হঠাৎ প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ, কারন এবং ঔষধের নাম জানুন

হঠাৎ প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি হতে পারে এবং হাই প্রেসারের ঔষধের নাম কি তা জানতে চেয়ে এই আর্টিকেলটিতে ক্লিক করেছেন। আমি রাবেয়া আছি আপনাদের সাথে আমি আপনাদের জানাবো হঠাৎ প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি এবং হাই প্রেসারের ঔষধের নাম কি সম্পর্কে বিস্তারিত।
হাই প্রেসারের ঔষধের নাম কি
এছাড়া আরো জানতে পারবেন- প্রেসার হাই হলে কি খেতে হবে এবং ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় সম্পর্কে তাই মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ন আর্টিকেলটি পড়ুন। আশা করি উপকৃত হবেন।

ভূমিকা: হঠাৎ প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ - হাই প্রেসারের ঔষধের নাম কি

উচ্চ রক্তচাপ যাকে ইংরেজিতে High Blood Pressure বলা হয়ে থাকে। আমাদের প্রেসার সাধারণত ১২০ বাই ৮০ হয়ে থাকে। যা আমাদের শরীরে স্বাভাবিক রক্তচাপ। এর থেকে কম বা বেশি হলে তা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হাই প্রেসার হলে আমাদের রক্তপ্রবাহ মাত্রা স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ মাত্রার থেকে বেশি থাকে ।

রক্তচাপ বেশি হওয়ার কারনে আমাদের রক্ত প্রবাহ নাড়ীতে অনেক চাপের সৃষ্টি হয়। যার ফলে আমাদের হার্টের উপর প্রভাব পড়ে। ততক্ষনাৎ রক্তচাপ স্বাভাবিক না হলে আমাদের হার্ট অ্যাটাক, বিভিন্ন স্ট্রোক এবং কিডনি সমস্যা সহ অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। তাই আমাদের উচিত রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রনে রাখা। হাই প্রেসার সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ন লেখাটি পড়ুন।

হঠাৎ প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ

আমাদের বিভিন্ন কারনে প্রেসার বেড়ে যায়। তবে প্রেসার বেড়ে যাওয়ার আগে আমাদের নিদিষ্ট করে বলা খুব মুশকিল হয়ে যায় যে এটি হাই প্রেসার। কিন্তু আমরা হঠাৎ প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ সমূহ আন্দাজ করতে পারি। এই লক্ষণ গুলো পরিলক্ষিত হলে আমরা ধরে নিতে পারি যে এটি হাই প্রেসার। তবে সবার ক্ষেত্রে এটি নাও হতে পারে। চলুন জানি হঠাৎ প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে
জানি।
হঠাৎ প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ
  • হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেলে আমাদের তীব্র মাথা ব্যথা হতে পারে।
  • হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেলে আমরা চোখে ঝাপসা দেখার মত সমস্যায় ভূগতে পারি।
  • উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেলে আমাদের বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেলে আমাদের বুক ব্যথা হতে পারে এবং সেই ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে।
  • উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার কারনে আমাদের শ্বাস কষ্ট হতে পারে।
  • হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেলে আমাদের শরীর অনেকটা দূর্বল বা ক্লান্তি অনুভব করে থাকে।
এছাড়া আরো অন্যান্য কারনে ও লক্ষনীয় হতে পারে। হাই প্রেসার আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই উচ্চ রক্তচাপের কারনে আমাদের যেকোন ধরনের স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের মত সমস্যা হতে পারে। সেজন্য এই সময় দেরি না করে যথা সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

হাই প্রেসারের ঔষধের নাম কি

হাইপ্রেসার থেকে বাঁচতে আমরা নিয়মিত হাই প্রেসারের ঔষধ খেয়ে থাকি। অনেক কোম্পনিরই হাই প্রেসারের ঔষধ তৈরি করে থাকে। যেগুলো বাজারে অনেক কম মূল্যেই পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা চাইলেও ডাক্তারের পরার্মশ ছাড়া হাই প্রেসারের ঔষধ খেতে পারিনা, খাওয়া উচিত নয়। তবে জেনে রাখা ভালো কোন ঔষধ গুলো হাই প্রেসারের জন্য হয়ে থাকে।

Abetis 20 mg: এটি একটি ট্যাবলেট জাতীয় ঔষধ। এটি সাধারণত হাই প্রেসার কমানোর জন্য বা প্রেসার স্বাভাবিক রাখার জন্য খাওয়া হয়। এটি এসিআই লিমিটেডের একটি ট্যাবলেট, যা আমাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং চার্বি জাতীয় পদার্থ অপসারণ করতে সাহায্য করে। এছাড়া আমাদের কোলেস্টেরল স্বাভাবিক রেখে আমাদের হার্ট অ্যাটাক, বিভিন্ন স্ট্রোক সহ অন্যান্য ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

এই ট্যাবলেটটি প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য দিনে ১ বার খাওয়া যেতে পারে। ‍দিন বা রাত যেকোন ভাগে খাওয়া যেতে পারে। তবে এটি খাওয়ার উপযোক্ত সময় হলো রাতের বেলা। এই ট্যাবলেটটি খাওয়ার আগে বা পরে দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়, তাবে খাওয়ার পরে খাওয়া উত্তম। নিয়মিত খেলে হাই প্রেসার হওয়ার সম্ভাবনা কম।

Tenobis 2.5 mg: এটি একটি বিট ব্লকার ট্যাবলেট জাতীয় ঔষধ। এটি সাধারণত আমাদের উচ্চ রক্তচাপ হলে সেবন উপযোগী। এছাড়া হার্টের সমস্যাতে ও খাওয়া যেতে পারে। এটি আমাদের উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক থেকে রক্ষা করে। এছাড়া হার্টের কার্যকারিতা বাড়াতে ও সাহায্য করে থাকে।

এই ট্যাবলেটটি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে থাকা অ্যাড্রেনালিন কমে যায়। যার কারনে উচ্চরক্ত চাপ কমে যায় এবং হার্টের উপর যে চাপের সৃষ্টি হয়ে থাকে তা হ্রাস করতে সাহায্য করে। এটি দিনে ১ বার খাওয়ার যেতে পারে। খাওয়ার পর খাওয়া উত্তম। কেবলমাত্র এই ঔষধই নয়, যে কোন ঔষধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে খাওয়া উচিত।

প্রেসার হাই হলে কি খেতে হবে

প্রেসারের রোগীদের জন্য সঠিক খাবার চিহিৃত করা এবং গ্রহন করা খুবই গুরুত্বপূর্ন। কিছু খাবার রয়েছে যা খাওয়ার ফলে আমাদের প্রেসার কমাতে সাহায্য করে আবার কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো আমাদের প্রেসার বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তেমনি কিছু খাবার নিয়ে আজকের এই আলোচনা। চলুন জানি প্রেসার হাই হলে কি খেতে হবে-

হাই প্রেসারের জন্য নান ধরনের ফল খাওয়া যেতে পারে। ফলে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম থাকে যা আমাদের শরীরে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করে উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে আপেল, কলা এবং বেদেনা উচ্চ রক্তচাপের জন্য বেশ কার্যকারি। এছাড়া সবজি জাতীয় খাবারের মধ্যে আলু, গাজর, ব্রকলি এবং মিষ্টি কুমড়া খাওয়া যেতে পারে।

হাই প্রেসার কমানোর জন্য আমরা কাঠবাদাম, চিনাবাদম, আখরোট বা এই জাতীয় খাবার খেতে পারি। এছাড়া চিয়া সিড বা অন্যান্য যেসকল সিড রয়েছে তা খেতে পারি। কারণ এই ধরনের খাবার গুলোতে প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, আর ম্যাগনেসিয়াম আমাদের রক্তপ্রবাহকে শীতল করতে সাহায্য করে, যে কারনে আমাদের হাই প্রেসার কমে যায়।

এছাড়া হাইপ্রেসার কমানোর জন্য আমরা মুরগী বা মাছ খেতে পারি। তবে লক্ষ রাখতে হবে যে মুরগী ও মাছ গুলো যেন কম চর্বিযুক্ত হয়ে থাকে। এছাড়া সামুদ্রিক মাছ এবং দুধ জাতীয় খাবার খেতে পারি। এছাড়া তরকারিতে মটরশুঁটি বা ডাল জাতীয় খাবার খেতে পারি। এই খাবার গুলো খাওয়ার ফলে আমাদের উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।

ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়

যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা ঔষধ ছাড়া ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারবেন। তার জন্য কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। কিছু খাবার গ্রহন এবং বর্জনের মাধ্যমে এবং লাইফস্টাইলে কিছু পরিবর্তন আনলেন সম্ভব। চলুন জানি ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত। যা মেনে চললে এখান থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।
ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়
অতিরিক্ত লনব খাওয়া বর্জন করতে হবে। অতিরিক্ত লবন খাওয়ার ফলে আমাদের উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া প্রক্রিয়া জাত খাবার যেমন চিপস, বিস্কুট এবং কোমল পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। এই ধরনের খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের সোডিয়ামের পরিমান বেড়ে যায়, যেকারনে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে।

প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। পটাশিয়াম যুক্ত খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে পালন শাক, টমেটো, মিষ্টি আলু, নারিকেল পানি বা ডাব নিয়মিত খাওয়া উচিত। এই খাবার গুলো খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে পটাশিয়ামের পরিমান বৃদ্ধি পায়, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে বিশেষ ভাবে কাজ করে।

নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম করা ফলে আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে। সেজন্য আপনি নিয়মিত হাঁটতে পারে বা দৌড়াতে পারেন। এছাড়া সাইকেলিং বা সাঁতার কাটার মত ব্যায়াম করতে পারেন। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে এই ব্যায়াম বা সাঁতার কাটা উচিত।

ধূমাপায়ীদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। কারণ সিগারেটে থাকা নিকটিন রক্তপ্রবাহ নালীতে চাপ সৃষ্টি করে, যার কারনে উচ্চ রক্তচাপের মত সমস্যার দেখা দেয় এবং আমাদের ঘুম পযাপ্ত পরিমানে হয় না। ফলে উচ্চ রক্তচাপ আরো বেড়ে যায়। এজন্য আমাদের ধূমপান ত্যাগ করার সাথে সাথে আমাদের উচিত পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা।

লেখকের শেষ মন্তব্য: হঠাৎ প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ - হাই প্রেসারের ঔষধের নাম কি

প্রিয় পাঠক, এতক্ষনে হঠাৎ প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি হতে পারে, কেনো হয়ে থাকে এবং হাই প্রেসারের ঔষধের নাম কি গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। আবার ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় এবং প্রেসার হাই হলে কি খেতে হবে, কি কি খাবার বর্জন করতে হবে তা বুঝতে পেরেছেন।

হাই প্রেসার আমাদের প্রায় সকলের কমন একটি সমস্যা। এটি যেকোন সময় যে কারোর হতে পারে। সেজন্য আমাদের উচিত হঠাৎ প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে এবং হাই প্রেসারের ঔষধের নাম কি তা জেনে রাখা। তাহলে যেকোন পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে আনতে পারবো।

নিয়মিত শরীরচর্চা এবং উচ্চ তেল চর্বি জাতীয় খাবার বর্জনে উচ্চরক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা যায়। এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো নতুন নতুন রূপচর্চা বিষয়ক তথ্য পেতে আমাদের এই সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আর বিশেষ কোনো মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url