বিটরুট কিভাবে খায় - বিটরুট দিয়ে রূপচর্চা
বিটরুট কিভাবে খায়, বিটরুট দিয়ে রূপচর্চা করতে হয় সে সম্পর্কে কোথাও কোন সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না? তাহলে আপনি ঠিক জায়গাতে ক্লিক করেছেন। এই আর্টিকেলটি কেবলমাত্র আপনার জন্য। যেই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন বিটরুট কিভাবে খায়, বিটরুট দিয়ে রূপচর্চা সহ বিটরুট সম্পর্কে বিস্তারিত।
ভূমিকা: বিটরুট কিভাবে খায় - বিটরুট দিয়ে রূপচর্চা
বিটরুট এমন একটি ফসল যার উৎপত্তি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে। প্রাচীনকাল থেকেই এটি খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রোমানরা ঔষধি গুণের জন্য বিটরুট ব্যবহার করত। ১৬ শতকে ইউরোপে বিটরুট চাষ শুরু হয়। বিটরুটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষের ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে। বিটরুট কাঁচা, রান্না করা বা ভেজে সব অবস্থাতেই খাওয়া যায়।
এটি একধরনের সবজি, যা প্রায় সকল তরকারিতেই খাওয়া যায়। এটি কেবলমাত্র তার লাল রঙ্গের জন্যই নয়, এর নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। বিটরুটে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম সহ নানা ধরনের উপাদান। যা আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে বিশেষ ভাবে কাজ করে। বিটরুট কিভাবে খায় এবং বিটরুট সম্পর্কে আরো জানতে সর্ম্পূন আর্টিকেলটি পড়ুন।
বিটরুট কিভাবে খায়
সম্পূর্ণ রক্ত বর্ণের এই ফল টি রান্না করেও খাওয়া যায় কাঁচা সালাদ হিসেবে ও খাওয়া যায়। বিটরুট খাওয়ার সঠিক নিয়ম না জেনে খেলে উপকারিতার চেয়ে ক্ষতি হতে পারে তাই সঠিক নিয়ম জেনে বিটরুট মজাদার স্বাধে খেতে পারবেন। আসুন জেনে নেই বিটরুট কিভাবে খায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত-
ওজন কমাতেঃ একটি পারফ্যাক্ট ডিটক্স পানীয় তৈরি করা যেতে পারে বিটরুট দিয়ে। প্রচুর পরিমান আয়রন, মিনারেল, ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম থাকে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ১ কাপ পানির সাথে পরিমান মতো বিটরুট, লেবু, পুদিনা, একটি ব্লেন্ডারে মিক্স করে জুস বানিয়ে সেবন করলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ চর্বি কমে যায়। প্রোটিন ও ফাইবার যুক্ত এই পানীয় টি মেদ কমানোর পাশাপাশি পেশি শক্তি বৃদ্ধি এবং শরীরে প্রোটিন এর চাহিদা পূরণে সাহায্য করে।
ত্বক এর লাবণ্য বৃদ্ধিতেঃ বিটরুটে ক্যারোটেনয়েড নামক উপাদান বিদ্যমান থাকায় ত্বকের লোমকূপ গুলো সতেজ থাকে। অ্যানটি-ইনফ্লেমেটরি নামক উপাদান এর উপস্থিতিতে ত্বকের প্রদাহ কমায়। ত্বকে বার্ধক্য কমিয়ে ত্বক টান টান রাখে। এছাড়াও ত্বকে বলি লেখা কমাতে সাহায্য করে। ফেসপ্যাক হিসাবে বিটরুট এর গুঁড়া বা কাঁচা বিটরুট পেস্ট করে লাগানো যায়। বিটরুট এবং গাজর পেস্ট করে ডিপফ্রিজে রাখলে ঠাণ্ডা কিউব গুলো চোখ এর ক্লান্তি ভাব দুরের সাথে ডার্ক সার্কেল রিমুভ করে।
সালাদ হিসাবেঃ আমরা বাঙ্গালিরা প্রায়ই সালাদ খেয়ে থাকি। সালাদ এর সাথে বিটরুটের কম্বিনেশন অনেক টেস্ট ও হেলদি হয়ে থাকে। অনেকেই সরাসরি বিটরুট সালাদে খেয়ে থাকে অনেকে সেদ্ধ করে সালাদে খেতে পছন্দ করে। তবে সেদ্ধ করে সালাদে খাওয়া ই উত্তম।
বিটরুট দিয়ে রূপচর্চা
৬ টি ঋতু তে পরিবর্তনের কারনে ত্বকে নানা রকমের সমস্যা লেগেই থাকে, কখনো ঠোঁট কালো হয়ে যাওয়া, চোখ এর নিচ এ কালো দাগ, মুখের অসম রং এই সব সমস্যা সমাধান হতে পারে নিয়মিত বিটরুট ব্যাবহারে আসুন জেনে নেই কিছু রুপচর্চার টিপস সম্পর্কে।
ফুটফুটে উজ্জ্বল ত্বক পেতে এক টুকরো বিটরুট নিন পুরো মুখে আলতো ভাবে ঘুসুন, যে স্থান উজ্জ্বল করতে চান সেখানে ও ব্যাবহার করতে পারেন ১৫-২০ মিনিট পর স্থানটি ধুয়ে ফেলুন। উজ্জ্বল ত্বক পেতে সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন এভাবে ব্যাবহার করুন।
বিটরুট এর রস এবং মধু শুধু এই ২ টি উপকরণ একত্র করে ব্যাবহার এ ডার্ক সার্কেল দূর হয়ে যায়। পেস্ট টি চোখের চার পাশে লাগিয়ে ৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন চোখের ক্লান্তি এবং ডার্ক সার্কেল গায়েব হয়ে যাবে নিমিষেই।
পিঙ্কেশ ঠোঁট কে না পছন্দ করে? কিন্তু অনেক সময় ডেড সেল এর কারনে ঠোঁট কালো দেখায়। এই কালো ভাব দূর করতে বিটরুট এর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে ঠোঁট এ মাখুন এতে ঠোঁট এর ডেড সেল দূর হয়ে যাবে সাথে ঠোঁট কোমল হবে।
বলিরেখার মতো গুরুতর সমস্যা সমাধানে বিটরুট এর মাস্ক তৈরি করে নিন। বিটরুট এর রস, মধু ও দুধ এই ৩ টি উপকরণ মিশ্রিত করে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন। সপ্তাহে ২ বার মাস্ক টি ব্যাবহারে বলিরেখার সমস্যা সমাধান হয়ে ত্বক টানটান হয়ে যাবে।
ছেলে এবং মেয়ে কম বেশি সকল এর একটি কমন সমস্যা থাকে আর টা হল ব্রণ। এই মারাত্মক সমস্যা থেকে মুক্ত হতে আমরা কত প্রসাধনী ব্যাবহার করে থাকি কিন্তু কিছু দিন পর আবার ব্রণ হয়। শুধু মাত্র ২ টি ঘরোয়া উপকরণ দিয়া আয় মারাত্মক সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারেন। সমপরিমাণ বিটের রস এবং টমেটোর রস লাগিয়ে রাখুন। শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এর পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এটি সপ্তাহে ২ দিন করুন ব্ল্যাকহেদ হোয়াইটহেড সহ ব্রণ এর সমস্যা ও সমাধান হয়ে যাবে।
বিটের উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক, বর্তমানে পথ্য খাদ্য তালিকার শীর্ষে রয়েছে বিটরুট। বর্তমানে এমন কোনো বয়সের মানুষ পাওয়া যাবে না যে বিটরুট চেনে না। সাধারনত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বিটরুট উৎপাদন হয়। কম বেশি সব বয়সের মানুষ বিটরুট খেয়ে থাকেন। কিন্তু এটি খাওয়ার সঠিক সময়, বিটের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানি না। এই বিষয়টি সম্পূর্ণ না জেনে বিট সেবন হতে পারে শরীরের অবনতি। তাই আসুন বিস্তারিত জেনে নেই।
বিটের উপকারিতাঃ
হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি অথবা অতিরিক্ত কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে বিটরুট কারন বিটরুট ফাইবার যুক্ত খাদ্য।
- লুটেইন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট' এই উপাদান টির অভাব হলে চোখের সমস্যা হয়। এই উপাদন টি ভরপুর রয়েছে বিটরুটে। তাই বিটরুট নিয়ম করে সেবনে চোখ ভাল থাকে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে বিটরুট কার্যকরী। রক্তের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে বিটরুট।
- রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে বিটরুট।
- চর্বি জমতে দেয় না বিটরুটে অবস্থিত বিটেইন নামক উপাদান। তাই ডায়েট এ বিটরুট যোগ করুন।
- শরীরে হিমোগ্লোবিন ের মাত্রা বাড়াতে উপকারী বিটের রস। জন্ডিস, ফ্যাটি লিভার ের মতো সমস্যা সমাধান করতে বিটরুট অনেক সাহায্য করে থাকে।
- যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা বিটরুটের সেবন করুন নিয়মিত।
বিটের অপকারিতাঃ
এত এত উপকারী একটি ফল হলেও এর কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। এক নজরে দেখে নিন-
- একটানা নিয়মিত না খেয়ে ২ দিন পর পর বিটের জুস বা সালাদ, স্মুদি খাওয়া যেতে পারে। অন্যান্য খাবারের পুষ্টি গুন নষ্ট করে অতিরিক্ত সেবনের ফলে।
- নিম্ন রক্তচাপ রোগী বিটরুট সেবন থেকে বিরত থাকুন। বিটরুট রক্তচাপ আর ও কমিয়ে দিতে পারে।
- কিডনি ভাল রাখতে বিটরুট খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- বিটরুট সেবনে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
- ত্বকে অ্যালার্জি, চুলকানির সংক্রমণ থাকলে বিটরুট ব্যাবহার থেকে বিরত থাকুন।
- প্রসাব লাল জনিত সমস্যা হতে পারে।
সুতরাং নিয়ম জেনে সঠিক সময়ে সঠিক পরিমানে বিটরুট সেবন করুন। প্রয়োজনে ডাক্তার এর পরামর্শ নিন।
বিটরুট এর অপকারিতা
বিটরুট একটি সুপারফুড। তবে মাত্রাতিরিক্ত সেবন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। প্রতি দিন ১৫০ মিলি থেকে ১৮০ মিলি বিটরুট জুস সেবন করা ভাল। এর বেশি সেবন করলে খাবারে বদ হজম দেখা দিতে পারে। রাতের খাবারের পর কখন বিটরুট জুস পান করবেন না। সকাল বা দুপুরে সেবন করুন। যাঁদের লো-প্রেসার রয়েছে তারা বিটরুট সেবন থেকে বিরত থাকুন। কারন বিটরুটে রয়েছে নাইট্রেট, নাইট্রেট হজমের সময় নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি হয়। যা লো- প্রেসারের মত সমস্যা বৃদ্ধি করে।
কিডনি সমস্যা বৃদ্ধি করে এই বিটরুট তাই চেষ্টা করুন খাদ্য তালিকা থেকে বিটরুট বাদ দিতে। কারন বিটরুটে আছে অক্সালেট যা কিডনি তে পাথর তৈরি হয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।
হাঁপানি রুগীরা বিটরুট এড়িয়ে চলুন। বিটরুট সেবনে স্নায়ু জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এলার্জি সংক্রান্ত সমস্যা, ত্বকে ফুসকুড়ি, বা চুলকানি থাকলে বিটরুট খাওয়া, বা ত্বকে ব্যাবহার থেকে বিরত থাকুন।
বিটরুট কি শালগম
বিটরুট ও শালগম ভিন্ন দুটি সবজি। তবে বিদ্যুৎ এবং শালগম দুটি ভিন্ন সবজি হলেও এদের পুষ্টিগুণ প্রায় একই।
বিটরুট:
বিটরুটের বৈজ্ঞানিক নাম বেটা ভালগারিস (Beta vulgaris)। এটি দেখতে সাধারণত গাড়ো লাল রংয়ের এবং এটির আকৃতি পিয়াজের মত হয়ে থাকে। বিটরুট খেতে পানির মত কিন্তু অল্প পরিমান মিষ্টি। বিটরুটে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফাইবার সহ আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ বিদ্যমান।
যা আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, শক্তি বৃদ্ধি এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা লাবণ্যতা প্রদান করে। এটি সাধারণত সালাত বা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।
শালগম:
শালগমের বৈজ্ঞানিক নাম ব্রাসিকা রাপা ( Brassica rapa)। শালগম দেখতে সাদা, বেগুনি বা হলুদ রঙের হয়ে থাকে। এটিতে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে গ্লুকোসিনোলেট পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ। যা আমাদের হাড় ভালো রাখে, ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
বিটরুট এর দাম কত
বিটরুট খেতে গেলে যে জিনিসটি আমাদের প্রথমে জানা দরকার তা হল বিটরুট এর দাম। বর্তমান সময়ে বিটরুট এর চাহিদা অনেক বেশি থাকায় এর দাম কম বেশি হতে পারে। বিটরুট এর চাহিদা যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি বিটরুটের গুড়ার চাহিদা ও অনেক।
বিটরুট এর দাম বাজারের চাহিদা, গুণগত মান এবং মৌসুমের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন হতে পারে। তবে যেখান থেকেই বিটরুট কিনুন না কেনো বাজার জাচাই করে বিটরুট ক্রয় করার চেষ্টা করুন। বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
লেখকের শেষ মন্তব্য: বিটরুট কিভাবে খায় - বিটরুট দিয়ে রূপচর্চা
প্রিয় পাঠক, এতক্ষনে বিটরুট কিভাবে খায় এবং বিটরুট দিয়ে রূপচর্চা কিভাবে করতে হয় তা জানতে পেরেছেন। আবার বিটরুট এর দাম কত, বিটরুট কি শালগম, বিটরুট এর অপকারিতা এবং বিটের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। বিটরুট প্রাকৃতিক একটি সবজি যার গুনগত পুষ্টি আমাদের শরীর ভালো রাখার পাশাপাশি শক্তি ও যোগায়।
তবে বিটরুটের পরিমান ও পুষ্টিগুন সম্পর্কে যথাযথ ধারনা রেখে তা খাওয়া বা গ্রহন করা উচিত। এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য এবং আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। আজকের আর্টিকেল সম্পর্কে বিশেষ কোনো মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url