় এই পাখি অত্যন্ত বুদ্ধিমান হয়। বিভিন্ন তথ্যে এসেছে বাজরিগার পাখি তিন সংখ্যার যোগ করতে পারে। ভালোভাবে ট্রেনিং করলে সব জাতের বাজরিগার মানুষের মতই সুস্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলতে পারে। সঠিকভাবে ট্রেনিং দিতে পারলে বাজরিগার পাখি তার মালিকের সঙ্গে খুবই সুসম্পর্ক গড়ে তুলে এবং তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারে।
লেখকের শেষ মন্তব্য :বাজরিগার পাখি বছরে কতবার ডিম দেয়
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই বাজরিগার পাখি বছরে কতবার ডিম দেয় এবং বাজরিগার পাখি ডিম খেয়ে ফেলে কেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তাছাড়া বাজরিগার পাখি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। যা আপনাদের বাজরিগার পাখি পালনে এবং এখান থেকে কিভাবে অনেক বেশি লাভবান হবেন তা বুঝতে পেরেছেন।
আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং আপনার উপকারে আসে তাহলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না এবং আপনার বিশেষ কোনো মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url