মোবাইলে বিয়ে করার নিয়ম সহ ইসলামে বিয়ে কত প্রকার জানুন
প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, সবাই ভালো আছে। আপনারা অনেকেই মোবাইলে বিয়ে করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান। যদি এই বিষয়ে জানার আগ্রহ থেকে এই আর্টিকেলে ক্লিক করে থাকেন তাহলে আপনি একদম ঠিক জায়গায় এসেছেন। কারণ এই আর্টিকেলে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।
আর্টিকেলটি পুরো পড়লে মোবাইলে বিয়ে করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। তার সাথে আরও জানতে পারবেন, ইসলামে বিয়ে কত প্রকার, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করা কি বৈধ, অভিভাবককে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করা কি জায়েজ এবং কত বছর বয়সে বিয়ে করা ফরজ এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত। সকল বিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে পুরো আর্টিকেলটি সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করা কি বৈধ
অনেক সময় ছেলে ও মেয়েরা নিজে একে অপরকে পছন্দ করে বিয়ে করে ফেলে। আর এসব বিয়েতে না থাকে কোন সাক্ষী না থাকে কোন উকিল। এমনকি পিতা-মাতার সম্মতিও থাকেনা। অনেকে আবার মনে করেন আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করলে তা জায়েজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তারা হলো ব্যভিচারিণী -যারা সাক্ষী ছাড়াই নিজেরা নিজেদের বিবাহ সম্পন্ন করে নেয়'। বর্তমান সময়ের বিভিন্নভাবে বিয়ের আয়োজন করা হয়।
আরো পড়ুনঃ কোন আমল করলে স্বামী পাগলের মতো ভালোবাসে।
অনেকে আবার বিরাট আয়োজন করে বিয়ে শাদি করেন আবার অনেকে স্বল্পপরিসরে কোর্ট ম্যারেজ করে থাকেন। তবে কোন নারী ও পুরুষ সাক্ষী ছাড়া শুধু আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করলে সেই বিয়ে জায়েজ হবে না। ইসলামিক শরীয়াতে বিয়ের শুদ্ধ হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে।এই শর্তগুলো পূরণ না হলে সেই বিবাহ জায়েজ হবে না। শর্তগুলো নিম্নরূপ:
- প্রথমত ছেলে মেয়েকে প্রাপ্তবয়স্ক এবং বুদ্ধি জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমান হতে হবে।
- দ্বিতীয়তঃ ছেলে মেয়ে নিজের সম্মতিতে 'হিজাব কবুল' বলতে হবে। এবং অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী থাকতে হবে।
- তৃতীয়তঃ সাক্ষী হতে হবে দুজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা। যারা কবুল বলার সময় উভয় বক্তব্য উপস্থিত থেকে শুনতে পাবে।
উপরোক্ত শর্তাবলী না মেনে বিয়ে করলে ইসলামী শরীয়তে বিয়ে শুদ্ধ হবে না। আশা করি, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করলে বিয়ে কবুল হবে কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, মোবাইলে বিয়ে করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
মোবাইলে বিয়ে করার নিয়ম
বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বিয়ে হচ্ছে পাত্র পাত্রীর উপস্থিত থাকা অবস্থায় তাদের উকিলের দ্বারা দুই সাক্ষীর উপস্থিতিতে আকদ- নিকোহ। । তবে কোনো কারণে পাত্র-পাত্রী দূরদেশে অবস্থান করলে তাদেরকে যে পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় তা নিয়ে এখন আলোচনা করব।
বর্তমান যুগে টেলিফোন ও মোবাইল যতই উন্নত হোক না কেন বিয়ের মজলিসে শর্ত পূরণ না হলে বিবাহ সম্পন্ন হবে না। সরাসরি মোবাইল বা টেলিফোনে প্রস্তাব ও কবুল করার মাধ্যমে বিবাহ হলে তা সহীহ হবে না। সেক্ষেত্রে পাত্র বিদেশে থাকলে পাত্র টেলিফোনে থাকবে এবং তার একজন নির্ধারিত উকিল থাকতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কোন আমল করলে চেহারা সুন্দর হয় জেনে নিন।
সাধারণ বিয়ের মত মেয়ের দেশে বিয়ের মজলিসে দুই সাক্ষীর উপস্থিতি থাকতে হবে। সাধারণ বিয়ের মতই ছেলের নির্ধারিত উকিল ছেলের পক্ষ থেকে মেয়েকে কবুল করবে। এখানে উকিল হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যাকে বর নিজের পক্ষ থেকে প্রস্তাব প্রদান ও গ্রহণের অধিকার বা সম্মতি দিয়ে থাকেন।এভাবে বিয়ে করলে 'ইজাব কবুল' শুদ্ধ হবে।
তাই মোবাইল ফোনে বিয়ে করতে হলে কোন এক পক্ষ ও অপর পক্ষের উকিলের উপস্থিতিতে হিজাব কবুল সংগঠিত করতে হবে। এবং সাধারণ বিয়ের মতই দুইজন আজাদ পুরুষ সাক্ষী অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষী থাকতে হবে যারা উভয় পক্ষের প্রস্তাবনা ও কবুল বলার সময় উপস্থিত থাকবে এবং নিজ কানে শুনবে। আশা করি, মোবাইলে বিয়ে করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন।
ইসলামে বিয়ে কত প্রকার
ইসলামে নারী পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র বৈধ ও পবিত্র উপায় হচ্ছে বিবাহ। আল্লাহ তাআলা বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেম প্রীতি, মায়া মমতা, সহানুভূতি ইত্যাদি সৃষ্টি করেছেন। বিয়ে করা হচ্ছে নবীর সুন্নত। আর যে ব্যক্তি সুন্নতের প্রতি অনীহা প্রকাশ করে সে সম্পূর্ণ মুমিন নয় এবং বিবাহের প্রতি অনিহা পোষণ করাকে কুফরি বলা হয়ে থাকে। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের যত প্রকারভেদ রয়েছে তা নিম্নরূপঃ
ওয়াজিব বিয়ে:
যখন একজন ব্যক্তির মনে ও দেহে বিয়ের প্রয়োজন বা চাহিদা থাকে এবং তার প্রতিদিনের খরচ প্রতিদিন উপার্জন করে খেতে পারার মতো সামর্থ্য থাকে তখন তার বিয়ে করা ওয়াজিব। এ সময় বিয়ে থেকে বিরত থাকলে সে গুনাহগার হবে।
ফরজ বিয়ে:
যখন কোন ব্যক্তি সামর্থ্য থাকে এবং ব্যাপক চাহিদা থাকে বিয়ের প্রতি তখন তার ওপর বিয়ে করা ফরজ।যখন বিবাহ না করলে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তখন বিয়ে করার ফরজ।
সুন্নত বিয়ে:
যখন কোন ব্যক্তির বিয়ের চাহিদা থাকে না কিন্তু স্ত্রীর অধিকার আদায়ের সামর্থ্য থাকে তবে তার উপর বিয়ে করা সুন্নত।
নিষিদ্ধ বিয়ে:
যখন কোন ব্যক্তির মনে আশংকা থাকে যে স্ত্রীর অধিকার আদায় করতে পারবে না। অর্থাৎ আর্থিক ও দৈহিক অধিকার আদায় করতে অক্ষম হওয়া সম্ভব না থাকলে তার বিয়ে করা নিষিদ্ধ।
সক্ষমতা না থাকলে রোজা রাখার নির্দেশ:
এই বিয়ে হচ্ছে কোন ব্যক্তির বিয়ের প্রতি চাহিদা আছে, তিনি একজন সক্ষম পুরুষ কিন্তু স্ত্রীকে ভরণপোষণ দেওয়ার কোন ক্ষমতা নেই। এমতাবস্থায় সেই ব্যক্তিকে হাদিসে রোজা রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেননা রোজা মানুষের দৈহিক কামনা ও উত্তেজনা দূর করতে সাহায্য করে। এ সময় সক্ষমতা অর্জনের জন্য বেশি বেশি কাজ পড়া এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে বলা হয়।
আবার অনেকে পুরুষ আছেন সক্ষম ও স্বাবলম্বী কিন্তু স্ত্রীর দায়িত্ব নিতে ভয় পায়, এটা উচিত নয়। অতএব একজন সামর্থ্যবান পুরুষকে অবশ্যই সময়মতো বিয়ে করা উচিত। আর বিয়ে থেকে বিরত থাকলে নানা রকম ফেৎনা ও হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে থাকে। তাই সকল সক্ষম পুরুষের বিবাহ করা উচিত।
অভিভাবককে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করা কি জায়েজ
বিয়ে মানে হল একটি জীবনের সঙ্গে আরেকটি জীবনকে জুড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত। ইসলামে বিয়ের পূর্বে প্রেম, ভালবাসা, সম্পর্ক বৈধ নয়। বিবাহ শুধু জৈবিক চাহিদা পূরণের মাধ্যম নয় এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ছেলে বা মেয়ের অনুমতি ছাড়া জোরপূর্বক বিবাহ দেওয়া যেমন ঠিক না। তেমনি অভিভাবককে না জানিয়ে বা পরিবারের অন্যান্যদের অনুমতি ছাড়া কোন বিবাহ বৈধ নয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) 'অভিভাবক ছাড়া বিয়ে সংগঠিত হয় না'। (তিরমিজি,হাদিস:১১০১;আবু দাউদ, হাদিস: ২০৮৩)। বিয়ের কিছু সঠিক পদ্ধতি ও শর্ত রয়েছে। গোপনে বিয়ে করলে সে সকল শর্ত মানা হয় না। অভিভাবক বা গোপন দিয়ে অসামাজিক। ইসলামে আদেশ অনুযায়ী বিয়ে করবে ঘোষণা দিয়ে। কেননা বিয়ের ক্ষেত্রে নারীদের পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকে না এবং চিন্তা ভাবনা ও ভূল থাকে।
সেজন্য অভিভাবকের মতামত নিয়ে বিয়ে করলে দুই পরিবারের মধ্যে সমতা বজায় থাকে এবং দুই পরিবারের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপরও যদি কেউ অভিভাবকের না জানিয়ে গোপনে দুইজন সাক্ষীর সামনে বিয়ে করে নেয়। তাহলে শরীয়তের বিধি অনুযায়ী বিশেষ বিবেচনায় বিয়ে হয়ে যাবে। শরীয়তের বিধান অনুযায়ী দুইজন সাক্ষী তার মধ্যে দুজন পুরুষ অথবা একজন মহিলা।
অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষীর সামনে কবুল করলে বিয়ে হয়ে যায়। তবে বিয়ের পরে তা অভিভাবকদের ভালোভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে মানিয়ে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সব থেকে ভালো হয় বিয়ের আগে ছেলে ও মেয়ে তাদের পরিবারের সাথে খোলামেলা কথা বলে পরিবারের অভিভাবকদের অনুমতিক্রমে বিবাহ সম্পন্ন করা।
কত বছর বয়সে বিয়ে করা ফরজ
আজকে আমাদের মূল আলোচনার বিষয় ছিল মোবাইলে বিয়ে করার নিয়ম সম্পর্কে যা আমরা উপরে আলোচনা করেছি। এখন কত বছর বয়সে বিয়ে করা ফরজ এ সম্পর্কে চলুন জেনে নিই। ইসলামে বিয়ের কোন নির্ধারিত বয়স নেই। তবে যখন বিয়ে করার মতো সামর্থ্য ও সক্ষমতা থাকবে তখনই একজন পুরুষের বিয়ে করা উচিত।
আমাদের নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সা.) ২৫ বছর বয়সে খাদিজা (রা.) বিয়ে করেছিলেন। কেউ চাইলে নবীজীকে অনুসরণ করে২৫ বছর বয়সে বিয়ে করতে পারে। ইসলামী শরীয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে এটাকে সুন্নত বলা হয়। বিয়ের সম্পর্কে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে নেয়।
বিবাহ চক্ষুকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আর যে ব্যক্তি অক্ষম, সে যেন রোজা রাখে। কেননা, রোজা যৌবনকে দমন করার মাধ্যম।' সেই ব্যক্তির উপর বিয়ে করা ফরজ যার আর্থিক ও দৈহিক সক্ষমতা রয়েছে।
এবং বিয়ে করার প্রবল ইচ্ছা শক্তি রয়েছে এবং আশঙ্কা আছে যে বিয়ে না করলে নৈতিক অবক্ষয়ের পথে যেতে পারেন। সেই ব্যক্তির উপর বিয়ে করা ফরজ।এক এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে এক এক বয়সে সক্ষমতা আসে। সেক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি ২০ বছর আবার কোন ব্যক্তি ৩০ বছরের বিবাহ করতে পারবেন। এটা সম্পূর্ণ একজন ব্যক্তির নিজের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে।
তবে ইসলামে ১৫ বছর হলে একজন মেয়ে ও ছেলেকে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। যদিও সরকারি নিয়ম বিধি অনুসারে মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর নির্ধারিত করা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে একজন ছেলে ও মেয়ে বাপ তো বয়স্ক হলে তাদেরকে বিবাহ দেওয়া উত্তম।
লেখক এর মন্তব্য : মোবাইলে বিয়ে করার নিয়ম সহ ইসলামে বিয়ে কত প্রকার
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে আপনারা অবগত হতে পেরেছেন মোবাইলে বিয়ে করার নিয়ম এবং ইসলামে বিয়ের কত প্রকার সে সম্পর্কে। বিয়ে আল্লাহর তরফ থেকে দেওয়া একটা নিয়ামত। বিয়ের অর্থ শুধু দুইটি ব্যাক্তি নয় দুটি পরিবারের মিলন। বিয়ের মাধ্যমে একজন নারী ও একজন পুরুষ সারা জীবনের জন্য এক বন্ধনে বাঁধা পড়ে যায়।
অনেক সময় দূর দেশে থাকার কারণে একজন নারী ও পুরুষের মোবাইলে বিয়ে করার প্রয়োজন পড়ে। তবে বুজুর্গদের মতে, মোবাইলে বিয়ে না করাই ভালো। তারপরও যদি কারো প্রয়োজন হয় তাহলে সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে বিয়ে করলে বিয়ে হয়ে যায়।
তাছাড়া ইসলামে বিয়ের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। কারো উপর বিয়ে ফরজ, কারো উপর ওয়াজিব,কারো উপর সুন্নত, আবার কারো উপর নিষিদ্ধ। যা আমরা উপরের আলোচনায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এই আর্টিকাটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন। আর এরকম বিভিন্ন ইসলামিক তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url